-না না, তা বটে। এইমি উদ্বিগ্ন কণ্ঠে শোনাল, বুঝলেন…এসব কাণ্ডকারখানা যেমন করেই হোক বন্ধ করতে হবে।
-পুলিশ কি কিছু করছে না?
-সেরকমই তো ধারণা হয়। কিন্তু আমার মনে হয় ব্যাপারটা নিজেদের হাতেই তুলে নিতে হবে। আমাদের বোধহয় ওদের চেয়েও বেশি কাণ্ডজ্ঞান আর বুদ্ধি আছে! যেটা দরকার, সেটা হলো স্থির সংকল্প।
হঠাৎই বিদায় নিল এইমি।
.
সেদিন বিকেলে শহরে সিমিংটনের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম।
তাকে জানালাম, আর কটা দিন মেগান আমাদের সঙ্গে থাকলে আপনার আপত্তি নেই তো?
-ওঃ…ইয়ে…মেগান? ও হা হা, ভালোই বলেছেন আপনি।
সেইসময় থেকে সিমিংটনের ওপর আমার বিতৃষ্ণা ধরে গেল। এত সহজে নিশ্চিন্তে উনি মেগানকে মন থেকে বিদায় দিয়েছেন? উনি সরাসরি ঘৃণা করতে পারতেন মেগানকে কিন্তু নিজের সৎ মেয়ের প্রতি তার ঘোর উদাসীনতা আমায় বিরক্ত করল।
বললাম, ওর সম্পর্কে ভেবে রেখেছেন কিছু?
-মেগানের ব্যাপারে? যেন চমকে উঠলেন, সে তো মানে আগের মতোই আমার বাড়িতে থাকবে।
আমি একথা শোনার পর ওখানে আর বসতে পারিনি।
.
সেদিন সবে চায়ের টেবিলটা সাফ হতেই এলেন এমিলি বারটন। দুজনে প্রায় আধঘণ্টা কথা হোল। তারপর দুজনে বাড়ির দিকে এগোলাম।
হঠাৎই গলার আওয়াজ খাটো করে বললেন, আশা করি মেয়েটা…তেমন হয়তো মুষড়ে পড়েনি, এইসব ভয়ানক কাণ্ডের পর?
-আপনি ওর মায়ের মৃত্যুর কথা বলছেন?
–হ্যাঁ, সে তো বটেই। ব্যাপারটার পেছনে কোনো অপ্রীতিকর…
মিস বারটনের মনের প্রতিক্রিয়াটা জানার জন্যে আমি উৎসুক হয়ে উঠি।
প্রশ্ন করি, আপনার কি মনে হয়? সত্যি সেরকম কিছু?
-না, না, না–নিশ্চয়ই নয়। আমার দৃঢ় ধারণা মিসেস সিমিংটন কখনোই…মানে ছেলেটা তা নয়। যদিও বলা চলে এ এক ধরনের বিচার।
–বিচার? অবাক চোখে তাকাই তার দিকে।
–এইসব ভয়ানক চিঠি আর তার ফলে এই দুঃখ-যাতনা যেন বিশেষ উদ্দেশ্য করেই পাঠানো–আমি ভেবে পাই না।
–উদ্দেশ্য করে পাঠানো তো বটেই–গম্ভীরভাবে বলি।
-না, না, মিঃ বার্টন, আপনি কথাটা ধরতেই পারলেন না। বলছি এসবের পেছনে রয়েছে বিধাতার হাত।
–সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আরেকটু সুপাচ্য দাওয়াই ব্যবহার করতে পারতেন নিশ্চয়ই?
মিস এমিলি নিচু গলায় বললেন, ঈশ্বরের পন্থা রহস্যময়।
-না, আমি জোর দিয়ে বললাম, মানুষ নিজের ইচ্ছায় যেসব দুষ্কর্ম করে, তার জন্যে ঈশ্বরকে দায়ী করে। আমি মনে করি এরজন্যে শয়তানকে দায়ী করা উচিত।
–আমি এটা বুঝি না, কেন এমনতরো ইচ্ছে একজনের জাগবে?
–বিকৃত মানসিকতা, আমি বলি।
–বড়োই করুণ মনে হয়।
–আমার করুণ মনে হয় না, আমি এদের অভিশাপ দিই।
–কিন্তু মিঃ বার্টন কেন? এ থেকে কী মজা পেতে পারে একজন?
