গাড়িতে উঠলাম। ন্যাস জানালেন যে, ব্যাপারটার গোড়া অবধি পৌঁছবেন বলে তাদের আশা। তার জন্যে ডাকঘরের ওপর নজর, টাইপরাইটার পরীক্ষা, আঙুলের ছাপ এগুলো তদন্ত করে দেখতে হবে।
পুলিশ থানায় পৌঁছে দেখি সিমিংটন আর গ্রিফিথ আগেই সেখানে হাজির। একজন দীর্ঘকায়, চৌকোমুখো সাধারণ পোশাকের ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল ইনসপেক্টর গ্রেভস। ইনি লন্ডন থেকে এসেছেন। বেনামী চিঠিপত্রের ব্যাপারে উনি একজন বিশেষজ্ঞ।
-এই কেসগুলো সবই এক ধরনের, গম্ভীর গলায় বললেন গ্রেভস, শুনলে অবাক হবেন না, শব্দ চয়ন আর বক্তব্য প্রায় বহুবহু একরকম।
গ্রেভস কয়েকটা চিঠি টেবিলে ছড়িয়ে দেখছিলেন। তিনি জানালেন, কাজ শুরু করার মতো অনেকগুলো চিঠি আমাদের হাতে এসেছে। ভদ্রমহোদয়গণ; আমি অনুরোধ করব, চিঠি যদি আরো কেউ পান সঙ্গে সঙ্গে এখানে নিয়ে আসবেন। যদি অন্য কেউ চিঠি পেয়েছে বলে জানতে পারেন, তাহলে চেষ্টা করবেন তাদের এখানে আনতে। আমার হাতে এখন মিঃ সিমিংটনকে লেখা চিঠি, মিস গিঞ্চকে পাঠানো, মিসেস মাজকে, আরেকটা থ্রি-কাউন্স-এর বার-পরিচারিকা জেনিফার ক্লার্কের নামে। এছাড়া মিসেস সিমিংটন এবং মিঃ বাৰ্টনের চিঠিও আছে। এর মধ্যে একটিও নেই যার জুড়ি আমার পুরনো কেসগুলোর মধ্যে পাইনি। সেই একঘেয়ে বাঁধা বুলি…।
সিমিংটন বললেন, লেখক কে হতে পারে সে সম্বন্ধে কোনো নির্দিষ্ট মতে পৌঁছতে পেরেছেন?
গলা খাঁকারি দিয়ে সাফ করে গ্রেভস ছোটোখাটো একটা বক্তৃতা শুরু করলেন : কতকগুলো নির্দিষ্ট মিল সব চিঠিগুলোতেই আছে। যেমন–একটা ছাপা বইয়ের পাতা কেটে কেটে অক্ষর সাজানো হয়েছে। পুরানো বই, আমার হিসেবে ১৮৩০ সালের কাছাকাছি ছাপা। পত্ৰলেখক তার হাতের লেখা লুকোবার জন্যেই এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। হাতের ছাপ লুকোবার জন্যে সে গ্লাভস ব্যবহার করেছে। এছাড়া চিঠি বা খামগুলোর ওপর ডাক বিভাগের লোকেরা নাড়াচাড়া করার পরও আবার প্রকল্পের এবং আরো অনেকের এলোমেলো আঙুলের ছাপ, কিন্তু সবগুলোতে বিশেষ একটা সাধারণ ছাপ-এর অভাব। খামগুলো টাইপ করা হয়েছে ৭ নম্বর উইগুসর মেশিনে, যা যথেষ্ট ব্যবহৃত এবং পুরানো। ওতে এ আর টি আবার দুটো বেঁকে গেছে। বেশির ভাগ চিঠিই স্থানীয় ডাকে বা হাতে গুঁজে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারটার উৎপত্তিস্থল একান্তই স্থানীয় এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। পত্রগুলো লিখেছে কোনো মহিলা এবং তিনি অবিবাহিতা এবং বয়স্কা।
আমি বলি, তাহলে আপনাদের প্রধান সূত্র ঐ টাইপ মেশিনটা? তাহলে তো এই ছোটো জায়গায় বেশি মুশকিল হবার কথা নয়।
ন্যাস বললেন, দুর্ভাগ্যক্রমে টাইপরাটারটা বড়োই সহজলভ্য। মিঃ সিমিংটনের অফিসের একটা পুরানো মেশিন মহিলাদের ইনস্টিটিউটে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে সকলেরই অবাধ প্রবেশ।
–বিশেষ স্পর্শ বৈশিষ্ট্য…নাকি ওইরকম তো বলেন আপনারা–এসব দেখে কিছু বলতে পারেন?
