ট্রুপেন্স বলল, শেষপর্যন্ত আমরা কিছু পেলাম।
তার মানে তুমি বলতে চাইছ যে, কেউ একজন লণ্ডনে যাচ্ছিল কেনাকমটন গার্ডেনে কারোর সঙ্গে দেখা করতে। তাকে কোন গোপন কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একটু থেমে টমি আবার বলল, তোমার কি কোন ধারণা আছে? কে এই জিনিষটি ম্যাথিণ্ডের মধ্যে থেকে নিয়ে নিত বা রাখত।
এমন কেউ একজন করত যে এই বাড়িতে থাকত। এটা কোন বাচ্চার কাজ নয় নিশ্চয়। তার আচার-আচরণের মধ্যে একটা অদ্ভুত ভাব ছিল। যা সকলের উর্দ্ধে। নৌ-বাহিনীর গুপ্তচররা যে জিনিষগুলো আনত সেই জিনিষগুলি সে নিয়ে নিত এবং সেগুলি নিয়ে সে লণ্ডনে যেত।
চামড়ার ব্যাগটা গলার উড়নিটা দিয়ে সুন্দরভাবে মুড়ে নিল। এবার তারা ফিরে এল। ফিরে এসে ঘরে পা দিয়েই ট্রুপেন্স বলে উঠল আরে এখানে দেখনি আরো অনেক কাগজপত্র পড়ে আছে। হলঘরের টেবিলের মধ্যেও একটা কাগজের বড় মোড়ক পরা ছিল। আবাট ঘর থেকে বেরিয়ে এল। ট্রুপেন্স বলল, ম্যাডাম এটা ফেলে দেওয়া হয়েছে। তখন ও বলল তোমার জন্যই আজ সকালে এটা রেখে যাওয়া হয়েছে।
ট্রুপেন্স অবাক হয়ে টেবিল থেকে মোড়কটা তুলে নিল। এবং তারপর দুজনে মিলে হলঘরে ঢুকল। ট্রুপেন্স ঘরে ঢুকেই বাদামী রং-এর মোড়কটা খুলেই বলল, মনে হচ্ছে এটা একধরনের অ্যালবাম। এরমধ্যে একটা চিরকুট দেখছি। মিসেস গ্রিফিনের কাছ থেকে এসেছে।
চিরকুটটা পড়ে দেখল যে এটা সেই চিঠি যেটা কিছুদিন আগে ওনাকে একটা বই দেওয়া হয়েছিল। এটার মধ্যে তারই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ভদ্রমহিলা। ট্রুপেন্স বলল, অ্যালবামটা দেখে মজা পাওয়া যেতে পারে।
অ্যালবামের মধ্যে ফটোগুলো দেখতে দেখতে ট্রুপেন্সের একটা মেয়ের ছবির দিকে নজর পড়ল। সে সেইটা টমিকে দেখিয়ে বলল, মনে হয় এটা মেরী জর্ডনের ছবি। এবং বলল মেরী জর্ডন দুটো নামই দেওয়া আছে ছবিটার তলায়।
মেরী জর্ডনকে দেখতে ভারী চমৎকার। তবে ছবিটা ভালো হয়নি, ঝাপসা আর মনে হয় অনেক দিন আগের ফটো ট্রুপেন্সের কাছে ফটোটা এতই সুন্দর লাগছিল যে সে টমিকে বলল যে সত্যিই মেরী জর্ডনকে ভারী চমৎকার লাগছে। টমি বলল, কে যে ছবিটা তুলেছিল ভেবে আমার অবাক লাগছে। অনেকক্ষণ দেখার পর অ্যালবামটা সরিয়ে রাখল। তারপর দুপুরের দিকে আসা একটা চিঠি খুলল।
ট্রুপেন্স জিজ্ঞাসা করল, উৎসাহিত হবার মত কিছু কি আছে, এই চিঠিটাতে? এর মধ্যে তিনটি চিঠি আছে। দুটো বিলও আছে। এই ব্যাপার যেন অন্যরকম মনে হচ্ছে। এটার মধ্যে উৎসাহ ব্যঞ্জক আছে কিনা তা নিয়েই সবাই ব্যস্ত।
টমি বলল, আগামীকাল নাকি টমি কর্নেল পাইকঅ্যাজনের সঙ্গে লণ্ডনে থাকে। এই লোকটার নাম শুনে ট্রুপেন্স বলল কোথায়, তুমি তো এই নামটা আগে জানাওনি।
টমি তখন বলল, হ্যাঁ, তোমাকে একবার বলেছিলাম। লোকটা কোন এক জায়গায় থাকে। টমি ট্রুপেন্সকে বলল, তোমার কাছে কি কোন কাফ লজেন্স আছে?
