দুমিনিট বাদে গুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভেতর ছুটে যান। আর আনকারটন ছুটে আসেন প্রিভি গার্ডেনের দিকে।
ঠিক সেই সময়ে আপনি মানে মিঃ স্যাটারহোয়াইট এসে হাজিরে হয়েছিলেন সেখানে। স্যাভারটন ছিলেন প্রিভি কাউন্সিলে। তার হাতে ছিল একটা পিস্তল যার থেকে দুটি গুলি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তাই মনে হচ্ছে যে তিনি প্রথমে গুলিটি নিক্ষেপ করেন পেছনের বেঞ্চি থেকে। তারপর ক্যাপ্টেন অ্যালেনসন গুলিবিদ্ধ হয়ে গোঙাতে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে আবার তাকে গুলি করা হয়েছিল। আমার মনে হচ্ছে তার সঙ্গে এবং মিঃ রিচার্ড স্কটের সঙ্গে বোধহয় হতভাগ্য ব্যক্তিটির পূর্ব পরিচয় ছিল।
পোর্টার বলে ওঠে–এটা একেবারে মিথ্যে কথা। পোর্টারের কণ্ঠস্বরের মধ্যে কেমন একটা কর্কশতা মেশানো আছে। তার দিকে ইনসপেক্টর চোখ তুলে তাকালেন। কিন্তু মুখে কোন কথা বললেন না।
মিঃ স্যাটারহোয়াইট জানতে চাইলেন–ভদ্রমহিলা কি জবানবন্দী দিয়েছে?
তিনি বলেছেন যে কিছুক্ষণ আগেই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রিভি গার্ডেনে। তারপর হঠাৎ করে গুলির শব্দ কানে আসে তার। তিনি দেখতে পান যে পিস্তলটি পড়ে আছে তার পায়ের কাছে। কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে সেটিকে কুড়িয়ে নিয়েছিলেন, অবশ্য এই কথার কোন সম্মানজনক ইঙ্গিত নেই তার বক্তব্যের মধ্যে।
কিছুক্ষণ পরে ইনসপেক্টর আবার বলতে শুরু করেন-মনে হচ্ছে তাঁর কথার মধ্যে কোথায় যেন মিথ্যে লুকিয়ে আছে। গোপন করার চেষ্টা করছেন তিনি।
পোটার বলেন–তিনি যদি তাই বলে থাকেন তাহলে এটাই সত্যি কথা। কেননা আমি তো আইরিশ হ্যাঁভারটনকে চিনি।
ইনসপেক্টর বলেন–অনেক কথা বলা হয়েছে, আমার কিছু কাজ করতে হবে।
পোটার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন মিঃ স্যাটারহোয়াইটের দিকে।
-আপনি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন?
হঠাৎ এই বক্তব্যে তিনি বিচলিত হতে থাকেন। কিন্তু কোন কথা বলেন না।
এর পরেই ইনসপেক্টর ব্যস্ত হয়ে পড়েন তার নিজস্ব কাজে। ভয় এবং বিহ্বলতার ছায়া তখন গ্রাস করেছ সমস্ত পরিবেশকে। কোথায় হারিয়ে গেছে আগের সেই উৎসবমুখর আনন্দ ঝংকার।
.
০৩.
কি ঘটতে পারে?
