–আরো জানতে পেরেছি, মিসেস সিমিংটনের আত্মহত্যার দিন বিকেলে দুজন পরিচারিকারই বাইরে যাবার কথা, ওদের ছুটির দিন বলে। কিন্তু অ্যাগনেস বাড়ি থেকে বেরিয়েও ফিরে আসে। সে তার ছেলেবন্ধু র্যানডেলের সঙ্গে দেখা করতে যায়, র্যানডেল এর মধ্যে একটা উড়ো চিঠি পায়, যাতে ইঙ্গিত ছিল, অ্যাগনেসের ভজাবার মতো আরো ছোকরা আছে–অতএব বেঁধে গিয়েছিল দুজনের মধ্যে ঝগড়া। আর অ্যাগনেস রাগ করে বাড়ি ফিরে আসে, বলল, ফ্রেড যতক্ষণ না মাফ চাইছে ও আর বেরুবেই না। এবার খেয়াল করুন, মিঃ বার্টন, মিসেস সিমিংটনের চিঠিটা এসেছিল বিকেলের ডাকে। এবং সেটাতে ব্যবহৃত স্ট্যাম্প লাগানো হয়েছিল। কিন্তু আসলে কেউ হাতে ভরে দিয়ে যায়। বিকেলের ডাক আসে পৌনে চারটে নাগাদ। অ্যাগনেস তার ছোকা বন্ধুর আসার অপেক্ষায় গেটের দিকে নজর রেখেছিল রান্নাঘরের জানলা দিয়ে।
আমি বললাম, আর সে দেখল সেই ব্যক্তিটিকে, চিঠিটাকে বাক্সে ঢোকাতে।
–ঠিক মিঃ বার্টন। অ্যাগনেস জানতো কে সেই পত্র লিখেছিল। কিন্তু তার দৃষ্টি ছিল সব সন্দেহের উর্ধ্বে, কেননা সে ব্যাপারটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি, ভেবেছিল, কেউ একজন বাক্সে চিঠি ফেলে গেল। কিন্তু সে যে বেনামী চিঠির সঙ্গে জড়িত একথা তার মাথায় আসেনি বা ভাবতেই পারেনি সেই মূহুর্তে। কিন্তু পরে এ নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে সে অস্থির হয়ে পড়ে এবং ঠিক করে প্যারট্রিজকে সবকথা খুলে জানাবে। কিন্তু কোনোক্রমে বিষকলম সেটা ধরে ফেলে।
–কিভাবে মিঃ ন্যাস?
–গ্রামদেশে খবর ছড়ানো এক তাজ্জব ব্যাপার। ঘরে ঘরে টেলিফোন। আপনি যখন ফোনে অ্যাগনেসের সঙ্গে কথা বলছিলেন কে কে শুনেছিল?
–আমার বোন, মিস গ্রিফিথ শুনে থাকতে পারে।
এদিকে অ্যাগনেসের কথা হয়তো মিস হল্যান্ড, রোজ ওরাও শুনে থাকবে। এছাড়া রেনডেল ছোকরাও ওদের ঝগড়া করে বাড়ি ফিরে যাওয়াতে ব্যাপারটা রটাতে পারে। এখন আমাদের হাতে দুটো নির্দিষ্টকাল বিকেল এবং এক সপ্তাহ আগের বিকেল।
-কাল কী ঘটেছিল বলে আপনার ধারণা?
–আমার ধারণা বিশেষ এক মহিলা শান্ত, হাসিমুখে বিকেলের দর্শনার্থী হিসেবে কিংবা হাতে কোনো পার্সেল নিয়ে বেল টেপে। অ্যাগনেস খুলে দেয় এবং আগন্তুক তার পেছন ফেরার সুযোগে মাথায় আঘাত করে। এখানকার মহিলারা বড়ো ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে অভ্যস্ত। তাতে নিকি এনেছিল। আর পরে সেটা বেঁকিয়ে কাবার্ডে ফেলে দিয়ে যায়।
আমি প্রশ্ন করি, অ্যাগনেসকে কাবার্ডে পোরার কি দরকার ছিল?
