–ভদ্রলোক, জেসপের কাছ থেকে কিছু শোনার আশায় উদগ্রীব চোখে তাকিয়ে থাকলেন।
জেসপ ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। উনি জিজ্ঞেস করলেন–টম কেন উধাও হলেন, সম্ভবতঃ আপনি কিছু জানেন, তাই না?
জেসপ তারিফ না করে পারলেন না যে ভদ্রলোক জেসপকে প্রশ্ন করছেন। জেসপ হেসে উত্তর দিলেন, সত্যই আমরা কিছু জানি না, এ বিশ্বাস রাখতে পারেন।
-কিন্তু কিছু একটা সন্দেহ তো করছেন?
জেসপ বললেন, তা অবশ্য ঠিক। একটার পর একটা ঘটনা যেভাবে ঘটছে..
–আমি জানি। এক নিশ্বাসে অনেক ঘটনার উল্লেখ করলো ভদ্রলোক। এবং তারপর বললো, এঁরা সবাই বিজ্ঞানী। হ্যাঁ এঁরা কি লৌহযবনিকার অন্তরালে সবাই স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছেন?
আমার এ ব্যাপারে নাক গলানো উচিত নয়। আমার মাথাব্যথা শুধু বেটারটনের জন্য। আপনার দুশ্চিন্তার কারণটা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি এজন্য আমি দুঃখিত। আমি ভেবেছি বেটারটনের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক অনেক দূরের। তাকে কোনোদিন চোখেও দেখেননি আপনি।
আসলে কি জানেন, পোল্যান্ডের লোকেরা সংসারটাকে খুব বেশি ভালোবাসে। সংসারের প্রতি দায়ও অনেক। উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালো। আপনার সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত।
জেসপও উঠে দাঁড়ালেন। আপনাকে কোনো কিছু সাহায্য করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। যদি কোনো খবর পাই আপনাকে কোথায় জানাবো?
-মার্কিন দূতাবাসের ঠিকানায় দিলেই আমি পাবো। ধন্যবাদ বলে উনি বেরিলয়ে গেলেন।
ভদ্রলোক বেরিলয়ে যেতে কর্নেল হোয়ারটনকে ঘরে আসতে বললেন।
হোয়ারটন ঘরে ঢুকতে জেসপ বললেন, শেষপর্যন্ত ব্যাপারটা একটু এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
কিরকম?
–মিসেস বেটারটন বাইরে যেতে চান।
হোয়ারটন বললেন, কর্তার সাথে দেখা করতে?
–তাই তো মনে হচ্ছে। সঙ্গে ডাক্তারের একটা চিঠিও এনেছিলেন, বেশ জমেছে। আমরা সত্যি ঘটনাকে কখনও গুরুত্ব দিই না। ভদ্রমহিলা চোখে ধুলো দিতে ওস্তাদ।
ওর কাছ থেকে আর কোনো কথা বার করতে পারোনি।
–খুবই সামান্য। হা–কী হয়েছে?
–বেটারটন এই মধ্যাহ্নভোজনের কথা বলেনি।
এই ক্যারল স্পীডার একবার নাজেহাল হয়েছিল। বেটারটনের উধাও হওয়ার ব্যাপারে আমরা এই একজনকে পেলাম।
মিসেস বেটারটনকে বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পারে এমন কারোর সাথে যোগাযোগ আছে কি?
-ব্যক্তিগত যোগাযোগ নেই। বেটারটনের প্রথম পক্ষের বউয়ের পিসতুতো ভাই যে পোল্যান্ডে থাকে সেই ভদ্রলোক এসেছিলেন। অনেক কথা খুঁটিয়ে জানতে চেয়েছিলো।
–কিরকম মনে হলো তাকে?
জেসপ বললেন, আসল লোক বলে মনে হলো না। তার হাবভাব দেখে কেমন যেন মেকী মেকী মনে হলো।
-মিসেস বেটারটনকে বাইরে পাঠাবার মূলে এই লোকটা থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে?
হতেও পারে, লোকটা আমায় যেন কেমন হতভম্ব করে দিয়েছে।
ওর পেছনে টিকটিটি লাগাবার কথা ভেবেছ কি?
–তাই তো মনে হচ্ছে। হোয়ারটন বলে উঠলেন, বেশ, এবার কিভাবে এগোবে?
