হল্যাণ্ড লজ্জায় লাল হয়ে বলল, যতোটা করতে পারি, তাতে আপনার সম্মতি থাকলেই আমি খুশী। বাচ্চাদের নিয়ে বা চিঠি লেখা, টেলিফোন ধরা নিয়ে চিন্তা করবেন না।
মিঃ সিমিংটন ফের বললেন বড়ো স্নেহময়তা তোমার।
ঘুরে দাঁড়াতেই হল্যান্ডের আমাদের দিকে দৃষ্টি পড়ল। চাপা গলায় বলল, কি ভয়ানক কথা বলুন তো?
আমি দেখলাম ওর সুন্দর নীল চোখের কিনারায় গোলাপী ছোঁয়া, যেটা জানিয়ে দিচ্ছে তার মনিবগিন্নির মৃত্যুতে সেও চোখের জল ফেলেছে।
জোয়ানা বলল, মিঃ সিমিংটনকে বিরক্ত করতে চাই না, তোমার সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে পারি।
হল্যাণ্ড আমাদের অন্যদিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বলল, হ্যাঁ, ওঁর পক্ষে তো একটা ভীষণ রকম আঘাত। কিছুকাল হল গিন্নিমা অদ্ভুত ধরনের ব্যবহার করছিলেন। ভয়ঙ্কর রকমের ছটফটানি আর কান্নাকাটির ঝোঁক, ডাক্তার গ্রিফিথ বলতেন, তার শরীরে কোনো গলদ নেই।
জোয়ানা বলল, আসলে আমরা এটুকু জানতে এসেছি যে, মেগানকে আমাদের সঙ্গে দু-একদিন রাখতে পারি কিনা অর্থাৎ সে যদি আসতে চায়।
একটু অনিশ্চিত সুরে হল্যাণ্ড বলল, মেগান? মানে আপনারা তো ঠিকই ভেবেছেন, তবে কে জানে, সে তো কেমন অদ্ভুত গোছের মেয়ে–এসব ব্যাপারে কী বলবে কে জানে। সে বোধহয় এখন ওপরতলায় পুরানো নার্সারিতে আছে। সবার থেকে দূরে থাকতে চায়।
জোয়ানার ইশারাতে আমি চট করে বেরিয়ে ওপরতলার চিলের ছাদে পুরানো নার্সারিতে গিয়ে দেখলাম একটা আবছা আলোআঁধারিতে দেওয়ালে ঠেস দেওয়া একটা ডিভানে গুটি মেরে বসে আছে মেগান।
আমি ওকে নানা কথা বলে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজী করালাম আমাদের সঙ্গে যেতে। তার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে আসতে বলে আমি নিচের তলায় ওদের এসে বললাম, মেগান আসছে।
এলসি বিস্মিত হয়ে বলল, আঁ, তবে ভালোই হলো। একটু কোটর ছেড়ে বেরুতে পারবে। এতসব কাজের মধ্যে ওর ঝুটঝামেলা না থাকলে আমিও মহা স্বস্তি পাবো। মিস বার্টন, বড়ো দয়ার কাজ করলেন, যা হোক। ওরে বাবা! টেলিফোন–বলে হল্যান্ড কামরা ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
ইতিমধ্যে মেগান সুটকেস নিয়ে নেমে এল। তাকে গাড়িতে তুলে আমরা সোজা লিটল ফার্জে এলাম।
ড্রয়িংরুমে ঢুকে স্যুটকেস রেখে মেগান একটা চেয়ারে বসেই কান্নায় ভেঙে পড়ল। যাকে বলে হাউ-মাউ কান্না। একটু কাদার পর ভারী গলায় বলল, আমি এরকম কাণ্ড করে ফেললাম বলে কিছু মনে করবেন না।
জোয়ানা বলল, না, তাতে কী হয়েছে। এই নাও আরেকখানা রুমাল। আমি মেগানের হাতে একটা ভরা পানীয়র গ্লাস তুলে দিলাম।
–কী এটা?
