জোয়ানা প্যারট্রিজের সঙ্গে ঠিক তেমন সুবিধে করে উঠতে পারে না। প্যারট্রিজ চলে যেতে জোয়ানা বলল, বুঝতে পারি না বেশিরভাগ লোক আমাকে পছন্দ করলেও প্যারট্রিজের আমাকে ভালো লাগে না কেন?
আমি বলি, হয়তো জবরদস্ত গৃহকত্রী নস বলে ওর অপছন্দ।
কয়েক মিনিট আগে মেগান বাগানের দিকে গিয়েছিল। এখন সে বাগানের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে। আমি যেতেই আচমকা বলল, ভাবছি আজই আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে হবে।
ওর এই কথায় আমি উত্তেজিত ও শঙ্কিত হয়ে উঠি। তখন আমি আর জোয়ানা অনেক বুঝিয়েও তার মন বদলাতে পারলাম না। অগত্যা জোয়ানা তাকে গাড়িতে করে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করে।
.
স্বীকার করতে আপত্তি নেই, মেগান যেভাবে হট করে চলে গেল, ওতে আমি বেশ খানিকটা চমকে গেছি।
ঠিক দুপুরের খাওয়ার আগে আওয়েন গ্রিফিথ এল গাড়ি নিয়ে। আমিও একটু ড্রিঙ্ক দেব বলে শেরী আনতে ভেতরে গেছি, দেখি, জোয়ানা তার কাজ শুরু করে দিয়েছে।
আওয়েনকে সে নানান প্রশ্ন, যেমন, সরকারী ডাক্তারের চাকরি তার পছন্দ কিনা, এবং এর চেয়ে স্পেশালিস্ট হলে আরো ভালো হত কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। আর গ্রিফিথও তার তিন নম্বর শেরীর গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে নানা শারীরিক জটিল প্রতিক্রিয়া সংজ্ঞার বক্তব্য বকে চলেছে।
জোয়ানাকে বেশ গভীর উৎসাহীর মতো দেখাচ্ছে। আমার মনে হল, জোয়ানার গ্রিফিথের মতো ভালোমানুষকে নিয়ে এমন টানাটানি ঠিক কাজ হচ্ছে না।
এরপর জোয়ানা তাকে লাঞ্চের নিমন্ত্রণ করায় গ্রিফিথ জানালো, তার বোন তার জন্যে অপেক্ষা করছে। জোয়ানা তখন ফোন করে এইমি গ্রিফিথকে জানিয়ে দিল। অতএব গ্রিফিথ লাঞ্চের জন্যে রয়েই গেল। মনে হল সে বেশ আমোদই পাচ্ছে।
.
সেদিন এমিলির বাড়িতে আমরা চায়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলাম। একটি রোগা, ঢ্যাঙা স্ত্রীলোক আমাদের দরজা খুলে জানালো মিস বারটন এখন নেই, আমরা যেন অপেক্ষা করি। বোঝাই যাচ্ছে, এই হল বিশ্বাসিনী ফ্লোরেন্স। তার পিছু পিছু উপরের কামরায় গিয়ে বসলাম। আসবাবের বাড়াবাড়ি থাকলেও বেশ আরামদায়ক বসার ঘর।
ফ্লোরেন্স তিরস্কারের চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, যতটা পারি ওনাকে আরামে রাখার চেষ্টা করি। ওনার তো নিজের বাড়িতেই সঠিকভাবে মাথা গুঁজে থাকা উচিত।
-তা, মিস বারটনই তো বাড়িটা আমাদের ভাড়া দিতে চেয়েছিলেন।
–বাধ্য হয়েছিলেন। গভর্নমেন্ট তো তাকে ছেড়ে দেবে না। অঢেল টাকাপয়সা ছিল। শেয়ারে নাকি আগের মতো টাকা হয় না। কিন্তু তাই-বা কেন, শুনতে চাই? যিনি হিসেবপত্র বোঝেন না, তাকে পথে বসানো? যে যার নিজেরটা ঠিক বোঝে। আমি যদ্দিন থাকবো, এ জুলুম সহ্য করবো না। ওঁর চাই দেখাশোনা। মিস এমিলির জন্যে আমি সবকিছু করতে রাজী।
