ন্যাস প্যারট্রিজের কাছে কিছু জানবার আগ্রহ নিয়ে গেলেন, কিন্তু তিনি আশাহত হলেন, নতুন কিছু বার করতে পারলেন না। প্যারট্রিজ আপনাদের ঠিকে ঝি মিসেস এমোরিকে অ্যাগনেসের ফোনের ব্যাপারে বলেছিলো, এবার এমোরির মাধ্যমে সারা শহরে রাষ্ট্র হয়ে থাকবে।
ন্যাস জোয়ানার দিকে তাকিয়ে বললেন, মিস বার্টন, আপনার নামের চিঠিটার খামটা লক্ষ্য করেছিলেন? সেখানে চিঠিটার প্রকৃত প্রাপকের নাম ছিল, মিস বার্টন পরে র কেটে ট করা হয়েছিল।
এরপর ন্যাস বিদায় নিলেন। জোয়ানা আমাকে বলল, চিঠিটা যদি এমিলির উদ্দেশ্যে লেখা হয়, তাহলে শুরুতে ওহে রংমাখা ঘর জ্বালানি-কথাটা থাকবে কেন? জেরি, তোমার উচিত ছিল শহরে গিয়ে সবাইকার মতামত যাচাই করা।
আমি জোয়ানাকে আস্তে আস্তে বললাম, দ্যাখ, ঐ অ্যাগনেস মেয়েটা প্যারট্রিজকে কী বলেছিল, সেটা আমরা শুধু ওর মুখ থেকেই শুনেছিলাম। ধর যদি অ্যাগনেস বলে, কেন সেদিন প্যারট্রিজ এসে চিঠিটা ফেলেছিল?..হয়তো প্যারট্রিজ উত্তরে বলে, সে বিকেলে ওর কাছে গিয়ে সব ব্যাখ্যা করে বলবে।
কিন্তু চিঠির সূত্রগুলো নষ্ট করার মতো মনোভাব বা জ্ঞান প্যারট্রিজের আছে বলে আমার মনে হয় না।
জোয়ানা বলল, আমার মনে হয় মধ্যবয়েসী মিঃ পাই এর সঙ্গে জড়িত।
–ভুলিস না তিনিও একটা ওরকম চিঠি পেয়েছেন। ওটা আমাদের অনুমান। উনি যথেষ্ট চালাক এবং তাঁর পূর্বপরিকল্পিত অভিনয় আমরা প্রত্যক্ষ করে থাকতে পারি।
.
জোয়ানার কথামতো হাইস্ট্রিট ধরে যেতে যেতে প্রথমে গ্রিফিথের সঙ্গে দেখা হলো। ওকে ভীষণ অসুস্থ এবং ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। কারণ জিজ্ঞাসা করে জানলাম, দুশ্চিন্তা করার মতো কিছু কেস সম্প্রতি দেখেছে। তার মধ্যে অবাধে ঘুরে বেড়ানো উন্মাদটিও আছে।
.
গ্রিফিথ জানালো সে জোয়ানাকে কিছু ফটোগ্রাফ দিতে যাবে। গ্রিফিথ চলে গেল।
এরপর তার বোন মিস গ্রিফিথের সঙ্গে দেখা।
আমাকে পেয়েই গমগমে গলায় বলতে শুরু করল, কী বীভৎস ব্যাপার! ঐ অ্যাগনেস মেয়েটার মুখটাও আমি মনে করতে পারছি না। আমার মনে হয় ওরই কোনো বয়ফ্রেন্ড একাজ করে থাকবে।
আমি কথা ঘুরিয়ে বলি, বলুন তো মিস গ্রিফিথ, আপনিই কি মেগানকে বাড়ি ফেরার পরামর্শ দিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, মিসেস সিমিংটনের মৃত্যুর পর থেকেই লোকে বলছে, মিস হল্যান্ড নাকি দুনম্বর মিসেস সিমিংটন হবার জন্যে মিঃ সিমিংটনের কাছে নিজেকে অপরিহার্য করে তুলেছে। তার মতো নিখুঁত মেয়ে শুধু নিজের কর্তব্যটুকুই করে চলেছে। মেয়েটার জন্যে আমি দুঃখ পাই। মোটামুটি সে কারণেই আমি মিস মেগানকে বাড়ি ফিরে যেতে পরামর্শ দিই। বাড়িতে শুধু ডিক আর হল্যান্ড থাকার চেয়ে এ বরং ভালো দেখাবে। একথা বলে সজোরে হেসে সে পা বাড়ালো।
.
