আমরা বেনামী চিঠিগুলোর ব্যাপারে কথা বলতে শুরু করলাম।
জোয়ানা বলল, মিসেস সিমিংটনের আত্মহত্যার পর আজ ঠিক এক হপ্তা হলো। ন্যাস, গ্রেভস কতদূর কি এগোলেন কে জানে?
ঠিক এক হপ্তা–কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার একটা অস্বস্তি হতে লাগল। আমি কেমন আনমনা হয়ে পড়লাম। মন তখন টুকরো টুকরো ঘটনাকে জোড়া দিতে ব্যস্ত। আমি জোয়ানাকে অবাক করে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, পরিচারিকারা হপ্তায় একদিন ছুটি কাটাতে যায়, তাই না?
-হ্যাঁ, সেটাই তো বরাবরের নিয়ম।
আমি ঘড়িটার দিকে তাকাই। রাত সাড়ে দশটা। আমি সিমিংটনের বাড়িতে ডায়াল করলাম। অপর প্রান্তে মিস এলসি হল্যান্ডের কণ্ঠ ভেসে এলো।
বললাম, আমি জেরি বলছি, তোমাদের কাজের মেয়ে অ্যাগনেস ফিরেছে? এলসি আমাকে রিসিভার ধরতে বলে দেখতে চলে গেল।
দুমিনিট বাদে সে রিসিভার তুলে জানাল, না, অ্যাগনেস ফেরেনি।
তখনই বুঝলাম আমার আন্দাজটা ভুল নয়।
তারপরই সিমিংটনের গলা শুনতে পেলাম, হ্যালো বার্টন, ব্যাপার কি?
–আপনার কাজের মেয়ে এখনো ফেরেনি?
-না। কিন্তু ওর কোনো অ্যাকসিডেন্ট হয়নি তো? মেয়েটির কিছু ঘটেছে, সে রকম ধারণা করার মতো কিছু ঘটেছে নাকি?
গম্ভীর গলায় বললাম, হলে অবাক হবো না।
.
০৮.
রাতে ঘুমটা বড়ো বিচ্ছিরি হল। মনের মধ্যে সারা রাজ্যের ধাঁধার মতো টুকরো ছবিগুলো ঘুরতে লাগল।
আমি ছটফট করতে লাগলাম, কোথাও নিশ্চয়ই একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। তার নকশাটা যদি বুঝতে পারতাম। আমাকে জানতেই হবে ঐ হতচ্ছাড়া চিঠিগুলো কার লেখা। কোথাও একটা নিশ্চয়ই সূত্র আছে…
স্বপ্ন দেখি মিসেস কলপ একটা গ্রে-হাউন্ড হয়ে গেছেন আর আমি তাকে বগলেশ আর শেকলে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছি।
.
টেলিফোনের শব্দে লাফিয়ে উঠে পড়ি। সাড়ে সাতটা বাজে। রান্নাঘর থেকে প্যারট্রিজ বেরিয়ে আসার পূর্বক্ষণেই আমি রিসিভার তুলে নিই, হ্যালো?