এরপর ফ্লোরেন্স দরজা ভেজিয়ে গটগট করে চলে গেল।
কিছু পরে দরজা খুলে গেল। ঢুকলেন মিস এমিলি। কিছুটা হাঁপিয়ে, বিভ্রান্ত কণ্ঠে বললেন, আহা দেখুন তো! দেরি করে ফেললাম।
এই শহরে একটু কেনাকাটার ছিল। আপনাদের এতক্ষণ বসিয়ে রাখার জন্য খারাপ লাগছে। জোয়ানা বলল, আসলে আমরাই একটু আগে এসে পড়েছিলাম।
এমিলি বললেন, চায়ের মতো মেয়েলি খানাপিনায় আসতে চেয়েছেন এটাই কতো বড়ো কথা মিঃ বার্টন। মনে হয় এমিলির মনের আঁকা পুরুষটি হল–হুইস্কি সোডা আর চুরুট খেয়ে যাওয়া আর গাঁয়ের মেয়েদের সঙ্গে সুযোগ বুঝে ফষ্টিনষ্টি।
ইতিমধ্যে আমাদের কেক, স্যান্ডউইচ, প্রচুর কেক দেওয়া হল, তার সঙ্গে চীনদেশের চা। অপূর্ব স্বাদ।
স্বাভাবিকভাবেই আমাদের আলোচনায় ডাক্তার গ্রিফিথের প্রসঙ্গ এলো। মিস এমিলি তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সিমিংটনের প্রসঙ্গ ওঠায় উনি বললেন, সিমিংটন চতুর আইনজ্ঞ, বারটনকে সাহায্য করেছিলেন ইনকাম ট্যাক্স থেকে কিছু টাকা বাঁচাতে। আর মিসেস সিমিংটনের উচিত ছিল মরার আগে তার ছেলেপুলের কথা চিন্তা করা।
কথাপ্রসঙ্গে এমিলি জানালেন, খবরের কাগজে দেশভ্রমণ সম্বন্ধে পড়ে তার খুবই বিদেশ ঘুরতে ইচ্ছে হয়।
জোয়ানা প্রশ্ন করল, তাহলে যান না কেন?
-না না, অসম্ভব। একলা কি যাওয়া যায়? খরচের ব্যাপারটা নয় বাদই দিলাম। একা ভ্রমণ করাটা বড়ো অদ্ভুত দেখাবে না। তাছাড়া বিদেশে বন্দরে নেমে ঐ লটবহর নিয়ে কিভাবে চলব, জানি না।
জোয়ানা এমিলির আশঙ্কাভরা মনটাকে শান্ত করার জন্যে উদ্যম উৎসবের কথা বলল। স্বাভাবিকভাবেই মিসেস ডেন কলপের দিকে কথাবার্তা মোড় নিল।
–বুঝলেন বন্ধুরা, উনি সত্যি এক অদ্ভুত ধরনের মহিলা। আমি আপনাদের ঠিক বোঝাতে পারব না, এমন সব আচমকা কথা বলেন না উনি…যেন আপনি সেখানে নেই, তার সামনে অন্য কেউ। তবে উনি খুব ভদ্রঘরের মেয়ে। তার স্বামীর খুব অনুরক্ত। ভদ্রলোকও খুব জ্ঞানীগুণী, নিষ্ঠাবান মানুষ। তবে এখানকার গণ্ডিতে পড়ে থেকে সব অকেজো হয়ে যাচ্ছে।
আরও কিছু কথাবার্তার পর আমরা বিদায় প্রার্থনা করলাম।
.
সেদিন রাতে খেতে বসে জোয়ানা প্যারট্রিজকে জিজ্ঞেস করল, অ্যাগনেসকে নিয়ে তার চা পার্টি কেমন হল?
প্যারট্রিজ মুখ লাল করে জানালো যে, অ্যাগনেস কথা দিয়েও আসেনি। সে তত তাকে নেমতন্ন করে ডেকে পাঠায়নি। তার আজকের দিনটা ছুটি ছিল বলে কি প্রসঙ্গে পরামর্শ নিতে নিজের থেকে আসতে চেয়েছিল। তা এলো না। তবে দেখা হোক, প্যারট্রিজ জানালো, তার সঙ্গে দেখা হলে ঝাল ঝাড়বে তার ওপর। বলে রেগে টং হয়ে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে।