কথাগুলি একটানা বলে গিয়ে মিঃ রবিনসন একটু থামলেন। একটু কেশে নিয়ে আবার শুরু করলেন। সম্পূর্ণ আস্থাই প্রতারণা করা। বাণিজ্যিক পৃথিবীতে গোয়েন্দা নিজে রাজনৈতিক জীবনে অহরহ এটাই ঘটে। একজন সৎ ভালোভাবে মূর্তির মানুষ সর্বদাই সন্দেহের উর্ধে থাকে। সেই মানুষটিই কিন্তু দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার কাজে সামিল হোন। তাকে কেউই সন্দেহ করতে পারে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে তোমার গ্রাম এরকমই একটা দলের প্রধান কার্যালয় হয়ে উঠেছিল। মিঃ বেরেসফোর্ড খুব চমৎকার গ্রাম সেটা। অনেক চমৎকার ব্যক্তি ওখানে বাস করত সেই সমস্ত ব্যক্তি প্রত্যেকেই দেশপ্রেমিক। তারা কোন না কোনভাবে যুদ্ধে কাজ করেছে। নৌবাহিনীর একজন চমৎকার দেখতে কমাণ্ডার ছিলো। ভালো পরিবারের তিনি সদস্য ছিলেন। তার বাবা ওকে দারুণ ভালোবাসতেন। অনেকে জানত না যে রাসায়নিক যুদ্ধে তার ট্রেনিং রয়েছে যাকে বলে বিষয় গ্যাসযুদ্ধ।
আর পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে মিঃ কেন বন্দরের কাছে একটা থাকত।
এসব হয়তো তুমি জানতে চাও না মিসেস বেরেসফোর্ড। তবে তোমাকে আগে ঘটনার প্রেক্ষাপটটা জানাতে হবে। মেরি জর্ডনকে ওখানে পাঠানো হয়েছিল কিছু খুঁজে বের করার জন্য।
আমার সময়ের আগে তার জন্ম। আমি যখন আমাদের জন্য ওর কাজের গল্প শুনলাম আমি ওর প্রতি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মেরি ছিল ওর খৃস্টান নাম যদিও সর্বদাই মলি নামে পরিচিত ছিল। ও খুব ভালোই কাজ করত। তবে ওর অত অল্পবয়েসে মারা যাওয়াটা একটা মর্মান্তিক ঘটনা। পেছনের দেওয়ালে একটা বাচ্চা ছেলের ছবি টাঙানো ছিল। ওটা দেখিয়ে মিঃ রবিনসন বললে, হা, তুমি ঠিকই চিনতে পেরেছে। ঐ হল আলেকজাণ্ডার পারকিনসন। যখন মারা যায় তখন ওর বয়স মাত্র এগাররা। মলি ওরই নার্সারি গভর্নের্স হিসাবে ঐ পরিবারে যায়। এটা ছিল মলির পক্ষে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে সবথেকে সুবিধাজনক অবস্থান, তবে একটা কথা বলে নেওয়া ভালো যে এসব ব্যাপারে পারকিনসন পরিবার একেবারে জড়িত ছিল না। কিন্তু এ বাড়িতে অন্যান্য কিছু অতিথি এবং বন্ধু ঐ দিন উপস্থিত ছিল। তোমার স্বাক্ষর কাছে আদমসুমারিটি কিন্তু ঐ দিনটিরই। ঐ দিন যারা ঐ বাড়িতে রাত কাটিয়েছিল তাদের প্রত্যেকেরই নাম ওতে রয়েছে সেই নামগুলির মধ্যে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জড়িত স্থানীয় ডাক্তারের মেয়ে এসেছিল তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে। তোমাকে বলা এই কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জড়িত ব্যক্তিটিই ছিল ওই ডাক্তার তা ডাক্তারের সেই মেয়েটি দুজন বন্ধুকে সঙ্গে করে এনেছিলেন পারকিনসন পরিবারকে বলে সেদিন ওরা সেখানে থেকে গিয়েছিল। ঐ বন্ধুগুলির সবই ঠিক ছিল। কিন্তু মেয়েটির বাবা পরে বুঝতে পেরেছিল যে অঞ্চলে সেসব ঘটছে তাতে ভীষণভাবে জড়িত ওরা সবাই। মেয়েটি নিজে পারকিনসন পরিবারকে কয়েক সপ্তাহ আগে বাগানের কাজে সাহায্য করেছিল। এবং পালং শাক এবং ফক্সগ্লোভ কাছাকাছি চাষ করার জন্য সেই দায়ী ছিল।
