অ্যালবার্ট ঘাড় ঘুরিয়ে পোষাক পরার ঘরের দরজাটার দিকে তাকাল।
আমি সব ঠিক দেখেছি। ফাঁকের মধ্যে দিয়ে আমি মহিলাটিকে লক্ষ্য করছিলাম। হা ও ম্যাডামের কাপে কি যেন দিল। খুবই কৌশলে।
মিস মুলিন্স বলল, তুমি কি বলছ বুঝতে পারছি না। আমি অবশ্যই চলে যাবো? আমার একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা।
ও দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল। হ্যানিবল কেবল একবার দেখে নিল। পরক্ষণেই তার পেছন পেছন দৌড়াল। ক্রিসপিন তখন কুকুরটার পেছন পেছন দ্রুত পায়ে নেমে গেল।
আশাকরি মহিলাটি একজন ভালো দৌড়বীর, ট্রুপেন্স বলল। কেননা তা না হলে হ্যানিবল ওকে ধরে ফেলত। আমার মনে হল ও একজন ভালো পাকা রাস্তার কুকুর।
ট্রুপেন্স এই হল মিঃ ক্রিসপিন। মিঃ ফলমন আমাদের কাছে পাঠিয়েছে, সঠিক সময়েতেই ও আমাদের কাছে এসেছে। কি তাই আসেনি কি? আমার মনে হয় কি ঘটতে পারে তা দেখার জন্য ও অপেক্ষা করছে। ঐ কাপটা ভাঙ্গা না কিংবা ঐ কফির কোন অংশই তুলে ফেলো না। অন্তত যতক্ষণ না আমরা একটা এনে ওগুলো না জুড়িয়ে দিচ্ছি। ওটা বিশ্লেষণ করা হবে, দেখা যাবে কাপের মধ্যে যে বস্তুটি দেওয়া হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে সেটি কি? সবথেকে ভালো তুমি ড্রেসিং গাউনটা পরে নিচে নেমে এসো। লানচ করার আগে আমরা সেখানে বসে একপ্রস্থ কফি পান করব।
ট্রুপেন্স বলল, এসবের অর্থ আমরা কখনই জানতে পারব না। বুঝতে পারছি না আমাদের চারপাশে কি সব ঘটছে।
কথাটা বলে ট্রুপেন্স বিষণ্ণভাবে মাথা নাড়ল। কিছুই যেন ভালো লাগছে না। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না, চেয়ার থেকে অগ্নিকুণ্ডের দিকে এগিয়ে গেল।
ট্রুপেন্সকে বেশি নড়াচড়া করতে বারণ করা হয়েছে। টমি বলল, ওতে কাঠ দিতে হবে। বলেই বলল দাঁড়াও দাঁড়াও। আমাকে করতে দাও। তোমাকে না বলা হয়েছে বেশী চলাফেরা করো না।
আমার কাপটা এখন পুরোপুরি ঠিক হয়ে গেছে। ট্রুপেন্স বলল, যে কেউ ভাববে এটা আমি ভেঙ্গেছি। কিংবা সে রকম কিছু বল একটা জঘন্য লাগল।
হ্যানিবল, একটা ভালো কুকুর ট্রুপেন্স বলল, হ্যাঁ ও আমাদের ইঙ্গিত দিয়েছিল। ও নিশ্চিত ভাবেই ইঙ্গিত দিয়েছিল ওর ঘ্রাণশক্তি প্রবল। ও ঠিক চিনতে পেরেছে।
কিন্তু আমি বলতে পারি না যে আমার ওরকম কোনো ঘ্রাণ শক্তি আছে। আমি মিস মুন্সিকে সরল মনে এখানে এনেছিলাম। একমাত্র ফলমনের নাম উল্লেখ করা ব্যক্তিদেরই আমরা কাজে নেব ভেবেছিলাম। সে যাই হোক মিঃ ক্রিসপিন কি আর কিছু তোমায় বলেছে? আমার সন্দেহ হচ্ছে। যে ওর নাম ঠিক মিঃ ক্রিসপিন না।
সম্ভবত নয়? টমি বলল ও কি কিছু গোয়েন্দাগিরি করতে এখানে এসেছে? এখানে আমরা অনেকেই আছি।
না, টমি বলল, ঠিক গোয়েন্দাগিরি নয়। আমার মনে হয় নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে ওকে পাঠানো হয়েছে। তোমাকে দেখাশোনা করার জন্য।
ট্রুপেন্স বলল, আমাকে দেখাশোনার জন্য। আর তুমি? এখন নোকটা কোথায়?
