বাড়িটা আবার ঝকঝক হওয়াতে আমি খুব খুশী হলাম, গেণ্ডা কথা বলতে বলতে জানাল।
আমার মনে হয় বাড়িটার নাম আগাগোড়াই লরেল ছিল।
না না, আমার তা মনে হয় না। এখানকার অনেক বাড়ির নাম বদলে গেছে। লোকে বাড়ি কিনলে তারা সবসময় পুরানো নাম বদলে বাড়ির নতুন নাম রাখে।
ট্রুপেন্স বলল, ব্রিটাইক বলেছিল যে তোমার জানা মেরী জর্ডন নামে কোন একজন মহিলা নাকি এখানে থাকত।
তাকে আমি চিনতাম না। তার নাম শুনেছি। সেটা অবশ্য যুদ্ধের সময়। সেই সময়টা ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে গেছে। অনেকে সেই সময় সৈন্যদের আক্রমণের ভয়ে জলের ভেতরে ঢুকে আত্মরক্ষা করত, এবং রাত কাটাত।
ট্রুপেন্স বলছিল, আমি তোমাকে মেরী জর্ডন নামে এক মহিলার কথা জিজ্ঞাসা করছি। ব্রিটাইক বলেছিল তুমি নাকি তাকে জানতে।
আমি কেবল তার নাম শুনেছি। সেটা অবশ্য অনেক বছর আগের কথা। মোটামুটি দেখতে ভালোই ছিল। তার মাথায় ছিল চমৎকার সোনালী রং-এর চুল। সোনালী রং-এর চুলে তাকে ভালোই দেখাত। বাচ্চাদের দেখাশুনা সে করত। সে ছিল নার্সের মত।
মনে হয় সে স্কটল্যাণ্ডে কোন নাবিক পরিবারের সঙ্গে বসবাস করত। তারপর সে এখানে চলে এসে পার্কার বা পারকিনসন পরিবারের মধ্যে এসে থাকতে শুরু করে। সে একদিনই সপ্তাহে ছুটি পেত। সেই দিনই সে লণ্ডনে যেত। সেখানে গিয়ে সে প্রয়োজনীয় জিনিষ নিত।
কি ধরনের জিনিষ? ট্রুপেন্স বলল।
তা জানি না। সেগুলি মনে হয় চুরির জিনিষ, কখনো কেউ অবশ্য এই ব্যাপারে কিছু বলেনি।
ওকে কি কেউ কখনও চুরি করতে দেখেছে?
আমার তো সেরকম কিছু মনে হয় না। ওরা কেবল সন্দেহ করতে শুরু করেছিল। হঠাৎই সে মারা গেল।
কি করে মারা গেল? সে কি এই বাড়িতেই মারা গেছে? নিশ্চয় তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল?
তখন নিয়ে যাবার মত কোন হাসপাতাল ছিল না। কার মুখে শুনেছিলাম রাঁধুনির ভুলের জন্যই নাকি দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। গেণ্ডা বলল। একটু থেকে নিয়ে বলল, পালং বা লেটুস শাক ভেবে বাগান থেকে কিছু বিষাক্ত গ্যাসের লতাপাতা হয়তো তুলে আনা হয়েছিল। কেউ কেউ আবার বলে অন্য কেউ এটা করেছিল। যে বিষাক্ত লতাপাতার কথা বলা হচ্ছে তা প্রত্যেককেই চেনে। এই বিষাক্ত গ্যাসের পাতা রান্নাঘরে নিয়ে আসা হয়েছিল। ওগুলো ছিল ফক্সগ্লোভ। এইগুলি ডিগোক্সো অথবা ডিজিটের মত কোন নাম। উদ্ভিদের মধ্যে ভয়ানক বিষাক্ত উপাদান ছিল। সেই গ্যাসের জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার ডাকা হল। কিন্তু কিছুই করা গেল না। অনেক দেরী হয়ে গেছে। মহিলাটি মারা গেলেন কিছুতেই বাঁচান গেল না।
যখন ঘটনাটি ঘটে তখন কি বাড়িতে অনেক লোকজন ছিল।
হ্যাঁ অনেক লোকজন ছিল। বাড়িটাতে সবসময় অনেক লোকজন থাকত। অনেক বাচ্চারাও থাকত। তাছাড়া সপ্তাহের ছুটি কাটাতে আসা লোকজন, নার্সারির ঝি, গভর্নের্স এরা তো থাকতই। সবই আমার ঠাকুমার মুখে শোনা। আর শুনেছি ঐ বুড়ো যার নাম মিঃ বডিকট। ওনার মুখে মাঝে মধ্যে সেই সব দিনগুলোর কথা শোনা যায়।
অনেকেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে পালং কিংবা লেটুস শাক ভেবে ঐ মারাত্মক বিষাক্ত ফক্সগ্লোভ তুলে নিয়ে এসে রান্নাঘরে রেখে দেয়। আমার তো মনে হয় একটা বিরাট ভুল ছিল।
পুরানো প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে ট্রুপেন্স বলল, মেরী জর্ডন কি প্রতি সপ্তাহে লণ্ডনে যেতেন?