মৃত্যুর সঠিক সময়টা গোলমেলে করে তোলার জন্যেই। সঙ্গে সঙ্গে মিস হল্যান্ড মৃতদেহ দেখতে পেলে মিনিট দশেকের মধ্যে ডাক্তার ডাকলেন।মিসেস সিমিংটনের আত্মহত্যাটা বিষকলমকে ভয় পাইয়ে দেয়। সে হাওয়া বুঝে ফেলে। এখন আমাদের একজনের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, তিনি সম্মানিত, যাঁর সম্পর্কে সবার উঁচু ধারণা রয়েছে, বুঝলেন মিঃ বার্টন?
একটু পরে ন্যাসের সঙ্গে আমিও রোজের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। এর মধ্যে ন্যাসের কাছে রোজ দু-রকম কাহিনী শুনিয়েছে। ন্যাস এবার মিঠে-কড়া পদ্ধতিতে রোজকে জিজ্ঞেস করল, অ্যাগনেস কি কোনো ইঙ্গিতই দেয়নি, তার মনে কেন উদ্বিগ্ন থাকত? উত্তরে রোজ জানিয়েছে, না। রোজ আরও জানিয়েছে যে, সে বেলা আড়াইটার বাস ধরে নেদার মিকফোর্ডে পৌঁছে সারাটা বিকেল আর সন্ধে কাটিয়ে, সেখান থেকে আটটার বাস ধরে ফেরে।
এবার হল্যান্ডের সঙ্গে দেখা করলাম। সেও জানালো, অ্যাগনেস তাকে কোনো মানসিক অস্বস্তির কথা জানায়নি কোনোদিন। এছাড়া সে আরও জানালো যে, সে ছেলেদের নিয়ে মাঠের ধার ধরে মাছ কিনতে গিয়েছিল। মাছের টোপ নিতে ভুলে গিয়েছিল বলে, আবার বাড়ি ফেরে তিনটে বাজতে কুড়িতে..বা তার সামান্য পরে। সে সময় মেগান আসছিল, পরে মন বদলালো, সে বাইসাইকেল নিয়ে বেরুচ্ছিল। মেগান নিশ্চয়ই রওনা দিয়েছিল আর অ্যাগনেসকে সে তখন দেখেনি।
–কটার সময় বাড়িতে ঢোকেন?
–পাঁচটা বাজতে দশে। ছেলেদের ওপরে চা দেবার ব্যবস্থা করি। সিমিংটন এলেন, ছেলেদের পড়ার ঘরে চা খাবেন বললেন। আমি নিচে গিয়ে তার চা নিয়ে এলাম।
-সাধারণ সময়ে কেউ যায় ঐ কাবার্ডটার দিকে?
-না, না। স্রেফ হাবিজাবি জিনিস রাখার জায়গা ওটা, মাসের পর মাস কেউ হয়তো ওটার দিকে যায় না।
–বিকেলের ডাকগুলো কে ওপরে নিয়ে যেত?
–আমি ফেরার সময় চিঠির বাক্স দেখে চিঠি থাকলে তা হলকামরার টেবিলে রেখে দিতাম। মিসেস সিমিংটন নিচে নেমে এসে চিঠি নিয়ে যেতেন।
-ঐ বিষ চিঠিটা সম্পর্কে আপনার নিজস্ব মত কি? আপনি ও ধরনের চিঠি পেয়েছেন?
–না, একেবারেই তা মনে হয় না। মিসেস সিমিংটন ছিলেন স্পর্শকাতর, শুচিবেয়ে…ও ধরনের কিছু…মানে…হতেই পারে না। আর আমি সত্যিই ও-ধরনের কোনো চিঠি পাইনি।
ন্যাস আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, মিঃ বার্টন, যা শুনবেন সবই বিশ্বাস করবেন না। মিস বার্টনও এধরনের চিঠি পেয়েছিলেন। তার পুরানো রাঁধুনিটার কাছে খবর পেয়েছি। তাহলে উনি একথা আমার কাছে লুকোলেন কেন?
সুরুচির পরিচয়, অশ্লীল বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে। চিঠির বক্তব্য ছিল, উনি ওঁর মা, বোনেদের বিষ খাইয়ে মেরেছেন।
.
০৯.
এ বাড়ি থেকে বেরুবার আগে আমি মেগানকে খুঁজে বের করে আবার একটু অনুরোধ জানালাম যাতে আবার কিছু দিন আমার সঙ্গে এসে থাকে। কিন্তু সে অরাজী হওয়ায় আমি আর ন্যাস লিটল ফার্মে ফিরে এলাম।