–হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছি।
এবার একটু ভালো করে চিন্তা করে বলুন, প্যারিস সম্মেলনের আগে আপনার স্বামীর মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখেছিলেন কি?
না, আমি কিছু লক্ষ্য করিনি।
জেসপ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টেলিফোন বেজে উঠল এবং তিনি কথা বললেন।
অন্যপ্রান্ত থেকে কেউ একজন বললো, বেটারটন সংক্রান্ত তদন্তের ব্যাপারে উচ্চপদস্থ কারো সঙ্গে এক ভদ্রলোক দেখা করতে চান। কী নাম?–অন্যপ্রান্ত থেকে বললো, স্যার নামটা বুঝতে পারছি না, বানানটা বলছি।
ঠিক আছে বলো। ফোনের ওপাশ থেকে যে কথাগুলো হলো তা তিনি কাগজে লিখে জিজ্ঞেস করলেন উনি কি পোল্যান্ডের লোক?
–কিছু বলেননি স্যার।
আচ্ছা ওকে বসতে বলল।
এবার জেসপ অলিভকে দেখলেন, বিধ্বস্ত, নিঃস্ব, স্থিরমূর্তির মতো বসে আছেন। জেসপ সদ্যলেখা অংশটুকু অলিভকে দেখালেন। এ নামে কাউকে চেনেন?
নামটা দেখার সাথে সাথে অলিভ ভয় পেয়ে চোখ দুটো বড় বড় করলেন। তারপরেই বললেন, উনি আমার কাছে একটা চিঠি লিখেছিলেন।
কবে?
গতকাল, উনি টমের প্রথমা স্ত্রীর পিসতুতো ভাই, টমের অন্তর্ধান সম্পর্কে খুবই চিন্তিত। আমাকে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
-এঁর কথা আগে শুনেছেন বা আপনার স্বামী ওঁর কথা কখনো বলেছেন?
–না।
–উনি আপনার সতীনের পিসতুতো ভাই নাও হতে পারেন।
অলিভ বললেন, একথা মনে হয় না আমার। টমের প্রথমা স্ত্রী প্রফেসর ম্যানহেইমের মেয়ে। ওঁর চিঠি পড়ে মনে হয় টম এবং টমের প্রথমা স্ত্রীর সম্পর্কে উনি সব জানেন। কিন্তু যদি লোকটা আসল না হয় তাহলে কে হতে পারে আপনি মনে করছেন?
–এখানে আমরা এত অজস্র জিনিষ নিয়ে আলোচনা করি, যে কোনো বিষয়ের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অংশের সামান্য এদিক-ওদিক হলেও আমাদের সন্দেহ হয়।
জেসপ বললেন, বদ্ধ ঘরের একটা আতঙ্কজনক প্রতিক্রিয়া আছে।
অলিভ বেটারটন বললেন, চুপচাপ বসে অপেক্ষা করা–এ আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমি কোথাও চলে যেতে চাই। যেখানে সাংবাদিকরা টেলিফোন করে বিরক্ত করবে না। বন্ধু-বান্ধব কোনো রকম বিরক্ত করবে না। ডাক্তার দেখিয়েছি। উনি আমাকে বাইরে থেকে ঘুরে আসতে বলেছেন।
ব্যাগ হাতড়ে একটা খাম বের করে তিনি জেসপকে দেখালেন, দেখুন ডাক্তার কী লিখেছেন?
চিঠি পড়ে জেসপ বললেন, নিশ্চয়ই যাবেন।
-না–আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আপত্তি করবেন।
–আপত্তি করবার কিছু নেই। কোনো খবর পেলে যোগাযোগ করতে পারি এরকম ব্যবস্থা করবেন।
নিশ্চয়ই।
–কোথায় যাবার কথা ভাবছেন?
–এমন কোথাও যেখানে সূর্যের আলো আছে এবং বেশি ইংরেজ নেই। যেমন ধরুন-স্পেন, বা মরক্কো।
ভারি সুন্দর জায়গা আপনার ভালো লাগবে।
অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে জেসপকে করমর্দন করে অলিভ চলে গেলেন। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে বসে জেসপ ফোন করে বললেন, মেজর গ্লাইদরকে পাঠিয়ে দিতে।
.
০২.