–ককটেল, আমি বললাম।
–ককটেল? আগে কখনো আমি ককটেল খাইনি।
মেগান এক ঢোকে সবটাই খেয়ে ফেলল।
মেগান এবার জোয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি এখানে এসে কান্নাকাটি করে নিজেকে কি বিদঘুঁটে করে তুলেছিলাম, এখন ভাবলেই অস্বস্তি হচ্ছে। আপনারা যে নিজের থেকে আমাকে সাহায্য করেছেন, এর জন্যে আমি কৃতজ্ঞ।
–কৃতজ্ঞতা জানিও না ভাই, লজ্জা পাবো। আসলে জেরী আর আমার সব কথাবার্তাই ফুরিয়ে গেছে, আর কোনো কথাই খুঁজে পাই না আমরা।
আমি বলি, এবার আমরা গনেরিল রিগনি, ঐরকম নানা মজার্দার চরিত্র, শেক্সপীয়র নিয়ে অনেক হৃদয়গ্রাহী আলোচনা করতে পারব।
-হুঁ, বুঝেছি, তোমরা সব ভারী ভারী উঁচু কথা বলবে। আমার তো শেক্সপীয়রকে ভীষণ রসকষ শূন্য মনে হয়।
আমি মেগানকে জিজ্ঞেস করলাম, এখন কেমন বোধ করছো? মাথা ঘোরা নেই তো!
–বিলকুল ঠিকঠাক, ধন্যবাদ।
জোয়ানা মেগানকে নিয়ে ওপরতলায় চলে গেল। প্যারাট্রিজ মুখটা বেজার করে ভেতরে এসে বলল, লাঞ্চের জন্যে শুধু দু-কাপ কাস্টার্ড বানিয়েছিলাম, এখন তাহলে কী করা যাবে?
০৬. করোনার আদালত
০৬.
তিনদিন পর বসল করোনার আদালত, দর্শকদের যথেষ্ট ভিড়ও হয়েছে। মহিলারা গালগল্পে মত্ত।
মিসেস সিমিংটনের মৃত্যুর সময়টা ধরে নেওয়া হল বেলা তিনটে থেকে চারটের মধ্যে। তখন বাড়িতে তিনি ছিলেন একা। সিমিংটনের অফিসের পরিচারিকারা ছুটির দিন বলে বাইরে, এলসি হল্যান্ড বাচ্চাদুটোকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিল, মেগান সাইকেলে চলে ঘুরতে যায়।
বিকেলের ডাকে চিঠিটা পেয়ে মিসেস সিমিংটন উত্তেজিতভাবে বাগানের চালাঘরে গিয়ে বোলতার বাসা নষ্ট করার পটাশিয়াম সায়ানাইড বিষ জলে গুলে খেয়ে ফেলেন। বিষ খাবার আগে শেষ বিক্ষুব্ধ কথাগুলো লিখে যান : আমি আর পারছি না।
আওয়েন গ্রিফিথ মিসেস সিমিংটনের ক্ষীণ স্নায়বিক সহ্যশক্তির ডাক্তারি সাক্ষ্য দিলেন। ভদ্র ও বিবেচক করোনার তীব্র ভাষায় বেনামী, শয়তানীভরা চিঠির লেখকের নিন্দা করে বলেন, ঐ চিঠিই এই খুনের জন্য নৈতিকভাবে দায়ী। তিনি আশা করেন পুলিশ অপরাধীকে খুঁজে বের করবে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। জুরিরা রায় দিলেন, সাময়িক অপ্রকৃতিস্থতার মধ্যে আত্মহত্যা।
গ্রাম্য মহিলাদের ভিড় থেকে সেই একটা কথাই ফিসফিসানির সুরে শোনা গেল–আগুন না থাকলে ধোঁয়া হয় না।
.
এর পরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হল পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট ন্যাসের আগমনের আগে স্থানীয় বাসিন্দারা আমরা সঙ্গে দেখা করে গেছে।
করোনার আদলতের পরদিন সকালে মিস গ্রিফিথ এসে হাজির।
সুপ্রভাত, শুনলাম মেগান হান্টারকে আপনারা এখানে এনেছেন?
–হ্যাঁ, এনেছি।