একটি মৃত স্ত্রীলোকের জায়গা দখল করার ভাবনায় তোমার কোনো ফায়দা হবে না। এই মুহূর্তে কেটে পড়ো। এটা আমার সতর্কবাণী। অন্য মেয়েটির কি হয়েছিল মনে আছে? শেষের দিকে অশ্লীল গালিগালাজ।
ন্যাস বললেন, আজ সকালে এটা মিস হল্যান্ডের কাছে এসেছিল।
-কে লিখেছে এটা? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ন্যাসকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তার মুখ থেকে উল্লাসের ভাবটা খানিকটা উবে গেছে। বললেন, মিস এইমি গ্রিফিথ।
.
সেদিন ন্যাস, সার্জেন্ট পারকিন্স ওয়ারেন্ট নিয়ে গ্রিফিথের বাড়িতে গেলেন। সঙ্গে আমাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বাড়িতে ঢুকে ড্রয়িংরুমে আমাদের বসানো হলো। এলসি হল্যান্ড, মেগান আর সিমিংটন ওখানে চা পান করছেন।
এইমিকে ন্যাস আড়ালে ডেকে নিলো কথাবার্তা বলার জন্যে। এইমিকে আমাদের ড্রয়িংরুম থেকে বেরিয়ে স্টাডিরুমে নিয়ে গেল। ড্রয়িংরুমের দরজাটা ভেজিয়ে দেবার সময় লক্ষ্য করলাম সিমিংটনের মাথাটা ঝট করে খাড়া হয়ে উঠল আর তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন।
ন্যাস তার বক্তব্য রাখলেন এবং এইমিকে আর হল্যান্ডকে লেখা চিঠিটা বার করে দেখালেন। ওর গ্রেপ্তারী পরোয়ানাটায় অভিযোগটা পড়ে শোনালেন।
এইমি হো হো করে হেসে উঠে সব কিছু অস্বীকার করে। তখন ন্যাস নিচুস্বরে বলে, মিস গ্রিফিথ, পরশু রাত এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে এই চিঠিখানা আপনাকে টাইপ করতে দেখে গেছে।
-আমি কখনো ওটা পোস্ট করিনি।
–ডাকটিকিটের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে ছল করে ওটা মেঝেতে ফেলে দেয়, যাতে কেউ ওটা ডাকবাক্সে ফেলে দেয়।
এইসময় সিমিংটন দরজা খুলে ঢোকেন। তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলেন, এসব কী হচ্ছে? তোমার আইনত প্রতিনিধি রাখা উচিত এইমি। আমাকে সে কাজে
এইমি এবার ভেঙে পড়ে, দুহাতে মুখ ঢেকে বলতে থাকে, যাও তুমি, আমি চাই না তুমি এসব ব্যাপার জানতে পারো। চলে যাও ডিক।
সিমিংটন বেরিয়ে যাবার সময় আওয়েন গ্রিফিথ ঘরে ঢোকে। সে চেঁচিয়ে ওঠে, কী ব্যাপার! আমার বোন-ন্যাস বলেন, আমরা দুঃখিত। মিস গ্রিফিথ আসুন, একজন সলিসিটর নিয়োগের সুবিধা আপনি পাবেন।
এইমি, আওয়েনকে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় আওয়েন তাকে কিছু বলতে গেলে, ও বলে, আমার সঙ্গে কথা বলো না। দোহাই
এইমি চলে যেতে আওয়েন হতবাক হয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। জোয়ানা ঘরে ঢোকে। আমি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় দেখলাম, জোয়ানা তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসেছে।
.
জোয়ানা যখন ঘরে ফিরল, দেখলাম ওর মুখখানা ফ্যাকাসে। আমার কাছে আসতে আমি কৌতূহলী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালে ও করুণ হেসে বলে, ডাঃ গ্রিফিথ কড়া মেজাজ দেখাচ্ছে, ও আমাকে গ্রহণ করবে না জেরি।
আমিও বললাম, আমার মেয়েটাও আমাকে চাইছে না।….মন খারাপ করিসনি সোনা। আমরা দুজনে তো রইলাম।
.