মনে হচ্ছে মিস মুলিন্সের সঙ্গে হিসাব মেটাচ্ছে। সত্যিই কি অদ্ভুত ব্যাপার। বিস্মিত কণ্ঠে বলল ট্রুপেন্স। একটু থেকে পরক্ষণে সে যাবার ব্যাপার দু-একটা মন্তব্য করল। টমি জানালো যে তার এই যাবার ব্যাপারে এই উৎসাহ দেখে সে খুব খুশী। তখন ট্রুপেন্স বলল। আমি আজ অবধি কখনও অসুস্থ হয়নি। আমি আহত হয়েছি। এটা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।
ভালোকথা টমি বলল। সে যা হোক। আমি যেমনটা বুঝতে পেরেছিলাম তোমারও বুঝতে পারা উচিৎ ছিল যে হ্যানিবল চীৎকার করেই সেদিন আমাদের জানিয়ে দিয়েছিল যে, শত্রু আমাদের কাছেই রয়েছে। ঝোঁপের ভেতরে তোমার অবশ্যই দেখা উচিৎ। মিস মুন্সি হল সেই ব্যক্তি যে পুরুষ সেজে ঝোঁপের আড়াল থেকে তোমাকে গুলি করে ছিল।
একটু চুপ থেকে টমি বলল, আমার ধারণাই ঠিক। আমি ভেবেছিলাম সম্ভবত বেশী দিন মহিলাটি ঘটনাস্থল থেকে সরে থাকতে পারবে না। তাকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত দিয়ে যেতে হবে এই কারণে যে সে দেখতে গিয়েছিল যে গুলিটা ছুঁড়েছে সেটা কতটা কার্যকরী হয়েছে। সে দেখতে চেয়েছিল তুমি বিছানায় শয্যাশয়ী হয়েছে কিনা?
আর সেইজন্য ও ফিরে এলো। ট্রুপেন্স বলল, আমাদের ব্যবস্থাটাও সুন্দর করা হয়েছিল। টমি বলল, অ্যালবার্ট মহিলাটির প্রতিটি পদক্ষেপ ও নজরে রাখছিল ভালো করে। মহিলাটির, যা যা করার ছিল। অ্যালবার্ট তার সামান্যটুকুও কাজকর্ম সে নিজের চোখ দেয়নি।
এবং তার সঙ্গে ট্রুপেন্স বলল, আমার এখানে একটা ট্রেতে করে এক কাপ চা এনে দিল মহিলাটি। সঙ্গে আর একটা কাপ দিয়ে দিয়েছিল।
তুমি কি মুলিন্সকে অথবা ডোডো যেমনটা ক্রিসপিন ডাকছিল ওকে দেখেছো কি তোমার কাপে কিছু মিশিয়ে দিতে?
না, ট্রুপেন্স বলল। আমি অবশ্যই স্বীকার করব যে আমি তো দেখিনি। শোন, দেখলাম পায়ে কি যেন বেধে গিয়ে ও পড়ে গেল ঐ টেবিলটার ওপর। আমাদের কফি খানিকটা সমেত। বারবার আমার কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগল। অবশ্যই আমার মাথাটা তখন ছিল সেই ভাঙ্গা কফি কাপটার ওপর। দেখছিলাম ওটাকে জোড়া দেওয়া যায় কিনা। ফলে ওর দিকে আমি লক্ষ রাখিনি।
অ্যালবার্ট দেখেছিল, টমি বলল, ড্রেসিং রুমের দরজার ফাঁক দিয়েও তা দেখেছিল। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে ট্রুপেন্স বলল আর সেই সঙ্গে ও হ্যানিবলকে নিয়ে গিয়ে কল ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজাটা খুব আলগা করে দিয়ে রেখেছিল। আর তুমি তো জানো দরজা খোলায় আমাদের হ্যানিবল খুবই ভালো পারে। অবশ্য অ্যালবার্ট যদি দরজাটায় পুরোপুরি খিল লাগিয়ে দিত তাহলে তা খোলা সম্ভব হত না। তা সে যা হোক ধাক্কা দিয়ে খিল খুলে আমাদের হ্যানিবল বাঙলার বাঘের মতই দৌড়ে এসেছিল।