মিঃ স্যটারহোয়াইটকে খুব বিরক্ত মনে হলো। যদিও দিনটা শুরু হয়েছিলো দুর্ভাগ্যের মধ্যে দিয়ে। তার অন্তরালে যে লুকিয়ে ছিলো এমন ভয়ের ছায়া কে খবর রাখতো তার? জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলেন তিনি কয়েকটি উড়ন্ত ছোট্ট পাখির দিকে। সামনে গ্রামের পরিপূর্ণ পরিবেশে তার বেশ ভালোই লাগছে সময় কাটাতে।
হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঐ ঘটনাটা বেশ ভাবিয়ে তুলেছে তাকে বোধহয়। তিনি এই মুহূর্তে দৃষ্টি নিবন্ধ রেখেছেন আকাশর কোণে দৃশ্যমান নীল নীলিমার দিকে। অনেক কিছু ভাবনার অনুরণন ঘটে গেছে তার মনের মধ্যে।
খুঁজতে খুঁজতে তাঁকে পৌঁছতে হলো বেলটস অ্যাণ্ড মটলে নামে সরাইখানাতে। সেখানেই বোধহয় রাত্রিবাস করতে হবে তাকে।
সোফিয়ারকে পথনির্দেশ করে দিলেন তিনি। সোফিয়ার গাড়ি চালাতে শুরু করে। এখনও চল্লিশ মাইলের মতো পথ পার হলে তবে ঐ সরাইখানাতে পৌঁছতে পারবেন।
একটি অদ্ভুত কথা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে তার। কেন তিনি এসেছেন বেলটস অ্যাণ্ড মটলেতে? এর সঙ্গে ঐ রহস্যের কি সম্পর্ক আছে?
প্রথম দিনের পার্টিতে দেখা হওয়ার পর মিঃ কুইন যেন কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তার সঙ্গে তো আর যোগাযোগ হচ্ছে না। এসব কথাই ভাবতে ভাবতে পথ পার হয়ে আসেন স্যাটারহোয়াইট।
কুইনের সঙ্গে আবার দেখা করতেই হবে।
মনে হচ্ছে, এইসব ঘটনার অন্তরালে রহস্য লুকিয়ে আছে যা না জানা পর্যন্ত রাত্তিরে ঘুম হবে না মিঃ স্যাটারহোয়াইটের।
অবশেষে চোখে পড়লো তার। বাতাসের মধ্যে দেখা হচ্ছে বেলটস অ্যাণ্ড মটলের সাইনবোর্ড।
.
০৪.
আকাশ জোড়া চিহ্ন
এইমাত্র বিচারক শেষ করলেন তাঁর ভাষণ-ভদ্রমহোদয়গণ, আমি যা বলতে চলেছি শেষ হয়ে এসেছে। আমার হাতে অনেক তথ্য প্রমাণাদি আছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি যে ১৩ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার দিন একটি চিঠি লেখা হয়েছিল। যে চিঠির বয়ান অনুসারে সমস্ত দোষ স্বীকারও করে নেওয়া যেতে পারে।
দাঁড়িয়ে ছিলেন মিঃ স্যাটারহোয়াইট কোর্ট ঘরেতে। থমথম করছে সমস্ত মুখমণ্ডল তাঁর। প্রচণ্ড উত্তেজনাকে দমন করে শুনতে চাইছেন বিচারকের শেষ রায়টি।
এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিচার ব্যবস্থা তাকে মোটেই আকর্ষণ করে না। তবে এই ঘটনাটি একেবারে আলাদা কেননা এর সঙ্গে ভদ্রলোকের জীবন আর স্যার জর্জ বার্নালের সেই তরুণী স্ত্রীটি, তার কথাও ভাবতে হবে বৈকি।
আলবর্নের পথে হাঁটতে হাঁটতে এসব কথা ভাবছিলেন মিঃ স্যাটারহোয়াইট।
তারপর দেখা হয়ে গেল মিঃ কুইনের সঙ্গে কোর্টের মধ্যেই। দুজনেই বোধ হয় একই পথের পথিক। কিন্তু তাদের পথের সীমানা অনেক পাল্টে গেছে এখন।
মিঃ কুইনকে দেকে স্যাটারহোয়াইটের চোখে মুখে উত্তেজনার ছায়া ফুটে ওঠে। মিঃ কুইন কি একজন পাকা অভিনেতা। কত সহজে সংগোপন করেন তিনি মনের যে কোন বোধ।
পথচলতি একটি কাফেতে বসলেন দুজনে। বেশ কিছু কথা বোধ হয় বলতে হবে।
মিঃ স্যাটারহোয়াইট বলতে শুরু করেন, এইমাত্র আমি ওল্ড বেইলি থেকে এলাম।
মিঃ কুইন আগ্রহভরে জানতে চান–কি রায় দিয়েছেন বিচারক?
-কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে কি?