সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই এমিলি বারটনের কথা মাথায় এল। কিন্তু তার ঘরে অন্য কোনো আগন্তুক অর্থাৎ সামাজিক প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন কেউ আসতে পারে! সেও পাতাগুলো কাটতে পারে! প্যারট্রিজও কেটে নিতে পারে! এমিলির ড্রয়িংরুমে তো অনেকের অবাধ প্রবেশ ছিল। মিঃ পাই, এইমি গ্রিফিথ, মিসেস কলপ।
.
বইটা নিয়ে আমি আর জোয়ানা থানায় এলাম।
গ্রেভস ছিলেন না, শুধু ন্যাস। উনি বইটা পেয়ে উল্লসিত হলেন এবং পরীক্ষার জন্য পাঠালেন। আমার আর প্যারট্রিজের আঙুলের ছাপ ছাড়া কিছু পেলেন না তিনি। ঝাড়পোঁচ করার জন্যেই প্যারট্রিজের হাতের ছাপ রয়েছে।
ন্যাস আর আমি উত্রাইয়ের পথে হেঁটে চললাম।
ন্যাস বললেন, জাল ক্রমশ গুটিয়ে আনছি মিঃ বার্টন। এখন বাকি মিস গিঞ্চ। কাল বিকেলে এক মক্কেলের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল আর মক্কেলের বাড়ি সিমিংটনের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে হয়। এছাড়া মিসেস সিমিংটনের আত্মহত্যার দিনটিই ছিল গিঞ্চের সিমিংটনের অফিসে শেষ কাজের দিন। ঐদিন সে বেলা তিনটে থেকে চারটের মধ্যে কিছু বেশি দামের স্ট্যাম্পের ঘাটতি পড়ায় অফিস থেকে কিছুক্ষণের জন্য বের হয়। কাজটা বেয়ারা দিয়েও হতে পারত কিন্তু উনি বলেন তার মাথা ধরেছে, একটু ভোলা বাতাসের প্রয়োজন। এইটুকু সময়ই একটা চিঠি গুঁজে ফিরে আসার পক্ষে যথেষ্ট। তবে প্রতিবেশী কেউ তাকে দেখেনি।
-আপনার থলিতে আর কি আছে?
-মিস গ্রিফিথ। উনি কাল ব্রেনটনে গার্ল মিটিং-এ গিয়েছিলেন। ফিরেছিলেন অনেক দেরিতে। তাকে তত বেশ স্থির বুদ্ধির মহিলা বলেই মনে হয়।
আগের সপ্তাহেও বাক্সের মধ্যে তিনি চিঠি গুঁজে এসেছিলেন?
–হতে পারে। কাল বিকেলে একটু জলদিই বাজারে গিয়েছিলেন। আর আগের হপ্তায় হেঁটে গিয়েছিলেন সিমিংটনের বাড়ি ছাড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে।
আমি ধীরে ধীরে বলি, তাহলে কেটেছেটে চারজন দাঁড়াচ্ছে সন্দেহের তালিকায়, মিস গিঞ্চ, মিঃ পাই, মিস গ্রিফিথ আর মিস বারটন?
-ও, না না। আরো গোটা দুয়েক এবং মিসেস কলQপও রয়েছেন। উনি নাকি কাল বিকেলে জঙ্গলে পাখি অবলোকন করছিলেন–পাখিরা তো তার হয়ে সাক্ষী দেবে না?
আওয়েন গ্রিফিথকে দেখে ন্যাস ওর দিকে তাকালেন।
–হ্যালো ন্যস। আমাকে নাকি খুঁজছিলে?
–হ্যাঁ, শুক্রবারে ময়নাতদন্ত, যদি আপনার পক্ষে সুবিধাজনক হয়।
–ঠিক আছে। আজ রাতেই পোস্টমর্টেম করব।
–আচ্ছা মিঃ গ্রিফিথ, মিসেস সিমিংটন কিছু তৈরি ঔষুধ, পাউডার খাচ্ছিলেন, সেটা একটু বেশি মাত্রায় পড়লে মৃত্যু ঘটতে পারত?
