রোজ বেরিয়ে এল। সে জানাল, সে নাকি মনিবকে বলেছে, মেগান বিছানায় ঘুমচ্ছে। সে জানতো না যে মেগান বেরিয়েছে।
যাই হোক, মেগানকে শুভরাত্রি জানিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। শোফারকে বকশিস দিয়ে শুভরাত্রি জানালাম।
জোয়ানা দরজা খুলে দিল। ওকে প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত সবকিছু জানালাম। সব শুনে জোয়ানা হেসে বলল, হে ভগবান, আমি বেশ বুঝছি মেয়েটাকে তোমায় বিয়ে করতে হবে।
বলি বিয়ে করতে হয় করব। আপত্তি কিসের? সত্যি বলতে কি, হলে ভালোই হয়।
–হ্যাঁ সেটা আমি অনেকদিন আগেই বুঝেছি। জোয়ানা হেসে বলল।
.
১২.
এরপর একদিন মিঃ সিমিংটনের বাড়িতে গেলাম মেগান-এর সঙ্গে দেখা করে ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেব বলে।
রোজ আমাকে বৈঠকখানায় বসতে দিয়ে ভেতরে গিয়ে মেগানকে ডেকে দিলো। ওকে দেখে প্রথমে আমি কি বলে সম্বোধন করব বুঝতে পারছি না।
মেগানই হেসে বলল, হ্যালো।
আমি তাকে বললাম, তোমার কাছে এলাম কারণ আমার কিছু বলার আছে।
-বলো, মেগান বলল।
–তোমাকে আমার খুবই ভালো লাগে, আমার ধারণা আমাকেও তোমার ভালো লাগে।
–ভীষণ রকম!
–তাই মনে হয়, ভালো বুদ্ধি হবে যদি আমরা বিয়ে করে ফেলি।
–ওহ! অবাক দেখায় ওকে। বলল, তাহলে তুমি বলতে চাও সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে চাও। মানে তুমি আমার প্রেমে পড়েছ?
-হ্যাঁ, আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি।
–কিন্তু আমি তো তোমার প্রেমে পড়িনি।
–আমি ভালোবাসতে শেখাব তোমাকে।
–ভালোবাসতে কেউ আমাকে শেখাবে, তা আমি চাই না। এরপর ও একটু থেমে বলল, আমি তোমার পছন্দের স্ত্রী হতে পারব না। ভালোবাসার চেয়ে ঘেন্নাটাই আমার বেশি আসে।
-ঘেন্না বেশিদিন টেকে না, ভালোবাসা স্থায়ী হয়।
–ওটাই কি সত্যি? বলে মেগান স্থির হয়ে গেল।
–তাহলে তুমি আমাকে কোনো আশাও দিচ্ছে না।
–তাতে লাভ কি?
–হয়তো কিছুই নয়, তবে আমি আশা করে যাবো।
.
একটা আচ্ছন্ন ভাব নিয়ে বাড়িটা থেকে বের হলাম।
আমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সিমিংটনের সঙ্গে দেখা করবো–এই কথা ভেবে আমি ওঁর অফিসে গেলাম।
তাকে জানালাম, সুপ্রভাত, মিঃ সিমিংটন। আজ আমি কোনো পেশাদারী কাজে আসিনি, এসেছি একটা ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলতে। আপনি হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছেন যে আমি মেগানের প্রেমাসক্ত। আমি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম, কিন্তু সে অস্বীকার করছে। আমি অবশ্য সেটাকে চূড়ান্ত বলে মনে করি না।
দেখলাম সিমিংটন আমার প্রস্তাবটাকে হাস্যকর, সহজভাবেই নিলেন। তার পরিবারের উটকো ঝামেলা মেগানের বিয়ে হয়ে গেলে তিনি পরম স্বস্তি পাবেন।
সিমিংটন বললেন, প্রস্তাবটা ভালোই। আমি রাজীও। তবে সবকিছু মেগানের ওপরই নির্ভর করছে।
আমি পরম সৌহার্দ্যের মধ্যেই তার কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
.