প্রথমে জানেত-এর কথাই ভাবছি, তারপর স্পেন অথবা মরক্কো।
হোয়ারটন ফাইলের পাতা ওল্টাতে লাগলেন। এবারেও যদি কিছু না করতে পারি
জেসপ চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বললেন, আমিও কদিন একটু ঘুরে আসি।
.
০৩.
হিথরো বিমানবন্দরের লাউঞ্জে বসে থাকা যাত্রীরা সব উঠে দাঁড়ালেন।
হিলারীও কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে চললো। তাহলে সে পালাতে পারছে। এক অজানা যুগের গুঞ্জরণ নিয়ে নির্দষ্ট আসনে গিয়ে বসলো হিলারী। মানসিক যন্ত্রণা–এই প্রথম মুক্তির এক রিনরিনে আবেশ সে অনুভব করতে পারলো।
বিমানের ছোট চাকায় তখন গতি এসেছে। বিমানটা যখন শেষ সঙ্কেতের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকলো তখন হিলারীর মনে হলো, প্লেনটা যদি মাটি ছেড়ে আর কোনোদিনও না ওড়ে, যদি আচমকা ধাক্কা খেয়ে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়–তাহলে সবকিছু শেষ হয়ে যায়, নিমেষে সব দুঃখ-যন্ত্রণা সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ইঞ্জিনটা গর্জন করে উঠলো তারপর তাকে নিয়ে প্লেনটা দ্রুত, আরো দ্রুত ছুটতে শুরু করলো।
ওরা অনেক উঁচুতে উঠতে লাগলো। হিলারীর মনে হতে লাগলো নিচে সবকিছুই খেলনার মতো দেখাচ্ছিল। অনেকটা যাওয়ার পর হিলারী চোখ বুজলো। সে ইংল্যান্ড ছেড়েছে, নাইজেলকে ছেড়েছে। ব্রেন্দার কবরকেও ছেড়ে এসেছে। সবকিছুকে পেছনে ফেলে এসেছে। সে এসব চিন্তা করে ঘুমিয়ে পড়লো।
হঠাৎ ঘুম ভাঙলে হিলারীর খেয়াল হলো, প্লেনটা নিচের দিকে নামছে, প্যারিস। সোজা হয়ে বসে সে হাতব্যাগটা টেনে নিল, কিন্তু বিমানসেবিকা বললো কুয়াশা থাকার জন্য তারা ব্যুভেতে অবতরণ করছে।
কুয়াশার মধ্যে যাত্রীদের একটা পুরোনো কাঠের বাড়িতে এনে তোলা হল। একজন বললো, যুদ্ধের সময়কার পুরোনো বিমানঘাঁটি এটা। ঘর গরম করার বা একটু আরামের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবু বাঁচোয়া, এরা ফরাসি, অতিথিদের জন্য কিছু একটা পানীয়ের ব্যবস্থা করবে। সত্যিই দেখা গেল, যাত্রীদের নানারকম পানীয় পরিবেশন করতে লাগলো।
কয়েকঘন্টা কেটে যাওয়ার পর দেখা গেল আরো একটা প্লেন কুয়াশার জন্য এখানেই নেমেছে।
হিলারীর কাছে সবকিছুই যেন অবাস্তব মনে হচ্ছিল। অবশেষে একটা ঘোষণা শোনা গেল। যাত্রীদের বাসে করে প্যারিসে পৌঁছে দেওয়া হবে। যাত্রীরা লটবহর নিয়ে বাসের দিকে ছুটলো।
মাঝরাতে হিলারী প্যারিসে পৌঁছালো। একটা হোটেলে সে উঠলো।
ক্যাসাব্লাঙ্কা যাওয়ার বিমান পরের দিন সকালে ওরলি বিমানবন্দর থেকে ছাড়ার কথা। কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখলো সবকিছুই যেন ওলটপালট হয়ে গেছে। তার প্লেনে আসন সংরক্ষিত আছে জেনেও সে ঐ প্লেনে যেতে পারছে না। কিছুক্ষণ পরে তাকে জানানো হলো, দাকারগামী একটা প্লেন আজকের জন্য ক্যাসাব্লাঙ্কা হয়ে যাবে। হিলারী কোনোরকম প্রতিবাদ না করে রাজী হয়ে গেলো। হিলারী বেরিলয়ে এলো, তার পাশাপাশি একজন কুলী বললো, খুব জোর বেঁচে গিয়েছেন আপনি মাদাম।