শুনলাম, মেগান ফোঁপাতে ফোঁপাতে আমাকে তার কাছে একবার আসতে বলছে। আমি রাজী হলাম।
আমি সিমিংটনের বাড়ি যেতেই মেগান আমাকে জড়িয়ে ধরল। ও কাঁপতে কাঁপতে ফ্যাকাসে মুখে বলল, আমি সিঁড়ির তলায় কাপবোর্ডের ভেতরে অ্যাগনেসকে মৃত অবস্থায় দেখেছি। আমি ওর বাইরে যাবার পোশাক কামরাতে পরে থাকতে দেখে ওকে খুঁজতে খুঁজতে ওখানে দেখতে পেলাম। মেগানের থেকে আরো জানলাম, মিঃ সিমিংটন পুলিশকে ফোন করেছে।
ইতিমধ্যে ওদের রাঁধুনী রোজের কাছ থেকে জানলাম, অ্যাগনেসকে মিসেস সিমিংটনের মৃত্যুর পর থেকেই কেমন বিচলিত দেখাত আর সে ক্রমে উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ছিল, কেবলই বলত ওর কী করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না।
একসময় এলসির সঙ্গে দেখা হয়, ও আমাকে দেখেই বলল, উঃ কী ভয়ানক, এমন শয়তানি কাজ কে করতে পারে? আর বেচারী অ্যাগনেস, আমার মনে হয় না ও কারোর ক্ষতি করতে পারে। এলসি চলে গেল।
তারপর একটা দরজা খুলে গেল, সুপারিন্টেন্ডন্ট ন্যাস ঢুকলেন, পিছনে মিঃ সিমিংটন। উনি আমাকে দেখে খুশী হলেন। মিঃ সিমিংটনকে তিনি প্রাতঃরাশ খেয়ে নেবার পরামর্শ দিয়ে আমাকে নিয়ে বৈঠকখানায় ঢুকলেন এবং দরজা বন্ধ করে দিলেন।
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, খবর পেলেন কিভাবে। আমি জানালাম, মেগান ফোন করেছিল। তাকে আরও জানালাম, প্যারট্রিজকে অ্যাগনেসের ফোন করা এবং শেষ অবধি তার না আসার কথা। এবার আমি প্রশ্ন করি ন্যাসকে, ঠিক কি ঘটেছিল?
কাজের মেয়েদের ছুটির দিন–হ্যাঁ, মনে হয় দুটি বোন এখানে কাজ করত। তারা একসঙ্গে বেরুতে চাইত বলে মিসেস সিমিংটন সেরকম ব্যবস্থা বহাল করে দেন। তারপর এ দুজন এলেও ঐ একই ব্যবস্থা বহাল থাকল। ওরা নিজেদের ঠান্ডা খাবার ডাইনিংরুমে রেখে যেত, শুধু মিস হালন্ড ওদের গরম চা দিত। একটা জায়গা পরিষ্কারের, রোজ নেদার মিকফোর্ডের বাসিন্দা বলে ছুটির দিনে তাকে সেখানে যেতে বেলা আড়াইটের বাস ধরতে হয়। তাই সবসময় অ্যাগনেসকেই দুপুরের বাসন মাজতে হত। শোধবোধের জন্য রোজ রাতে ফিরে এসে রাত্রি ভোজনের থালাবাসন মাজতো। কালও ঐ একই ব্যাপার হয়েছিল। দুটো পঁচিশে রোজ যায় বাস ধরতে, তিনটে বাজতে পঁচিশে সিমিংটন চলে যান অফিসে, এলসি বেরিয়ে যান তিনটে নাগাদ, পাঁচ মিনিট বাদে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায় মেগান। আমার যদ্র ধারণা, অ্যাগনেস সাধারণতঃ তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে বের হতো।
–তাহলে তখন বাড়িটা খালি পড়ে থাকে?
–ও বিষয় নিয়ে এখানকার লোকদের কোনো মাধাব্যথা নেই। যা বলছিলাম, তিনটে বাজার দশমিনিট আগে অ্যাগনেস একাই ছিল এবং ও যে বাড়ি থেকে বের হয়নি সেটা পরিষ্কার কারণ ওর গায়ে বাড়ির টুপি আর অ্যাপন ছিল।
–মৃত্যুর সময়টা জানতে পেরেছেন?
–হ্যাঁ, ডাক্তার গ্রিফিথের মতে দুটো থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে। এটা তাঁর সরকারী রায়।
–কেমনভাবে খুন হয় মেয়েটি?
–মাথার পেছনে প্রথমে আঘাত করে নিঃসাড় করে দিয়ে, তারপর খুব ছুঁচলো করে শানানো একটা রান্নাঘরের সাধারণ নিকি তার ঠিক খুলির পেছন গোড়ায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
একটা বিরক্তি প্রকাশ করে ন্যাস বলল, সেই একই কুসংস্কার ওদের, পুলিশের সঙ্গে মেলামেশা করবে না। ওর দুশ্চিন্তার ব্যাপারটা আমাদের কানে এলে হয়তো ওকে বাঁচানো যেত।
-আপনি এ-ব্যাপারে আর কি জানতে পেরেছেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম।