টমির আর একটি সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। লোকটি অবশ্য টমিকে তথ্য দিয়ে খুব একটা সাহায্য করতে পারল না।
লোকটি টমিকে একটা ঠিকানা দিল এবং বলল এই ঠিকানা নিয়ে ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা কর তাহলে সেই এই ব্যাপারে তোমাকে কিছু সাহায্য করতে পারে।
টমিকে সিটি অফিসে গিয়ে মিঃ রবিনসনের সঙ্গে দেখা করতে হল।
টমিকে দেখে রবিনসন উঠে দাঁড়াল। টমির সাথে করমর্দন করল। টমি তার সময় নষ্ট করার জন্য মাপ চেয়ে নিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল ওরা পূর্ব পরিচিত।
ভদ্রলোক বলল, তুমি কিসের জন্য এসেছ?
টমি তখন তাদের বাড়ি কেনা থেকে সমস্ত ঘটনা বলে মেরী জর্ডনের ধাঁধার কথা বলল।
মিঃ রবিনসন সব শুনে বলল বেশ মজার্দার ব্যাপার তো। আর কে লিখে রেখেছিল বলে তুমি অনুমান করছ, হা, পারকিনসন। হ্যাঁ এই রকমই একটা নাম ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তার সম্বন্ধে কিছুই জানা যায় না। সে কে, কি করত, কোথায় থাকত ইত্যাদি।
রবিনসন টমির মুখ থেকে মেরী জর্ডনের মৃত্যুর কারণটা জানতে চাইল। টমি তাকে শোনা কথাটাই শোনাল। কেউ হয়তো বাগান থেকে পালং শাক কিংবা লেটুস শাক ভেবে ফক্সগ্লোভ নামক বিষাক্ত লতা কেউ একজন তুলে এনেছিল। তারপর তারা হয়ত সেটাই রান্না করে খায়। কিন্তু সম্ভবত এই কারণে কেউ মরেনি।
তা ঘটনাটা কখনকার ঘটনা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না তার আগে?
হ্যাঁ তার আগের ঘটনা। প্রাচীন বয়স্কদের মধ্যে একটা গুজব ছড়িয়ে ছিল এই বলে যে, মহিলাটি নাকি একজন জার্মানীর গুপ্তচর ছিল।
এই ব্যাপারটা রীতিমত সাড়া জাগিয়েছিল। ১৯১৪ সালের আগে তখন ইংল্যাণ্ডে কাজ করলেই তাকে জার্মানী গুপ্তচর বলে আখ্যা দিয়ে দেওয়া হত। অথচ কোন ইংরাজ ভদ্রলোক এই ধরনের গুপ্তচর বৃত্তিতে লিপ্ত থাকলেও তাকে সন্দেহের উর্ধে রাখা হত।
কিছুক্ষণ কথাবার্তা চলার পর মিঃ রবিনসন এবার টমির কাছ থেকে বিদায় চাইল।
টমি চলে যাবার জন্য উঠে দাঁড়াতেই মিঃ রবিনসন বললেন, আমি এই ব্যাপারটা সম্পর্কে এমন কিছু জানি যা অন্য কেউ তোমাকে বলতে পারবে না।
মিঃ রবিনসন বলল, তুমি নিশ্চয় এই কেসটা পড়েছ। গুপ্তচর বৃত্তির জন্য তার শুনানি হয়েছিল। সে ছিল দেশের বিশ্বাসঘাতক। কিন্তু মেরী জর্ডন।
হ্যাঁ, রুদ্ধশ্বাস কৌতূহলে টমি বলল।
তুমি তো মেরী জর্ডন সম্বন্ধে জানতে চাও ভালো কথা। আমি তোমাকে একটা জিনিষ বলে সাহায্য করব যা তোমার তদন্তে তোমাকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী দিতে সাহায্য করবে। মেরী জর্ডন শত্ৰু গুপ্তচর ছিল না। এই কথাটি বলে গলাটা অনেক খাদে নামিয়ে নিয়ে বলল ও ছিল অফিসের অনেক গুপ্তচরদের মধ্যে একজন।
***
পরে টমি কথাটা ট্রুপেন্সকে বলল, ট্রুপেন্স শুনে জানালো যে তার সমস্ত ভাবনাচিন্তার মধ্যে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। এবং বলল, এখন মনে হচ্ছে সবকিছুই ভুল জেনেছি।
