মিঃ কুইন হাসতে হাসতে বলেন, এমন ভাবেই চলতে থাকে কথাবার্তা। কিন্তু সেই ঘনীভূত পরিবেশটা বোধহয় আগের মতো আর হচ্ছে না।
মিঃ স্যাটারহোয়াইট আবার তাকিয়ে থাকেন। হঠাৎ আর-একটি রমণীর চেহারা নজরে আসে তার। দাঁড়িয়ে আছে সে গ্যালারীর একপাশে, কিন্তু তাকে দেখে চিনতে ভুল হয়নি। সেই-ই হলো ইলিয়েন পোস্টার।
মিঃ কুইনের আবির্ভাব, পোর্টারের সঙ্গে আলাপ হওয়া সবই কি এক সুতোয় গাঁথা বলে মনে হচ্ছে?
ডিনার শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। মিঃ কুইন বসেছেন চেয়ারে, সকলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে ঘুরে ফিরে যাচ্ছে।
এক-একজন এক-একরকম ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। কেউ-বা অনেক বেশী কথা বলছে, কেউবা চুপচাপ বসে রাতের আহার সারছে, কেউ-বা আনন্দের আতিশয্যে হাততালি দিচ্ছে। মিঃ স্যাটারাহোয়াইট বেশ বুঝতে পারছেন, কোথায় যেন রহস্য যবনিকা ধীরে ধীরে খুলছে তার আবরণ।
বেশ কিছুক্ষণ বাদে একটি শব্দ শোনা যায়। অ্যালেক্স পোর্টার যেন কিছু বলতে চাইছেন, ইলিয়েন, আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে ক্ষমা করো। তুমি আমাকে সত্যি কথা বলো, ঈশ্বরের দোহাই, তোমাকে অনেকদিন থেকে আমি চিনি, অ্যালেক্সকেও আমি জানতাম। কিন্তু এই মুহূর্তে সব কথা বলতে পারছি না, অ্যালেক্স।
.
০২.
গ্লাসের ওপর ছায়া
লেডি সিনথিয়া বললেন, আমার কথা শোন। এই সপ্তাহে গ্রীনওয়েজ হাউজে মিঃ এবং মিসেস আনকারটন একটি পার্টি দেবে।
দেখতে দেখতে এসে যায় সেই পার্টির মুহূর্তটি। সুসজ্জিত অতিথি অভ্যাগতদের সমাগমে ভরে উঠেছে ব্যাঙ্কওয়েট হল। আগের মত মিঃ স্যাটারহোয়াইট ব্যস্ত আছে তার নিরীক্ষণের কাজে। অনেক নতুন মানুষের সংস্পর্শে আসতে হবে তাঁকে এই পার্টিতে। মনে মনে ঈষৎ উৎকণ্ঠিত তিনি বুঝি। ঐ তো দেখা যাচ্ছে সকলকে। হাজির হয়েছে পুরোনো পরিচিতরা। তার মধ্যে নতুন কেউ কেউ এসে সন্ধ্যায় এই অনুষ্ঠানকে আরো বেশী সাফল্যমণ্ডিত করে তুলেছে নাকি?
প্রিভি গার্ডেনে তখন সান্ধ্য আসর জমে উঠেছে। সেখানে হাজির আছেন অনেকেই মিঃ স্যাটারহোয়াইট তাকিয়ে দেখলেন প্রিভি গার্ডেনে। সাজানো লনে বসে আছে রিচার্ড স্কট এবং মিঃ আনকারটন। টেবিলে সবেমাত্র ফেনিল সুরার মূৰ্ছনা।
পোর্টার কিছু কথা বলছে বুঝি ওদের সঙ্গে।
হঠাৎ দেখা গেল কোন এক উত্তেজনার ঘটনা ঘটে চলেছে। হঠাৎ সশব্দে কিছু বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ছুটে যান সকলে সেখানকার কাছাকাছি।
পোর্টার চিৎকর করে ওঠে–ঈশ্বরের দোহাই, কি ঘটনা ঘটলো?