পরদিন আওয়েন জোয়ানার এমন গুণকীর্তন করতে লাগল যে অবাক হবার মতো। সে জোয়ানার কাছে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করল। কিন্তু সে এতে রাজি হতে পারছে না কারণ, জোয়ানাকে তার নোংরা কলঙ্কিত পরিবারের সঙ্গে সে জড়াতে চায় না। আমি বিরক্তভরে আওয়েনকে বললাম, অতো মহৎ হবার তার প্রয়োজন নেই।
এইমির বিরুদ্ধে অভিযোগ এখন পাকাঁপোক্ত। কারণ তার বাড়ির কাবার্ড থেকে এমিলির বইখানির পাতাগুলো পাওয়া গেছে। ন্যাসের মুখে এইরকমই শুনলাম।
লোহার শিকটা পাননি?
–ওটা তো সামান্য কাজ। ধুয়ে মুছে রান্নাঘরের দেরাজে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে।
বুড়ি মিস মারপলের সঙ্গে আবার দেখা হয়েছিল। মিসেস ক্লিটের কুটিরের কাছে ছোটো সাঁকোটার কাছে। তিনি কথা বলছিলেন মেগানের সঙ্গে। মেগান আমাকে দেখে হাঁটা শুরু করে দিল। ওকে আমি অনুসরণ করতে যেতে মারপল আমার পথ রুখে দাঁড়িয়ে বললেন, আপনার সঙ্গে কথা আছে। ওর পেছনে যাওয়া বৃদ্ধির কাজ হবে না। এখন ওর সাহস বজায় রাখা খুবই দরকার। মহিলার কথা বলার ভঙ্গিমাতে এমন কিছু ছিল যাতে আমি ওঁকে ভয় পেয়ে গেলাম। বাড়ির দিকে ফিরলাম না। গেলাম হাইস্ক্রিটে, পথে কর্নেল অ্যাপলটনের সঙ্গে দেখা। কোনোরকমে লোকটার হাত থেকে রেহাই পেয়ে এগোতেই, তৃতীয়বার মারপলকে পুলিশ থানা থেকে বেরিয়ে আসতে দেখলাম।
.
আমার মগজে যে ঝড় উঠেছে, তা শান্ত হতে পারে একমাত্র মেগানের সঙ্গে একবার দেখা হওয়ার পর।
সেদিন রাত সাড়ে নটার সময় সিমিংটনদের বাড়ি গেলাম। গেট পেরিয়ে মৃদু আলোক রেখাময় বৈঠকখানার জানলাটার দিকে এগিয়ে গেলাম।
পর্দাগুলো পুরো টানা নেই, খুব সহজেই একটা ঝোঁপের পাশ কাটিয়ে আমি উঁকি মেরে দেখলাম, মিঃ সিমিংটন একটা আরাম কেদারায় বসে আছেন আর এলসি মাথা নিচু করে বাচ্চার জামায় তালি সেলাই করছে এবং পারিবারিক কথাবার্তা বলছে। যেন, তারা ঠিক করছে সামনের সিজনে ব্রায়ানকে উইনহেতে বোর্ডিং-এ পাঠিয়ে দেবে। অদ্ভুত রকম শান্তিময় একটা পারিবারিক দৃশ্য।
তারপর দরজাটা খুলে গেল। ভেতরে এল মেগান। টানটান রুদ্ধ উত্তেজনা তার মুখে।
-আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। একা।
সিমিংটন বিস্মিত হয়ে এলসি হল্যান্ডকে চলে যেতে অনুরোধ জানালেন। এলসি চলে গেল।
সিমিংটন বললেন, মেগান, এবার বলল, কী বলছে? কী চাই তোমার?
-আমি কিছু টাকা চাই।
সিমিংটন একটু কড়া গলায় বলল, কাল সকাল অবধি সবুর করতে পারলে না? তুমি কি মাসোহারা কম পাচ্ছো? আর কটি মাস পরে তুমি সাবালিকা হলে আমি তোমার ঠাকুমার রেখে যাওয়া টাকা, সরকারী ট্রাস্টি তোমার হাতে তুলে দেব।