ট্রুপেন্স টমিকে বলল, আমরা এই ব্যাপারটা ব্ল্যাক অ্যারো বইটি থেকে জানতে পেরেছি। ব্যাপারটা আমাদের কাছে পরিষ্কার ছিল। আলেকজাণ্ডার নামে একটি বাচ্চা ছেলে এটি লিখে রেখেছিল। তাদের মধ্যে কেউ একজন মেরী জর্ডনকে খুন করেছিল।
তুমি কি ভেবে নিয়েছিলে যে মহিলাটি জার্মানের গুপ্তচর ছিলেন। এখন দেখছো এটি সত্যিই না। সে জার্মানের শত্রুপক্ষের গুপ্তচর ছিল।
ট্রুপেন্স চুপ করে রইল। মহিলাটি কি সত্যিই ইংরেজদের চর? সে মনে হয় গোয়েন্দা বিভাগের কেউ ছিল। সে মনে হয় এখানে এসেছিল কিছু খুঁজে বার করতে। মহিলাটি নৌ-অফিসার সে নাকি সাবমেরিন কিংবা ঐ রকম কোন কিছুর গুপ্ত ঘর বিক্রীত করত, তার সম্বন্ধে খোঁজখবর নিত। এখানে মন হয় কিছু জার্মান গুপ্তচর ছিল। তারা সক্রিয় ছিল এই ব্যাপারে।
টমি বলল, এক কাজ কর। যাক, যে কামাণ্ডারটির শুনানি হয়েছিল, তার নাম কমাণ্ডার এক্স ধরে নিয়ে আমরা এগোই।
ট্রুপেন্স তাতে রাজী হল, এবং টমি বলল, এখানেই কোথাও কোন কটেজে সে থাকত এবং সেখান থেকেই সে যাবতীয় কাজ করত।
ট্রুপেন্স বলল, আমার মনে হয় মেরী জর্ডন কিছু খুঁজে বার করতে এসে থাকবে। তখন তো মানে কমাণ্ডার এক্স ও অন্যান্য লোকজনও আছে এর মধ্যে। যখন তারা জানতে পেরেছিল মেরী জর্ডন কিছু পেয়েছে।
কথা শুনে টমির যেন কি রকম মনে হল। এবং বলল তাহলে সেই রকম কিছু যদি হয় তাহলে মেরী জর্ডন যখন ভুল খাদ্য খেয়ে মারা গেল তখন আলেকজাণ্ডার লিখল, আমাদের মধ্যে একজন। ব্যাপার যদি আমাদের অনুমান মতো হয় তাহলে খুনটা তার পরিবারের মধ্যে কেউ করেনি।
এটা একটা আশ্চর্যের ব্যাপার ঐ খাবার খেয়ে সবাই মারা যেতে পারত কিন্তু মারা গেল একমাত্র মেরী জর্ডন।
অনেকক্ষণ ধরে কথাবার্তা চলার পর ট্রুপেন্স বলল তুমি কি লক্ষ্য করেছে যে আমরা রহস্যজনকভাবে দুবার আক্রান্ত হলাম। একবার তোমার মাথায় কাঁচ পড়ে গেল। আর একবার দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বইঘরে আমিও ঐ রকম একটা দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচেছি।
টমি বলল, তার মানে এই বাড়িতে অবশ্যই কিছু লুকানো আছে?
ট্রুপেন্স আইজ্যাক লোকটা কেমন জিজ্ঞাসা করল। এতে টমি অবাক হল। ট্রুপেন্স জানালো যে সে শত্রু লাম্বার লোক হতে পারে। ওর মত লোককে হাত করে নিয়ে তাদের গোপনে আক্রমণ করাটা অসম্ভব কিছু নয়। টমি এইসব কথা অলীক বা অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিল। এইসব বড় চক্রে কারা আছে, আর কারা নেই তা কিছুই পরিষ্কার করে জানা নেই। শত্রুর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায় যে এখানে গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন ছিল। তারা ভীষণ বিশ্বাসঘাতকতা করত। কিন্তু ওপর থেকে দেখে কিছুই বোঝা যেত না। সরকারের অনুগত কর্মচারী বলেই মনে হত।