***
ট্রুপেন্স বাড়ি ফিরে অ্যালবার্টের কাছে টমির কথা জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারল টমি ওপরতলায় রয়েছে।
ওপরে এসে ট্রুপেন্স দেখল টমি বই নাড়াচাড়া করছে। এবং দেখছে। টমি একটা বই তুলে ট্রুপেন্সকে বলল এবার্ট লুইস ফিটা জনসনের আরো কয়েকটা বই পেয়েছে। তার সব কটাতে প্রথমটিরই মত প্রথম পাতায় আলেকজাণ্ডার পারকিনসন নামটি কাঁচা হাতে লেখা। ও জানালো। মনে হয় ঠাকুমা বা সেরকম কারো থেকেই বাচ্চাটা এই বইগুলো উপহার পেয়েছে।
ভালো কথা, ট্রুপেন্স বলল, এ ব্যাপারে তুমি কি বলছ?
আমি বাচ্চাটার কবর খুঁজে পেয়েছি? টমি ওকে অবাক করে দিয়ে বলল।
টমি বলল আবিষ্কারটি সে চেষ্টা করে করেনি। হ্যানিবলকে তাড়া করতে গিয়েই সে ওটা খুঁজে পেয়েছে।
মাত্র চৌদ্দ বৎসর বয়স, ট্রুপেন্স বলল, হতভাগা।
হ্যাঁ, খুবই দুঃখের ব্যাপার, আর…।
ট্রুপেন্স বলল, তোমার মাথায় কিছু ঘুরছে।
ভালো কথা, ট্রুপেন্স তুমি মনে হয় আমাকে সংক্রামিত করছ। প্রবলভাবে উৎসাহী হলে পর সেটা তোমার একলা করা উচিত না। সেই ব্যাপারে তোমার অন্য একজনকে সঙ্গে নেওয়া উচিত উৎসাহতে অংশগ্রহণ করার জন্য।
ওর কথাগুলি বুঝতেই পারল না সেটা ট্রুপেন্স জানাল। আলেকজাণ্ডার পারকিনসন রীতিমত বিপন্ন ছিল টমি জানাল। ছেলেটা হয়ত মজা করার জন্যই একটা সংকেত তৈরী করেছিল কোন একটা গোপন খবরকে প্রকাশ করবার জন্য। এই ব্যাপারটা হয়ত সত্যিই সত্য। মেরী জর্ডন স্বাভাবিক ভাবে মারা যায়নি বলে এর পরিণতি হিসাবে আলেকজাণ্ডারকে মরতে হয়েছিল।
তার মানে তুমি মনে কর…। ট্রুপেন্স বিস্ময়ের ঘোরে কথাটা শেষ করতে পারল না।
ট্রুপেন্স বলল, মাত্র চৌদ্দ বছর বয়স ছেলেটার। সে যে কিভাবে মারা গেছে সেটা পর্যন্ত সমাধি প্রস্তরে লেখা নেই। হয়তো সে এমন কিছু ব্যাপার জেনে ফেলেছিল যেটা কোন একজনের পক্ষে ক্ষতিকারক এবং যেটা তাকে মরতে বাধ্য করেছিল।
ট্রুপেন্স উত্তেজিত হয়ে বলল, তার মানে তুমি বলতে চাইছ ওকে কেউ খুন করেছে।
আমি কি আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারি ম্যাডাম?
