সে কথায় কথায় আমার কাছে প্রস্তাব রাখে যে, মেগানকে সে তার কাছে নিয়ে গিয়ে বাড়ির কাজকর্মে পোক্ত করে তুলবে। কিন্তু আমি তার প্রস্তাবে রাজী হইনি।
মিস গ্রিফিথ বলল, মিসেস সিমিংটন সম্বন্ধে কোনো কালেও আমার উঁচু ধারণা ছিল না, যদিও অবশ্য কখনো সন্দেহ করিনি আসল ব্যাপারটা।
ধারালো গলায় জিজ্ঞেস করি, আসল ব্যাপার মানে?
মিস গ্রিফিথ বলে, এসব ব্যাপারে যে অমনিভাবে বেরিয়ে আসবে আদালতের মধ্যে। সিমিংটনের জন্যে ভীষণ দুঃখ হয় আমার।
–কিন্তু ওঁকে তো বলতে শুনেছেন? ঐ চিঠির মধ্যে একবিন্দুও সত্য ছিল না–এ সম্পর্কে উনি সুনিশ্চিত?
–স্ত্রীর সপক্ষে যে, কোনো পুরুষকেই দাঁড়াতে হয়। তাই অমন কথা বলেছেন। আমি ডিক সিমিংটনকে বহুকাল ধরেই চিনি। উনি প্রায়ই এসে থাকতেন আমাদের আগের উত্তরে এলাকার দেশে। আমি ডিককে ভালোমতোই চিনি। খুব অহংকারী, চাপা স্বভাবের মানুষ।
ইচ্ছা করেই বলি, তাতেই তো বোঝা যায় মিসেস সিমিংটন কেন তাকে চিঠিটা দেখাতে বা ওটার কথা বলতে ভয় পান? তিনি শঙ্কিত ছিলেন অস্বীকার করলেও হয়তো তার স্বামী বিশ্বাস করবেন না।
-হে ভগবান, আপনি কি তাহলে ভাবেন একটা মিথ্যা অভিযোগের স্বীকার হয়ে মহিলা একগাদা পটাশিয়াম সায়ানাইড গিলে বসবে?
করোনার এবং আপনার ভাইও সেটাই ভেবেছেন।
-পুরুষরা সব সমান। কিন্তু আপনি আমাকে ওসব আষাঢ়ে গল্প বিশ্বাস করাতে পারবেন না। কোনো নির্দোষ মহিলা বেনামী চিঠি হেসেই ছুঁড়ে ফেলে দেবে। আমিও তাই…বলে থেমে গিয়ে আবার বলল, করতাম।
আমি কিন্তু ওর কথার ছেদটা লক্ষ্য করলাম। আমি প্রায় নিশ্চিত যে সে আসলে আমিও তাই করেছি-বলতে গিয়েও থেমে গেল।
শত্রুর শিবিরেই লড়াইটা নিয়ে যেতে চাই আমি। মিঠে সুরে বলি, তাহলে আপনিও একখানা চিঠি পেয়েছেন?
এক মিনিট সবুর করে মুখ রাঙা করে বলল, হ্যাঁ পেয়েছিলাম। কয়েকটা শব্দ পড়েই বুঝলাম পাগলের প্রলাপ। সঙ্গে সঙ্গে সিধে ছুঁড়ে দিলাম বাজে কাগজের ঝুড়িতে। এসব নিয়ে যত কম কথা বলা যায়, তত শীঘ্রই মিটে যায়।
আমি মিস গ্রিফিথকে জিজ্ঞেস করলাম, মেগানের টাকাকড়ির বিষয়ে কিছু ধারণা আছে আপনার? এ বিষয়ে আমার অহেতুক কোনো কৌতূহল নেই। কিন্তু ভাবছিলাম, ওর নিজের উপার্জন করার দরকার আছে কিনা।
–মনে হয় না সেটার খুব জরুরী প্রয়োজন আছে। ওর ঠাকুমা সামান্য কিছু আয়ের টাকা রেখে গিয়েছিলেন বলে আমার মনে হয়। ডিক সিমিংটন ওর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন ঠিকই, কিন্তু কথা সেটা নয়, কথা হল নীতির।
–কি নীতি?