চার্চের কাছেই পেয়ে গেলাম মিঃ পাইকে। উনি এমিলি বারটনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। –এই যে বার্টন, সুপ্রভাত! জোয়ানা কেমন আছে?
-ভালো আছে।
-উনি আবার আমাদের গ্রাম্য পার্লামেন্টে যোগ দেননি তো? আরে খুনের ব্যাপারটা বলছিলাম। একটি সামান্য কাজের মেয়ের পাশবিক হত্যা, অবশ্য অপরাধের বিচারে এটা একটা খবর তো বটেই।
আমি পাইকে জিজ্ঞেস করি, কাল মিস গ্রিফিথ আপনাকে আর মিস অ্যাগনেসের কাল বিকেলে প্যারট্রিজের কাছে চা খাবার কথা ছিল–একথা বলেছিল আপনাকে?
সেরকমই তো বলছিল। ও বলেছিল, এ তো নতুন প্রথা দেখছি চাকর-বাকর আজকাল তাদের মালিকদের ফোন ব্যবহার করছে।
মিস এমিলি বললেন, প্যারট্রিজ এমন কাজ করবে আমি তো স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। এসব আমি আর সইতে পারছি না, বলে মিস এমিলি হাঁটা মারলেন।
আমি পাইকে বললাম, এইসব ঘটনাগুলো সম্পর্কে আপনার প্রকৃত ধারণা কি?
-আমার মতে, বাইরে থেকে আপাত সম্ভাবনাহীন লোকই অনেক সময় এসব কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে। সব রীতিমতো উন্মাদ, বুঝলেন মশাই।
-কে?
তার চোখের দৃষ্টি আমার ওপর। হেসে বললেন, না না, বার্টন, সে তো বদনাম করা হবে। এত কিছুর ওপর বদনাম জিনিসটা করতে চাই না। উনি প্রায় লাফিয়েই রাস্তা ধরলেন।
.
চার্চের কাছে দাঁড়িয়ে আছি, ধীরে ধীরে খুলে গেল চার্চের দরজা। বেরিয়ে এলেন মাননীয় পাদ্রি কালেব ডেন কলপ।
সুপ্রভাত মিঃ…ইয়ে..ইয়ে
আমি বলি, বার্টন।
নিশ্চয়ই, নিশ্চয়। আজ দিনটা বড়ো চমৎকার, তাই না। আমি সংক্ষেপে বলি, হ্যাঁ।
–কিন্তু ঐ কী যেন…মেয়েটা সিমিংটনের বাড়িতে কাজ করত, সত্যিই বিশ্বাস করা কঠিন যে আমাদের মধ্যেই একজন খুনী রয়েছে।
-হ্যাঁ, কেমন যেন উদ্ভট ব্যাপার! আমি বলি।
কাপুরুষের কাজ, ইতর ভীরুতা—
আমি বললাম, বিলকুল!
.
লাঞ্চের মিনিট কয়েক আগে বাড়ি ফিরে দেখি জোয়ানা আনমনে জানলার ধারে দাঁড়িয়ে আছে।
বাইরের বারান্দায় এসে দেখি দুখানা চেয়ার, দুটো খালি শেরীর গ্লাসের পাশে একটা বস্তু রয়েছে।
জিজ্ঞেস করলাম জোয়ানাকে, এটা কি?
-ওঃ, ওটা একটা ফটোগ্রাফ–রোগাক্রান্ত পিলের। আমি আগ্রহভরে ফটোগুলো দেখলাম। হয়তো জোয়ানা মিঃ গ্রিফিথের কাছে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।
যাই হোক, আমি ছবিগুলোকে রাখার জন্যে একটা বইয়ের সন্ধান করতে করতে বুককেসের তলার তাক থেকে একটা ভারী বই টেনে বের করি। কোনো এক বিস্ময়কর কারণে সেই ধর্মীয় গ্রন্থের পাতাগুলো অনায়াসে খুলে গেল। দেখলাম, বইটার মাঝখান থেকে অনেকগুলো পাতা পরিচ্ছদভাবে কেটে নেওয়া হয়েছে। ১৮৪০ সালে প্রকাশিত। আর কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয় যে, এই বইয়ের পাতাগুলো থেকে বেনামী চিঠির শব্দগুলো কেটে সাজানো হয়েছে।