ব্রিটাইক নামে মহিলাটি সবসময় কোন না কোন সমস্যা নিয়ে আসে। আবার হয়ত কোন সমস্যায় পড়েছে তাই এসেছে। গতকালও মহিলাটি এসেছিল।
ট্রুপেন্স ওপরতলার বইয়ের ঘরটা পরিষ্কার করে নামছিল। সেই সময় তার মাথায় হোয়াইট এলিপেন্ট সেল-এ একটি খুব ভালো চা-এর আসরে নিমন্ত্রণে যাওয়ার কথা ঘুরছিল।
এটা ঠিক সমস্যা নয়। ব্যাপারটা হয়ত আপনি শুনতে পছন্দ করতে পারেন।
একথা বলল বটে ব্রিটাইক, ট্রুপেন্সের মনে হল এটাও হয়ত অন্য একটা সমস্যা।
ব্রিটাইক জানালো যে তিনি আগের দিন মেরী জর্ডনের কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন কিনা।
তখন ট্রুপেন্সের মনে পড়ল আগের দিন তিনি যখন এসেছিলেন তখন তাকে মেরী জর্ডনের নাম শুনেছে কিনা জিজ্ঞাসা করেছিল।
ব্রিটাইক জানালো সেও লোকের মুখে নামটি শুনেছে। তাছাড়া পোস্টঅফিসে কাজ করা ফিটা জনসন নামেও একজন ছিল। সে অনেক দিন আগের কথা।
ট্রুপেন্স বলল, জনসন নামে একজন পুলিসও ছিল। কার মুখে যেনে শুনলাম।
হ্যাঁ, ভালো, সে যাইহোক আমার এই বন্ধু গেপ্তা, কি যেন ওর নাম…
ট্রুপেন্স বলল, ওর নামটা মিসেস গ্যারিসন।
ব্রিটাইক জানাল যে তার নাম যাইহোক না কেন সে ওকে জানিয়েছে যে সে মেরী জর্ডনের নাম শুনেছে। বহুদিন আগে মেরী জর্ডন এখানে থাকত।
মানে এই বাড়িতে? ট্রুপেন্স বলল, একটা দুঃসংবাদ যে তার একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল। নয়ত সেই সেইরকম কিছু একটা ঘটে ছিল।
তার মানে তুমি বলতে চাও মহিলাটি যখন মারা যায় তখন এই বাড়িতেই ছিল। মহিলাটি কি তাহলে পরিবারের একজন সদস্য ছিল?
আমার মনে হয় পরিবারটি পার্কার বা ঐরকম কোন নামের। পার্কার বা পারকিনসন এই রকম। মনে হয় মহিলাটি কেবল থাকতেন। মিসেস গ্রিফিন ব্যাপারটি জানে।
ট্রুপেন্স জানাল যে সে মিসেস গ্রিফিনকে চেনে। তার বাড়িতে আজই তার চা-এর আসরে নিমন্ত্রণ রয়েছে।
ট্রুপেন্স বলল, ভদ্রমহিলা খুবই বয়স্ক এবং স্মৃতিশক্তি খুবই প্রখর। পারকিনসন পরিবারে মনে হয় একটা ধর্মপুত্র ছেলে ছিল।
ছেলেটার খ্রীস্টান নাম ছিল মনে হয় অ্যালেক অথবা অ্যালেক্স এরকম কিছু একটা ছিল।
ছেলেটা মনে হয় একজন সৈনিক, কিংবা নাবিক কিংবা সেরকম কিছু হয়ে গেল।
সেসব কিছুই সে হয়নি। ছেলেটা মারা গিয়েছিল এবং তাকে এখানে কোথাও কবর দেওয়া হয়েছিল।
ট্রুপেন্স জানতে চাইল ছেলেটার কি অসুখ হয়েছিল। এবং কথা প্রসঙ্গে জানতে পারল তার লিউকোমিয়া হয়েছিল। ছেলেটা মারা যাওয়াতে ট্রুপেন্সের খুব দুঃখ হয়েছিল।
ব্রিটাইক বলল, ছেলেটার বয়স খুবই কম ছিল মনে হয় তেরো কি চৌদ্দ। আশেপাশের কোন একটা স্কুলে হয়ত পড়ত।
কথাবার্তা শেষ করে ট্রুপেন্স সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে গেল। তার মাথায় কতগুলি কথা ঘুরছিল। পরে চা-এর আসরে গিয়েও ব্যাপারটি সম্বন্ধে ট্রুপেন্স খুব একটা বেশী জানতে পারল না। একদিন বিকেলে ট্রুপেন্স পোস্টঅফিসে হাজির হল। সেইসময় পোস্টঅফিস প্রায় ফাঁকা মাঝে মাঝে দুএকজন বাইরে রাখা বাক্সটায় চিঠি ফেলে যাচ্ছিল, আবার কেউ কেউ স্ট্যাম্প কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ট্রুপেন্স ভাবনাচিন্তা করে এইরকম একটা সময় বেছে নিয়েছিল। ট্রুপেন্সের ব্রিটাইকের কাছ থেকে শোনামাত্র গেণ্ডাকে দূর থেকে সনাক্ত করতে অসুবিধা হল না। অল্প সময়ের মধ্যে ওকে সাহায্য করার অজুহাতে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিয়েছিল ট্রুপেন্স।