-কাজ, মিঃ বার্টন, কাজ। কাজের মতো কিছুই নেই। সে পুরুষই হোক বা মেয়েরা। অলসতাই একমাত্র ক্ষমতার অযোগ্য পাপ।
-দেখুন স্যার এডোয়ার্ড গ্রে-কে তাঁর দুরারোগ্য আলসেমির জন্যে অক্সফোর্ড থেকে তাড়ানো হয়েছিল, পরে তিনি আমাদের বিদেশমন্ত্রী হন। আর মিস গ্রিফিথ কখনো ভেবে দেখেছেন, জর্জ স্টিফেনসন যদি বিরক্ত হয়ে বয়স্কাউট ছেড়ে রান্নাঘরে বসে কেটলির ওপর ঢাকনাটার অদ্ভুত নাচ না দেখতেন, তবে কি আজ কোনো ভালো এক্সপ্রেস ট্রেন আপনি দেখতে পেতেন?
এইমি একথা শুনে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল।
আমি বলে চললাম, আমার থিওরি বলে, যত বড় আবিষ্কার তার মূলে আছে অলসতা–স্বেচ্ছায় হোক বা বাধ্যতা বশেই হোক। মানুষে চিন্তা অন্যের চিন্তা ধার করেই পুষ্ট হবে, কিন্তু সে পুষ্টির অভাব ঘটলে তখন দায়ে পড়ে নিজে থেকে ভাবতে শুরু করে। আর তখনই সৃষ্টি হয় মৌলিক, অমূল্য ফল!
–মিঃ বার্টন, আপনার মনোভাব হল বেশির ভাগ পুরুষের মার্কামারা মনোভাব। আপনি চান, মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে পুরুষদের প্রতিদ্বন্দ্বী হোক। আমার ডাক্তারি পড়ার খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্তু আমার বাবা-মা ফি জমা দেবার কথা কানেই নিলেন না। কিন্তু ভাইয়ের বেলায় সঙ্গে সঙ্গেই ফি-এর টাকা জুটে গেল। হয়তো আমি ওর চেয়ে ভালো ডাক্তার হতে পারতাম।
–শুনে দুঃখ পেলাম মিস গ্রিফিথ।
-ওসব আমি এখন আর মনে রাখিনি! আমার প্রচুর ইচ্ছাশক্তির দ্বারা আমি সর্বদাই কাজ নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখি। আমি একজন সুখী মানুষ। মেয়েদের কাজ করার বিভিন্ন প্রাঙ্গণ আছে। মেয়েদের স্থান সবসময় রান্নাঘরে, এই সাবেকি ধারণাকে আমি মনে-প্রাণে ঘেন্না করি।
-আমি যদি আপনাকে কোনো আঘাত দিয়ে থাকি, তাহলে দুঃখিত। আসলে আমি বলতে চেয়েছি, মেগানকে ঘরোয়া কাজের ভূমিকায় দেখতে আমি একেবারেই চাই না।
-না, বেচারী মেয়েটার কোনো কাজের পক্ষেই যোগ্যতা নেই। ওর বাপটি বুঝলেন..বলে থেমে গেল এইমি।
আমি ভোতা গলায় জবাব দিলাম, ঠিক বুঝলাম না। প্রত্যেকেই দেখি ওর বাপটি-বলে থেমে যায়। কী করেছিলেন ভদ্রলোক? বেঁচে আছেন?
–ঠিক জানি না। তবে খুবই খারাপ লোক ছিলো নিশ্চয়ই। আমার বিশ্বাস, জেল খাটা এবং মাথার গণ্ডগোলও ভালোরকম ছিল। মেগানের মধ্যেও তার প্রভাব রয়েছে।
নিজের বোধজ্ঞানের ওপর ওর যথেষ্ট দখল আছে। আমি ওকে বুদ্ধিমতী মেয়েই মনে করি। জোয়ানারও ওকে পছন্দ।
–আমরা সকলেই ভেবে আবাক হই, কী করে এই অজপাড়াগাঁয়ে আপনারা ডুব মেরে রয়েছেন?
–ডাক্তারের হুকুম। শান্ত পরিবেশই আমার একমাত্র দাওয়াই। এখন দেখছি লিমস্টকের ক্ষেত্রে অবশ্য সে কথা ততটা খাটে না।