-যদি অবশ্য একসঙ্গে পঁচিশ ডোজ খেতেন। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না, পরিষ্কার সায়ানাইড বিষ। সায়ানাইডে মৃত্যু অনিবার্য, কিন্তু উনি যদি ঘুমের ঔষধ খেতেন বেশি ডোজে, তাহলেও আপনি রুগীকে ফের সুস্থ করে তুলতে পারেন, মানে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপারটা ঘটলে।
গ্রিফিথকে ন্যাস ধন্যবাদ জানালো। ও বেরিয়ে গেল। আমিও ন্যাসের কাছে বিদায় চেয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। জোয়ানা বেরিয়েছে। টেলিফোনের খাতাটাতে লেখা, ডাঃ গ্রিফিথের ফোন এলে যেন বলি, মঙ্গলবারে আমি পারছি না, একেবারে বুধ বা বৃহস্পতিবারে যাওয়া সম্ভব হবে।
হঠাৎ বিরক্তি জাগল, আওয়েনের হঠাৎ আসায় ন্যাসের উল্লেখিত আরো দুজন কথোপকথনে আমাদের ছেদ টানতে হয়। কে হতে পারে সেই আরো দুজন সম্ভাব্য ব্যক্তি?
আমার চেতনায় অনেকগুলো নাম ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমি ড্রয়িংরুমে একটা চেয়ারে বসে চিন্তা করতে থাকি। ঘুম প্রায় এলো বলে।
দু-এক মিনিট ঘুমিয়েছি কিনা সন্দেহ একটা সজোর কণ্ঠস্বরে ঘুম ভেঙে গেল।
–এ ব্যাপার বন্ধ করতেই হবে। এইসব চিঠি, খুন। অ্যাগনেসের মতো নির্দোষ মেয়েদের খুন হওয়া চলতে দেওয়া যায় না।
আমি চমকে উঠে বসি, বলি, কি করতে বলেন আপনি? পুলিশ তো যথাসাধ্য করছে।
–তাদের কাজের নমুনা তো দেখতেই পাচ্ছি। অ্যাগনেস খুন হয়ে গেল। আমি একজন সত্যিকারের বিশারদকে ডেকে আনতে যাচ্ছি। আমি যার কথা বলছি উনি চিঠি বিশারদ না হতে পারেন, কিন্তু তিনি মানুষ চেনেন। যিনি বদমায়েশি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।
আমি কিছু বলতে যাবার আগেই তার প্রস্থান ঘটেছে।
.
১০.
অ্যাগনেসের ময়না তদন্তের আদালত বসলো। রায় বের হলো অজ্ঞাত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ দ্বারা হত্যা।
প্রায় প্রত্যেকের চোখেই আশঙ্কা, আধা উৎসুক চাহনির ঝিলিক।
সন্ধ্যা হলেই জোয়ানা আর আমি জানালার পর্দা টেনে সম্ভাব্য নামগুলো নিয়ে খতিয়ে দেখার আলোচনাই চালাই।
এরমধ্যে এমিলি বারটন চা খেতে এসেছিলেন। মেগান এসেছিল লাঞ্চে। মিঃ গ্রিফিথ তার প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত। একদিন পাইয়ের ওখানে শেরী পান করে এলাম। এরপর একদিন গেলাম ভিকার সাহেবের বাড়িতে।
দেখলাম, মিসেস কলপের সেই শেষ সাক্ষাৎকারের মারমুখী মেজাজ শান্ত হয়ে গেল। উনি এখন ফুলকপি আর বাঁধাকপির চারাগুলো নিয়ে ব্যস্ত।
অতিথি মিস মারপল খবরটা শুনে স্বাভাবিকভাবেই চঞ্চল হয়ে উঠলেন। উনি অ্যাগনেস খুনের ব্যাপারে সমস্ত কিছু শুনলেন আমাদের মুখে। সবকিছু শুনে তিনি আশ্চর্য হলেন।
.
এর ঠিক দুটি রাত পরে আমি একা গাড়িতে করে ফিরছি হ্যাম্পটদ থেকে। অন্ধকার নেমে এসেছে, লিমস্টকে ঢোকার মুখে বাতিতে কিছু গণ্ডগোল হতে নেমে গোলমালটা সারিয়ে ফেললাম।