মেজর গ্লাইদর? জেসপ নামটা উচ্চারণ করে একটু থামলেন। ভদ্রলোক ঘরে ঢুকে বললেন, নামটা একটু বেয়াড়া ধরনের। যুদ্ধের সময় সহযোদ্ধারা আমাকে গ্লাইডার বলে ডাকতেন।
-আপনি কি এখন আমেরিকা থেকেই আসছেন?
–হ্যাঁ, আমি এক সপ্তাহ আগে এখানে পৌঁছেছি। আচ্ছা আপনি মিঃ জেসপ?
–হ্যাঁ, আমি জেসপ।
আগন্তুক বললো, আপনার নাম আগেও শুনেছি।
-সত্যি, কার কাছে শুনেছেন?
আগন্তুক মুচকি হেসে বললো, আপনার অনুমতি নিয়ে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করবো এবং আপনাকে একটা চিঠি দেখাবো। তারপর সে চিঠিটা দিল।
সামান্য কয়েকটা লাইনের চিঠি। জেসপ ভদ্রলোকের দিকে তাকালেন। বয়স তিরিশের কাছাকাছি। চুলগুলো ছোটছোট করে কাটা। কথা বলেন খুব ধীরে ধীরে। ভদ্রলোককে দেখে মনে হল তার নিজের প্রতি খুবই আস্থা। এটাই জেসপের কাছে অস্বাভাবিক মনে হলো।
ভদ্রলোককে দেখে নিক্কিার মনে হলো। তার সাথে চালাকি করা বা বিশ্বাসঘাতকতা করা সহজসাধ্য নয়। তাঁর গুণগুলোকে বিচার করে জেসপ খুশি মনেই বললেন, এবার বলুন, আপনার জন্য আমরা কী করতে পারি?
–আমি এসেছিলাম টম বেটারটন সম্পর্কে খবর জানতে! আমি একজনের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম যাঁর কথায় আস্থা রাখা যায়। তারা আপনার কথা বললেন।
-কিন্তু বেটারটন সম্পর্কে কোনো খবরই আমার কাছে নেই।
আগন্তুক বললেন, বাজারে কীরকম গুজব চলছে জানেন তো? আমার ধারণা ছিল যে, বিশেষ কোনো কার্যসিদ্ধির জন্য তাঁকে বিশেষ কোনো জায়গায় পাঠানো হয়েছে।
জেসপ একটু আহত হলেন। বললেন, বেটারটন একজন বিজ্ঞানী। তিনি কূটনীতিক বা গুপ্তচর নন।
–আপনি হয়তো ভাবছেন আমার এত মাথাব্যথা কেন? টমের সাথে বৈবাহিকসূত্রে আমার একটা আত্মীয়তা আছে।
–হ্যাঁ! আমার ধারণা আপনি স্বৰ্গত ম্যানহেইমের ভাগ্নে।
–বা! ইতিমধ্যেই সব জেনে ফেলেছেন! আপনাদের এখানে সবই নখদর্পণে থাকে দেখছি।
-কতলোক এখানে আসে। বেটারটনের স্ত্রী একটু আগে এসেছিলেন। আপনার লেখা একটা চিঠিও দেখালেন।
–আমার মা ছিলেন ম্যানহেইমের একমাত্র বোন। দুজনেই দুজনকে ভালোবাসতেন। ছোটবেলায় ওয়ারশয় থাকতাম বটে কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই মামারবাড়িতে কাটতো। তার মেয়ে এলসা আমার নিজের বোন ছিল। আমার মা, বাবা মারা যাওয়ার পর আমি মামা, এলসার কাছে এসে উঠলাম। সুখেই কাটছিলো দিনগুলো। তারপর এল যুদ্ধ। যুদ্ধের পরিস্থিতি আপনাকে বলে দিতে হবে না নিশ্চয়ই। তখনই মামা আর এলসা পালিয়ে এলেন আমেরিকায়। যুদ্ধ শেষ হবার পর গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব পড়লো আমার ওপর। ইউরোপের প্রতি দায়িত্বের মেয়াদ ফুরিয়ে যাবার পর ঠিক করলাম স্থায়ীভাবে মামা এবং বোনের সাথে আমেরিকায় থাকবো। দুঃখের বিষয় এসে শুনলাম মামা ও বোন দুজনেই মারা গেছে। এলসার স্বামী আবার বিয়ে করেছে। এরপরেই কাগজে দেখলাম টম বেটারটনের অন্তর্ধানের খবর, খবর পেয়ে এখানে এসেছি।