তার উত্তরে গেণ্ডা বলল এটা ঠিক। তবে মহিলাটি ছিল বিদেশিনী এবং জার্মানি গুপ্তচর।
গেণ্ডা বলল, তার এসব কিছু মনে হয় না। ও বলল, মহিলাটি নৌবাহিনীর কয়েকজন অফিসার আর সেলটন মিলিটারী ক্যাম্পের কিছু পদস্থ ব্যক্তির সঙ্গে ওর খুব বন্ধুত্ব ছিল।
গেণ্ডা বলল, আমার মনে হয় না ও গুপ্তচর ছিল। আমার ঠাকুমা বলত ওসব কথা লোকে বলাবলি করে। গত যুদ্ধের সময়কার এই ঘটনা নয়। আরো অনেক বছর আগের ঘটনা।
ট্রুপেন্সের পরের লক্ষ্য ছিল মিঃ আইজ্যাক বডিকটকে নিয়ে। বাড়ির মেরামতির জন্য নতুন মালিকের ডাকে চলে এসেছিল সে।
কাজের জন্য কিছু কথাবার্তা বলার পর ট্রুপেন্স ওর আসল প্রসঙ্গে চলে এল।
তুমি নিশ্চয় এখানকার অনেক মানুষকে চেন। অতীতে ঘটনা ঘটলেও এই অদ্ভুত ঘটনাবলীর কথা শুনেছো নিশ্চয় তাই নয় কি?
আমার সেই আগের মত সেই রকম বয়স নেই। পঁচাশি পেরিয়ে গেছি অনেকদিন হল। নব্বইতে পড়তে চললাম। এমন কিছু কিছু ব্যাপার থাকে। যা সহজে ভোলা যায় না। আপনাকে এমন অনেক কিছু বলতে পারি হয়তো তা আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না।
ট্রুপেন্স বলল, খুবই আশ্চর্যজনক ছিল তাই না। তোমার জানাশোনা লোকেরা নিশ্চয় অদ্ভুত ছিল তাই তো?
ঠিক ব্যাপারটা সেইরকম ছিল না। আইজ্যাক জানাল। মানুষগুলির মধ্যে এমন একটা কিছু জিনিষ ছিল যা আপনি হয়তো বিশ্বাস করতে পারবেন না।
মধ্যে মধ্যে গুপ্তচর বলে মনে হত। আবার অনেক সময় অপরাধী ধরনের কিছু বলে মনে হত। ট্রুপেন্স বলল।
কথাটা বলে ট্রুপেন্স আইজ্যাকের দিকে আশান্বিত হয়ে তাকাল।
বুড়ো আইজ্যাক ঝুঁকে পরে কাঁচের একটা টুকরো তুলে নিয়ে ট্রুপেন্সকে বলল এটা যদি তোমার গায়ের ত্বকের মধ্যে ঢুকে যায়। তা হলে তুমি কি রকম অনুভব করবে?
এরপর ওরা দুজনেই নিচে নেমে এল। বুড়ো আইজ্যাক বলল, তাহলে তুমি বলছ ওরা তাই ছিল তাই তো?
ট্রুপেন্স হ্যাঁ বলতে আইজ্যাক বলল, কেকে.? ট্রুপেন্স এই শুনে আইজ্যাকের দিকে তাকালো এই কে.কে. শব্দটা ও বুঝতে পারল না। এই ইংরেজী সট বর্ণ তার কানে অর্থহীন শোনালো। ও জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি যেন বললে?