হ্যাঁ, মরক্কোর অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোও ঘুরে নেবেন।
সমস্ত জায়গাতেই তিনি প্লেনে যাবেন। কিন্তু মিসেস বেটারটনকে সম্পূর্ণ এক অজানা জগতের পথে পা বাড়াতে হবে।
–হিলারী বললো, এ সবের মধ্যে আমি কিভাবে আসছি তা আমার মাথায় ঢুকছে না।
জেসপ হাসলেন। এ ব্যাপারে আপনি আসছেন, কারণ আপনার মাথায় একরাশ সুন্দর সোনালি চুল আছে বলে। হ্যাঁ, চুল। মিসেস বেটারটনের মাথায় সোনালি চুল প্রত্যেকটি লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। আপনি হয়তো শুনেছেন–আপনি যে প্লেনে এসেছেন ঠিক তার আগের প্লেনটা নামার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে চুরমার হয়ে গেছে।
জানি, আমার ঐ প্লেনে আসার কথা ছিলো।
–যাক, মিসেস বেটারটনও ঐ প্লেনে ছিলো। মারা যাননি। সাংঘাতিক আহত অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ডাক্তাররা বললেন, কাল সকাল পর্যন্ত তিনি বাঁচবেন না।
হিলারী জিজ্ঞাসু চোখে তাকালেন।
এবার আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, জেসপ বললেন, এবার প্রস্তাব করছি, আপনি মিসেস বেটারটনে রূপান্তরিত হোন।
–কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব। ওরা তো জেনেই ফেলবে আমি মিসেস বেটারটন নই।
–সেটা অবশ্য সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনি যাদের ‘ওরা বললেন, তাদের ওপর। আসলে ওরা কথাটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সত্যিই কি এমন কেউ আছে যাদের আমরা ওরা বলে ধরে নিতে পারি? লোকগুলোর নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই তাদের ব্যবস্থার প্রয়োজন। সুতরাং এক্ষেত্রে মিসেস বেটারটনের এই বেড়াতে বেরোনোর যদি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য থাকে, এবং তা পূর্বপরিকল্পিত হয় তাহলে জানার কথা নয়। তারা শুধু কোনো এক নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট এক মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে নিজেদের আড্ডায় ফিরে যাবে। মিসেস বেটারটনের দেশভ্রমণের ছাড়পত্রে যেরকম বর্ণনা আছে–সেটাই ওদের যথেষ্ট।
-কিন্তু এখানকার পুলিস মহল? তারা নিশ্চয়ই
জেসপ হেসে বললেন, এদিকটা সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। ফ্রান্স নিজেও তার অনেকগুলি কৃতী বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদকে হারিয়েছে। সুতরাং এঁরা আমাদেরকে সহযোগিতাই করবে। ব্যাপারটা এরকম হবে–মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আঘাত লাগায় মিসেস বেটারটনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঐ প্লেনের আরেকজন যাত্রী, ক্র্যাভেনকে ঐ হাসপাতালেই ভর্তি করা হবে। দু-একদিনের মধ্যেই মিসেস ক্র্যাভেন হাসপাতালেই মারা যাবেন এবং মিসেস বেটারটনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। যদিও মিসেস বেটারটন তখনও সামান্য স্মৃতিবিভ্রমে ভুগবেন, কিন্তু তার ভ্রমণসূচী অনুযায়ী চলার কোনো অসুবিধে হবে না। মাথায় আঘাত লাগলে স্মৃতি লোপ পেতে, চালচলনে, কথাবার্তায় অনেক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
তার মানে–পাগলামি।
-তা তো বটেই। এটাই আপনার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আমাদের সন্দেহ যদি সত্যি হয় আর আপনি যদি এই কঠিন দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ঠিকমতো এগোতে পারেন, তাহলে আপনি বাজিমাত করতে পারবেন। এবার আপনার ওপর নির্ভর করছে। একাজ করতে আপনি ইচ্ছুক কিনা।
আচমকা হিলারী হেসে উঠলো।
–তাহলে রাজী?
নিশ্চয়ই।
.
০৪.
হিলারীর হাসপাতালের ভেতরটায় শীত শীত করছিলো। একটা শয্যার পাশে লোহার চেয়ারে সে স্থির হয়ে বসেছিল।
মাথায় পট্টিবাঁধা অচেতন অবস্থায় অলিভ বেটারটন শুয়ে আছেন। শয্যার পাশে সেবিকা এবং ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তারবাবু জেসপের দিকে তাকিয়ে বললেন, আর বেশিক্ষণ বাঁচানো যাবে না। নারী ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে।
–আর একবারের জন্যও কি জ্ঞান ফিরবে না?
ডাক্তার বললেন, ঠিক বলা যাচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে একবার ফিরলেও ফিরতে পারে।
–আর কিছুই আপনাদের করার নেই–মানে কোনো উত্তেজক ওষুধ?
মাথা নেড়ে অক্ষমতা জানিয়ে বেরিলয়ে গেলেন ডাক্তার। জেসপ হিলারীকে ইশারায় ডেকে বললেন, ডাক্তার যা বলে গেলেন, শুনেছেন তো?
-হ্যাঁ, কিন্তু কি জিজ্ঞেস করবো?
-যদি জ্ঞান ফেরে যে-কোনো রকম খবর যদি আপনি নিতে পারেন–যেমন, কোনো টুকরো কথা, কিংবা ভুল বলতে বলতে কোনোরকম সঙ্কেত বা কোনোরকম খবর পাঠাতে চায়–যাহোক বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই?
হিলারী হঠাৎ আবেগপ্রবণ হয়ে বললো–একজন মৃত্যুপথযাত্রীর শেষ ইচ্ছাটাকে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করবো, তাই চাইছেন আপনি?
বেশ, তাই যদি আপনার মনে হয় তবে আপনি আপনার খুশিমত নিশ্চয় প্রশ্ন করতে পারেন। হিলারী শয্যার পাশে ফিরে এলো। এ নারী তার প্রিয় মানুষটার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলো আর…। ভাবতে ভাবতে সময় কেটে গেলো। নার্স ঘড়ি দেখে বললো মনে হচ্ছে শেষ সময় হয়ে আসছে। আমি ডাক্তারকে ডেকে আনছি।
মিসেস বেটারটনের জ্ঞান ফিরবার পর তার চোখ পড়লো হিলারীর দিকে। উনি জিজ্ঞাসা করলেন–কোথায়…? ডাক্তার রোগীকে দেখতে দেখতে বললেন, আপনি হাসপাতালে আছেন মাদাম। ঐ প্লেনে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিলো।
–ওই প্লেনে?…ওই প্লেনে? ফিসফিস করে বারবার বলতে লাগলেন।
–ক্যাসাব্লাঙ্কায় কারো সঙ্গে কি আপনি দেখা করতে চান, মাদাম! কোনো খবর দেবার আছে?
চোখ তুলে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললেন, না। চোখ সরিয়ে আনতে হঠাৎ হিলারীর দিকে তাকিয়ে বললেন-কে-কে?
ওর মুখের ওপর ঝুঁকে পড়লো হিলারী। নম্রস্বরে বললো, আমিও ইংল্যান্ড থেকে প্লেনে এসেছি। যদি কোনোরকম আপনাকে সাহায্য করতে পারি–আমাকে বলুন।