এবার আমি সব বুঝতে পারছি।
পিটার্স বললো, ইংল্যান্ডে পৌঁছে আমি তোমাকে চিঠি লিখে সবকিছু জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো উত্তর দাওনি তুমি। ধরে নিয়েছিলাম, তুমি আমার কথা বিশ্বাস করোনি। তারপরেই আমি গোয়েন্দা দপ্তরে যাই। সেখানে নিজেকে পোল্যান্ডের গোয়েন্দা দপ্তরের একজন অফিসার বলে পরিচয় দিই। যাই হোক শেষ পর্যন্ত জেসপের সহায়তায় একসঙ্গে কাজে লেগে গেলাম। আজ সকালে আমার অভিযান শেষ হয়েছে। বেটারটনকে আমেরিকায় পাঠানো হবে, সেখানেই তার বিচার হবে। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে সে উদাস চোখে দূরে সমুদ্র দেখলো। অস্থির হয়ে সে বললো, সবচেয়ে বিশ্রী ব্যাপার হলো–হঠাৎ এর মধ্যে তুমি এসে পড়লে। আমি তোমাকে দেখলাম। মিথ্যা বলবো না-ভালোবেসেও ফেললাম। সবচেয়ে দুঃখ আমার এটাই, অলিভ। বিশ্বাস করো, অবস্থাটা এমন দাঁড়ালো যে, তোমাকে ভালোবেসেছি যে আমি সেই আমিই তোমার স্বামীকে বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসানোর জন্য প্রধান দায়ভাগী হলাম। এ অবস্থা থেকে মুক্তির কোনো উপায় আমাদের নেই, অলিভ। উঠে দাঁড়ালো পিটার্স। যাক সম্পূর্ণ ঘটনা আমি তোমাকে নিজের মুখে বলতে চেয়েছিলাম। বলা শেষ, এবার আমি বিদায় নেবো।
একটু দাঁড়াও। ঘুরে দাঁড়ালো পিটার্স। আমারও তোমাকে কিছু বলার আছে, যা তুমি জানো না। আমি-বেটারটনের স্ত্রী নই। বেটারটনের স্ত্রী অলিভ, ক্যাসাব্লাঙ্কার প্লেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে। জেসপ আমাকে অলিভের ছদ্মবেশ নিয়ে এই অভিযানে আসতে অনুরোধ করেন
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো পিটার্স। তুমি অলিভ বেটারটন নও?
-না।
–হা ঈশ্বর! সে ধপ করে হিলারীর পাশে বসে পড়লো। অলিভ, আমার অলিভ।
–আমাকে অলিভ বলে ডেকো না। আমি হিলারী ক্র্যাভেন। হিলারী? উঁ…এ নামটায় অভ্যস্ত হতে আমার বেশ সময় লাগবে। হিলারীর কাঁধে একটা হাত রাখলো পিটার্স।
–চত্বরের ও প্রান্তে জেসপ, নানারকম জটিলতা নিয়ে লেবল্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। কথার মাঝে হঠাৎ তিনি থেমে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হা কী বলছিলেন যেন?
আমি বলছিলাম–অ্যারিস্টাইডসের মতো একটা জানোয়ারের বিরুদ্ধে আমরা বোধহয় বেশিদূর এগোতে পারবো না।
না-না, অ্যারিস্টাইডসরা চিরকালই জয়ী হয়। কিন্তু ওর প্রচুর টাকা লোকসান হয়ে গেলো, এ শোক ও ভুলতে পারবে না। ওর চোখ মুখ দেখে মনে হলো ও মৃত্যুকে বেশিদিন ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। ওপরওয়ালাই ওকে শীঘ্র শাস্তি দেবেন।
-আপনি এমন হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠছেন কেন বলুন তো?
-ওই দেখো–না, ওই দুটি। আমি কিনা হিলারী ক্র্যাভেনকে পাঠালাম অজানা মৃত্যুর ঠিকানায়, কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত ওর যাত্রারও সেই একই পরিণতি হলো। হাঃ হাঃ!
বিভ্রান্ত হয়ে একবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে লেবল্যাঙ্ক হেসে ফেললো। ও আচ্ছা আপনাদের শেক্সপীয়রের সেই কথা!
তোমরা ফরাসিরা বাপু বড়ো বেশি পড়াশোনা করো। জেসপ তার হাসির সঙ্গে গলা মেলালেন।