এই দুর্ঘটনার দিনে মেয়েটিই বিষাক্ত গাছটি সমেত পালং শাক তুলে নিয়ে এসে রান্না ঘরে রেখেছিল।
ইতিহাস তার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। মিসেস বেরেসফোর্ড। ঝোঁপের অন্তরাল থেকে তোমায় গুলি করা হল। পরে সেই আততায়ী মিস মুলিন্সের পরিচয়ে তোমার কাছে বসে তোমার কফির কাপে বিষ মিশিয়ে দিল। আমার মনে হয় মেয়েটি সেই অপরাধী ডাক্তারের নাতনি গোছের কেউ হবে। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরর আগে সে মোনথানকেনের শিষ্য বলে মনে হয়। তোমার কুকুরটি কিন্তু শত্রুকে শনাক্ত করতে পেরেছিল। আর সম্ভাব্য ঐ মেয়েটিই আইজ্যাককে মাথায় মুগুর মেরে খুন করেছে।
ট্রুপেন্স জিজ্ঞাসা করল, যে ডাক্তারটি কি জানতে পেরেছে মেরি জর্ডন কি করেছে?
জবাবে মিঃ রবিনসন জানালো যে, না ডাক্তার তা জানত না কিন্তু কেউ একজন জানত। নৌবাহিনীর কমাণ্ডারটি পরিকল্পনা অনুযায়ী মেরির সঙ্গে কাজ করত। গুরুত্বপূর্ণ খবর সরবরাহ করার জন্য সপ্তাহে একদিন ছুটির নাম করে লণ্ডনে যেত।
কথাগুলি বলে মিঃ রবিনসন থামলেন। মিঃ পাইকঅ্যাজনের দিকে তাকালেন। মিঃ পাইকজন একটু কেশে তারপর শুরু করলেন।
কিন্তু ইতিহাস তার পুনরাবৃত্তি ঘটায় মিসেস বেরেসফোর্ড। প্রত্যেকেই তা আগেই হোক বা পরেই হোক জানতে পারে। হলকোয়ে সম্প্রতি একটা নিউক্লিয়াস সংস্কার করা হচ্ছে আর সম্ভবত সেই কারণেই মিস মুলিন্সকে ফিরে আসতে হল। আবার নির্দিষ্ট লুকানোর জায়গাটি ব্যবহৃত হতে লাগল। গোপন সভা হতে লাগল। আবার একবার অর্থ তাৎপর্যময় হয়ে উঠল-তা কোথা থেকে আসে কোথায় যায়। এখানে মিঃ রবিনসনকে ডাকা হল। এবং আমাদের পুরানো বন্ধু বেরেসফোর্ড আমাদের সব গুরুত্বপূর্ণ খবর দিল। আমরা যা সন্দেহ করেছিলাম। তার সঙ্গে মিলিয়ে নিলাম। বুঝলাম ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করতে আবার দেশের কিছু রাজনীতিবি? সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
তুমি কি বলতে চাও ব্যাপারটা এখনো ঘটে চলেছে? ট্রুপেন্সের চোখদুটি বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল।
ভাল কথা তোমাদের জানানো দরকার যে এ ব্যাপারে তোমাদের অবস্থান রয়েছে। হা ঐ কাঠের ঘোড়াটিই অর্থাৎ লেখার নির্দিষ্ট জায়গা ছিল।
চমঙ্কার জিনিষ এই ঘোড়াটা কর্নেল পাইকঅ্যাজন বলল। এমন কি টুলভও সাহায্য করেছে। আমার মনে হয় ট্রুপেন্স বলল। কিন্তু আমি বলতে চাই যদি এসব এখন চলে। তুমি নিশ্চিত থাকো ইংল্যাণ্ডের ঐ অঞ্চলটির সংশোধিত ঘুঘুর বাসা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।