ট্রুপেন্স অবাক গলায় বলল, মনে হয় আমার কাছে আছে। তোমার কি সর্দি হয়েছে। ট্রুপেন্সের চোখে তেমন কিছুই লাগছে। তাই সে বলছে কই আমি তো কোনভাবেই সেরকম কিছু দেখছি না।
টমির ওটা ভীষণ দরকার কারণ যদি সে কর্নেল পাইকঅ্যাজনের সঙ্গে যায়। এই লোকটাই রবিনসনের সঙ্গে কথা বলেছিল সেই জন্য লোকটা ট্রুপেন্সের সঙ্গে দেখা করতে চায়।
***
কর্নেল পাইকঅ্যাজনের সঙ্গে পরের দিন দেখা করে টমির খুব একটা বেশী লাভ হল না। টমি ও পাইকঅ্যাজনের মধ্যে নানা কথাবার্তার মধ্যে টমি পাইকঅ্যাজনকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি বাড়িটার কথা শুনেছেন?
পাইকঅ্যাজন বললেন, কোন বাড়িটার কথা বলছ? এ জোড়ালো লেফট ওরফে লরেন্স বাড়িটার কথা।
পাইকঅ্যাজন বলল, কোনদিন আমি ঐ বাড়িটাতে যায়নি। অতীতের একটা বিশেষ ঘটনার সাথে ঐ বাড়িটা জড়িয়ে আছে। ঐ দেশের একটা বিরাট দুশ্চিন্তার সময়ে।
টমি বলল, আমার মনে হয় মেরী জর্ডন নামে কোন এক মহিলা সম্পর্কিত মহিলা সম্বন্ধে আপনি বলছেন।
একটু থেমে পাইকঅ্যাজন বলল, তুমি দেখতে চাও মহিলাটিকে দেখতে কেমন ছিল? অগ্নিকুণ্ডের তলায় তাকটার বাঁ-দিকে ওর ফটো রাখা আছে। তুমি গিয়ে দেখে এসো।
টমি উঠে পড়ে অগ্নিকুণ্ডের তলার তাকটা থেকে ছবিটা তুলে নিল। ছবিটা খুবই সুন্দর। অনেক দিনের পুরানো ছবি। মাথায় টুপি পরা হাতে গোলাপ নিয়ে একটি মেয়ের ছবি।
মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দর। কিন্তু ভাগ্যটা ভালো ছিল না। দুর্ভাগ্যবতী। অল্প বয়সেই মারা যায়। একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা যায়। সবাই বলে ও জার্মানীর গুপ্তচর ছিল। রবিনসনের মতে ব্যাপারটা তা নয়। আমাদের হয়ে ও সব সময় খুব ভালো কাজ করত।
কিছুক্ষণ পরে রবিনসন বললেন যে, তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে। তিনি বিপদের সম্ভাবনার কথা ভেবেই বললেন তোমার স্ত্রীর ট্রুপেন্সকে বল তোমার ব্যাপারে বিশেষ ভাবে যত্নবান হতে। কারণ যে কোন সময় বিপদ হতে পারে।
টমি বলল, যতটা পারি দুজন দুজনকে করব। তবে মনে হয় না এটা করা সম্ভব হবে।
***
একটা গ্রামে মিঃ ডুরেন্সের দোকান। দোকানটার মধ্যে ক্যামেরায় তোলা ছবি আছে। বিভিন্ন ধরনের ছবি। যেমন-কয়েকজন দম্পতি, খেলতে থাকা কয়েকটা বাচ্চা ছেলের ছবি। একজন কি দুজন। ছবিগুলো যুবকের ছবি মেয়েদের সঙ্গে তোলা। ইত্যাদি।