হুড়োহুড়ি শুরু করে গেছে। আইরিশ হাতে একটি পিস্তল নিয়ে চিৎকার করে বলে আমি এটিকে এক্ষুণি এখান থেকে পেলাম।
মিঃ স্যাটারহোয়াইট আরো এগিয়ে আসেন। আনকারটন এবং স্কটের দিকে দাঁড়িয়ে হাঁটু মুড়ে কিছু বলতে চেষ্টা করেন তিনি।
স্কট তখন বিড়বিড় করে বলেন–একজন ডাক্তারকে ডাকুন।
ডাক্তার ডাকার আর সময় নেই। তার আগেই দেখা গেল যে জিমি অ্যালেনসাম আর ময়রা স্কটের রক্তাক্ত দেহটা সেখানে পড়ে আছে।
রিচার্ড স্কট ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। তার মতো লৌহকঠিন মানুষের হৃদয় বুঝি এই মুহূর্তে কিছুটা ভারাক্রান্ত হয়েছে ঘটনার আকস্মিকতায়। পুলিশকে খবর দিতে হবে।
চোখে মুখে ফিরে এসেছে হারানো প্রত্যয়।
পোর্টার আবার ফিরে পাচ্ছেন তাঁর গম্ভীরতা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে হাজির হলেন ইনসপেক্টর ইনফিল্ড।
সকলে বসে আছে লাইব্রেরীতে। ইনসপেক্টরকে দেখে মনে হচ্ছে চতুর মুখের মানুষ তিনি। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। জীবনের অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। তাই এইসব ঘটনা আর কোন বিস্ময় উদ্রেক করতে পারে না তার ভাবলেশহীন মুখে। তিনি এখন শুনছেন মেজর পোর্টার এবং মিঃ স্যাটারহোয়াইটের বক্তব্য। আনকারটন বসে আছেন চেয়ারের মধ্যে। আর তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে শূন্য চোখে।
ইনসপেক্টর বলতে শুরু করলেন–ভদ্রমহোদয়গণ, আমাদের মনে হচ্ছে যে এর মধ্যে কোথাও একটি রহস্য লুকিয়ে আছে। আসুন তো, আমরা প্রিভি গার্ডেনের সেই ঘটনার অকুস্থলে পৌঁছাই।
–চলুন, যাওয়া যাক ইনসপেক্টর।
–আপনারা শুনেছিলেন, দুটি গুলির শব্দ আর একজন মহিলার আর্তনাদ, তাই তো?
–ঠিকই বলেছেন।
–আপনারা সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়েছিলেন এবং প্রিভি কাউন্সিলে পৌঁছানোর পরে কাউকে পালিয়ে যেতে দেখেননি। অবশ্য চারিদিকে এমন ঘন ঝোঁপ আছে যে, কোন লোক যদি বসে থাকে তবে তার চেহারা আপনাদের চোখের সামনে উদ্ভাসিত হবে না।
মিঃ আনকারটন, আপনি তো বসেছিলেন প্রিভি গার্ডেনের চেয়ারে। আপনিও কি সামনে কিছু দেখেননি যা আপনার মনের মধ্যে সংশয়ের উদ্রেক করতে পারে?
ইনসপেক্টরের এই কথা শুনে ভয়ের একটা ছবি দ্রুত সরে যায় আনকারটনের মুখের ওপর থেকে। তিনি আমতা করে বলেন-তেমন কিছু দেখিনি স্যার। তবে মনে হয়েছিল কোন কোন মানুষের মধ্যে বুঝি কিছুটা বিহ্বলতার ছাপ রয়েছে।
ইনসপেক্টর আবার বলতে শুরু করেন তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এইরকম মিঃ এবং মিসেস আনকারটন, ও লেডি সিনথিয়া বসেছিলেন লনের ওপরে। মিঃ স্কট ছিলেন বিলিয়ার্ড রুমে যার একটি দরজা লনের দিকে খোলা আছে। ছটা বেজে দশ মিনিট বাদে মিসেস স্যাভারটন বেরিয়ে এসেছিলেন ঘর থেকে। তখন তিন সমাগত ভদ্রলোকের সঙ্গে দুটি একটি করে কথা বলছিলেন। তারপর প্রিভি গার্ডেনের দিকে এগিয়ে যান।