বাইরে বেরিয়ে হঠাৎ এমিলি বারটনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
সুপ্রভাত, মিঃ বার্টন, শুনলাম কাল লন্ডনে গিয়েছিলেন।
–হ্যাঁ, আমাকে ডাক্তার দেখাতে যেতে হয়েছিল।
চাপা গলায় এমিলি বললেন, শুনলাম আরেকটু হলেই মেগান ট্রেন মিস করত। সে নাকি চলন্ত ট্রেনে লাফিয়ে ওঠে।
আমি তাকে টেনে তুলতে সাহায্য করি। আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে তার কাছে বিদায় প্রার্থনা করলাম।
.
বাড়ি ফিরে প্যারট্রিজের মুখে শুনলাম জোয়ানা বেরিয়েছে। আমি মনে মনে ভাবলাম, আমার বোনটি আজকাল বড়ো রসহ্যময় হয়ে উঠেছে।
বেলা সাড়ে তিনটের সময় জোয়ানা হুড়মুড় করে বিধ্বস্ত অবস্থায় ঘরে ঢুকল। মুখখানা লাল টকটকে। জিজ্ঞেস করি, কী ব্যাপার।
-ওঃ কী একটা ভয়ানক দিন গেল।
–কেন, কী হয়েছে?
-টিলার ওপর দিয়ে একটু এমনিই বেড়াতে বেরিয়েছিলাম। মাইলের পর মাইল হেঁটে চললাম। ওখানে নিচু মতো একটা জায়গায় খামার বাড়ি রয়েছে দেখে আমি তেষ্টা মেটাতে ওখানে দুধ কিংবা কোনো পানীয় পাওয়া যায় কিনা দেখতে বাড়িটার উঠোনে ঢুকে পড়লাম। দেখি দরজা খুলে বেরিয়ে এল আওয়েন।
সে নার্সের অপেক্ষা করছিল। কারণ ঘরের ভেতর একজন মহিলার তখন প্রসব হচ্ছে। মানে বাচ্চা হতে ঝামেলা হচ্ছিল।
আমাকে দেখে আওয়েন নার্সের কাজটা আমাকে দিয়ে নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো বিবেচনা করে করাতে চাইল। আমি বললাম, ওসব আমার কিছুই জানা নেই।
আওয়েন ভয়ানক চটে বলল, একজন মেয়ে হয়ে আর একজন মেয়েকে সাহায্য করতে পারছে না। আগে তো এমন ভাব দেখাতে যেন কতই ডাক্তারিতে আগ্রহ আর নার্স হবার কতই না ইচ্ছে। কিন্তু বাস্তব কাজের সময়ে তুমি অকেজো, অপদার্থ সাজগোজ করা পুতুল।
ওর কথায় আমি অবিশ্বাস্য কাজটা করে ফেললাম জেরী। একে একে ওর হাতে আমি গরম জলে ফোঁটানো ছুরি, কাঁচি, নানা জিনিস দিলাম। বলতে কী ভালো কাজই একখানা করলাম। মা এবং বাচ্চাটা এখন সুস্থ। ওঃ ভগবান!
আমি তখন জোয়ানাকে পলের লেখা খামটা দিলাম। ও একবার চোখ বুলিয়ে চিঠিটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। আমি পরিষ্কার বুঝলাম, পলের লেখা অবহেলিত চিঠিটা ওর মন থেকে পল নামক ব্যাধিটা মুছে দিয়েছে।
.
১৩.
প্রত্যাশার বিষয়গুলো কখনো সময়মতো আসে না। পরদিন সকালে হঠাৎই টেলিফোনে ন্যাসের গলা, আমরা মহিলাটিকে ধরেছি, মিঃ বার্টন! একবার থানায় আসতে যদি আপত্তি না থাকে, চলে আসুন।
থানায় গেলাম। ন্যাস জানালেন, অনেক দৌড়ঝাঁপ করে শেষ লক্ষ্যে পৌঁছালাম। টেবিলের ওপর একখানা চিঠি ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, পড়ে দেখুন। পড়লাম।