–ঈশ্বরকে ধন্যবাদ এ আপনার আর আমার বোঝার বাইরে।
গলার স্বর নিচু করে বললেন এমিলি, ওরা সবাই মিসেস ফ্লীটের কথা বলে, আমার তো বিশ্বাসই হয় না। এধরনের ঘটনা আমার জ্ঞানতঃ কখনো ঘটেনি। এমন চমৎকার একটা সমাজ ছিল এখানে। আমার মা বেঁচে থাকলে কী বলতেন? ঈশ্বরের মহিমা যে তিনি রেহাই পেয়ে গেছেন।
মনে মনে ভাবি, বুড়ি বারটনের সম্বন্ধে যা শুনেছি, তাতে মনে হয় এই উত্তেজক পরিস্থিতি তিনি যথেষ্ট তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতেন।
এমিলি বলে চলেছেন, আমি তো ভীষণ কাতর হয়ে পড়ি।
আমি সাহসভরে জিজ্ঞাসা করে ফেলি, আপনি..মানে…নিজে এ ধরনের কিছু পাননি?
উনি লাল হয়ে গেলেন, না, না, না, উঃ, সে তো ভয়ানক কথা হত।
আমি তাড়াতাড়ি ক্ষমা প্রার্থনা করলাম। তিনি বেশ বিচলিত মুখেই প্রস্থান করলেন।
–আমি বাড়ির ভেতরে এলাম। জোয়ান ড্রয়িংরুমে চুল্লিতে সবে আগুনটা দিয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওর হাতে একটা খোলা চিঠি।
আমি ঢুকতেই জোয়ানা বলল, জেরি। চিঠির বাক্সে এটা পেলাম। কেউ হাতে দিয়ে গেছে। শুরুর সম্বোধনে বলা হয়েছে, ওহে রং মাখা ঘর-মজানি…।
-আর কি লিখেছে?
–ঐ একই আবর্জনা-বলে ও চিঠিটা আগুনের দিকে ছুঁড়ে দিল।
আমি চট করে আগুন ধরার আগেই চিঠিটা তুলে নিলাম।
বললাম, এটা দরকার হতে পারে পুলিশের জন্যে।
পরদিন সকালে আমার কাছে এলেন পুলিশের সুপারিটেন্ডেন্ট ন্যাস। লম্বা, সৈনিকসুলভ, শান্ত চিন্তামগ্ন চোখদুটো–যাকে বলে সেরা জগতের সি. আই. ডি. জেলা সুপার।
সুপ্রভাত মিঃ বার্টন। নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন আমি কী ব্যাপারে আপনার কাছে এসেছি।
-হ্যাঁ, ঐ চিঠির ব্যাপার তো!
তিনি মাথা ঝাঁকালেন। শুনলাম আপনিও একখানা চিঠি পেয়েছিলেন, চিঠির কথাগুলো আপনার মনে আছে?
একমিনিট ভেবে চিঠির কথাগুলো যথাসম্ভব মনে করে সাজিয়ে বললাম।
-বুঝলাম, ন্যাস বললেন, চিঠিটা রাখেননি মিঃ বার্টন?
-না, ভেবেছিলাম নতুন এসেছি বলে কেউ বিদ্বেষ বশে একাজ করেছে, নেহাৎই বিচ্ছিন্ন একটা ব্যাপার তবে আমার বোন গতকাল একটা চিঠি পেয়েছিল, সেটা আছে।
আমি দেরাজের তালা খুলে ন্যাসকে চিঠিটা দিলাম। ন্যাস পুরোটা পড়ে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি আগের খামের মতোই?
-যতটা স্মরণ করতে পারি, তাই মনে হয়।
চিঠির বয়ানে আর খামের ওপর একটা রকম তারতম্য?
-হ্যাঁ, খামটা ছিল টাইপ করা, আর চিঠিটা শুধু একটা কাগজের ওপর সাঁটা ছাপা অক্ষর।
ন্যাস চিঠিখানা পকেটে পুরে বললেন, মিঃ বার্টন, আপনাকে একটু আমার সঙ্গে থানায় আসতে হবে। কিছু শলা-পরামর্শের ফলে আমরা সময়ের অপব্যয় বাঁচাতে পারবো।