গ্রেভস বললেন, এই খামগুলো টাইপ করা হয় একটা মাত্র আঙুল ব্যবহার করে। সে যে অনভ্যস্ত তা নয়, সে এটা করেছে আমাদের বুঝতে দিতে চায় না বলে। মহিলাটি বেশ ধূর্তই। তবে নিশ্চয়ই কোনো গেঁয়ো মহিলা নন। এখানে তো বেশিরভাগই নিরক্ষর, শব্দ বানান করতে পারে না।
আমি ভাবতে লাগলাম মিসেস ক্লিট বা তার মতো কোনো মহিলার কথা।
সিমিংটন আমার চিন্তাটাকে কথায় প্রকাশ করলেন, তিনি জোর দিয়ে বললেন, এ জায়গাটায় তো আধডজন থেকে একডজন এমন লোক পাওয়া যাচ্ছে। করোনার আদালতে আমি যা বলেছিলাম আমি আজও তাই বলতে চাই। নিছক স্ত্রীর মর্যাদা রাখতেই ঐ বক্তব্য পেশ আমি করিনি। আমি জানি এটা মিথ্যা। আমার স্ত্রী ছিলেন স্পর্শকাতর স্বভাবের.আর ইয়ে ব্যাপারে যাকে বলে নীতিবাগীশ। এ ধরনের কোনো চিঠি তার পক্ষে রীতিমতো আঘাত। এছাড়া তার স্বাস্থ্যও ছিল দুর্বল।
সিমিংটন কাঁপতে লাগলেন, বললেন, আশাকরি খুব শিগগিরই আপনারা ঐ পত্রলেখিকা খুনীকে খুঁজে বার করতে পারবেন। একটু থেমে বললেন, এখন সে নিজে কি ভাবছে কে জানে -বলে সিমিংটন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
গ্রেভস বললেন, এই বেনামী চিঠি ছাড়ার পর অভ্যাসটা প্রেরক ছাড়তে পারবে না। বারবার করতে থাকবে। সবসময় তাই করে।
শিউরে উঠে আমি দাঁড়িয়ে ওদের জিজ্ঞেস করি, আমাকে আর তাঁদের প্রয়োজন আছে কিনা। এই উৎকট আবহাওয়া থেকে আমি বাইরে খোলা বাতাসে যেতে চাই। তারা আমাকে রেহাই দিলেন এবং বললেন, কেউ কোনো চিঠি পেলেই যেন পুলিশকে তা রিপোর্ট করে একথা লোককে জানাবেন।
গ্রেভস জিজ্ঞেস করলেন, এমন কাউকে জানেন কি মিঃ বার্টন, যিনি আপনার ধারণায় কোনো বেনামী চিঠি পাননি।
আমি ইতস্তত করে এমিলি বারটনের সঙ্গে আমার কথাবার্তার এবং তিনি ঠিক যা যা বলেছিলেন তার পুনরাবৃত্তি করলাম। গ্রেভস জানালেন, এটা হয়তো পরে কাজে লাগবে, আমি নোট করে রাখব।
আমি গ্রিফিথের সঙ্গে বিকেলের রোদের মধ্যে বেরিয়ে এলাম।
আমি বললাম, বলো তো গ্রিফিথ, পুলিশ কি কিছু জানে? কোনো ধারণা ওদের মাথায় আছে?
–ঠিক জানি না। তবে ওরা আসল ব্যাপার ফাস করে না। ওদের আশ্চর্য কলাকৌশল আছে। দুজনে হাইস্ট্রিট ধরে হাঁটছি। বাড়ির দালালদের অফিসের সামনে এসে দাঁড়ালাম। বললাম, আমার বাড়িভাড়ার দ্বিতীয় কিস্তি আগাম দেবার সময় হয়ে গেছে। কেবল মনে হচ্ছে টাকাটা মিটিয়ে এখান থেকে জোয়ানাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাই। তবে আমি যাব না। কারণ ইতর কৌতূহলের জোর মনের দুর্বলতাকে ছাড়িয়ে যায়। শেষপর্যন্ত কী হয় সেটাই দেখার।