কিন্তু স্যার, এ অসম্ভব। আমি–মানে এতে–
কোনরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা যদি ভেবে থাকেন, তা এখানেই শেষ করতে হবে। আশাকরি, মহাশয়দের এ আশ্বাস আমাকে মুখ ফুটে বলে দিতে হবে না যে, এখানে সত্যিই যদি কোনো বেআইনী কাজ কারবার চলে থাকে তা সম্পূর্ণ আমার অগোচরেই ঘটেছে।
এ যেন জবাবদিহি নয়, আদেশ। এ আদেশ অর্থের, এ আদেশ অসীম ক্ষমতার এবং বিশাল প্রতিপত্তির। মিঃ অ্যারিস্টাইডস, দুনিয়াজোড়া যাঁর নাম, তাকে এ ব্যাপারে জড়ানো চলবে না। তবে এই অপরাধের পঙ্কিল আবর্ত থেকে যদিও তার হাতে দাগ না লাগে, তবুও এ তার পরাজয়। এ পরাজয়, এ ব্যর্থতা জীবনে বার বার এসেছে তার। ব্যর্থতা কাটিয়েই মাথা উঁচু করেছেন মিঃ অ্যারিস্টাইডস।
অদ্ভুত হাতের ভঙ্গি করে বললেন তিনি, ঈশ্বর করুন, এসব ব্যাপারে আমার যেন কোন সংস্রব না থাকে।
পুলিশ অধিকর্তা এগিয়ে এলেন। বললেন, কোনোরকম বাধা যেন না দেওয়া হয়। আমার কর্তব্য আমাকে করতে দিতে হবে।
ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে এগিয়ে এলেন ভ্যান হিদেম। আমার সঙ্গে আসুন, আমাদের সংরক্ষিত ঘরগুলো আপনাদের দেখিয়ে দিচ্ছি আমি।
২১. একটা দুঃস্বপ্ন
২১.
মনে হচ্ছে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে উঠলাম। বুক খালি করে নতুন করে শ্বাস নিলো হিলারি।
তাঞ্জিয়েরের একটা হোটেলের চত্বরে ওরা বসেছিলো। সকালের প্লেনেই পৌঁছেছে এখানে। হিলারী আবার বললো, এতসব ঘটনা কি সত্যিই ঘটেছিলো? নাকি স্বপ্নই।
সত্যিই ঘটেছিলো, বললো টম বেটারটন, মনে হয় সত্যিই যেন দুঃস্বপ্ন। শেষপর্যন্ত তাহলে ওখান থেকে বেরোতে পারলাম।
জেসপ চত্বর পেরিয়ে ওদের পাশে এসে বসলেন।
হিলারী জিজ্ঞেস করলো, অ্যান্ড্রু পিটার্স কোথায় গেলেন?
–এখুনি এসে পড়বে। কয়েকটা টুকিটাকি কাজ সারছে, জেসপ বললো।
–তাহলে-পিটার্স আপনারই লোক। হিলারী বললো, কিছু ফরফরাসের গুড়ো আর তেজস্ক্রিয় পদার্থে ভরা এক সীসার সিগারেট কেস দিয়ে সে এতসব কাণ্ডকারখানা করে ফেললো। আমি কিন্তু ওকে এতটুকুও সন্দেহ করতে পারিনি।
-সেই জন্যই দুজনেই যথেষ্ট সতর্কতার পরিচয় দিয়েছে। তবে, ঠিকমতো বলতে গেলে পিটার্স আমার লোক নয়। উনি আমেরিকার পক্ষ থেকে এসেছেন।
–সেইজন্যই তখন আপনি বলেছিলেন, সত্যিই যদি আমি টমের কাছে পৌঁছতে পারি সেখানে আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে? অ্যান্ড্র পিটার্সের কথাই আপনি বলতে চেয়েছিলেন, তাই না?
-হুঁ, ঘাড় নাড়লেন জেসপ।
ওই যে আমার বন্ধু লেবল্যাঙ্ক আসছে। যাই ওর সঙ্গে একটু কথা বলি, জেসপ উঠে পড়লেন। চত্বর পেরিয়ে চলে গেলেন।
সঙ্গে সঙ্গেই টম বেটারটন ব্যস্ত হয়ে বললো, আমার জন্য আরও একটা কাজ তোমাকে করতে হবে অলিভ, করবে না? এখনও তোমাকে অলিভই বলছি–কেমন যেন অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে।
-হা হা বলবেন। তাতে কী হয়েছে?
-তুমি আমার সঙ্গে চত্বরের ওধারে চলো। তারপর এখানে ফিরে এসে ওদের বলবে আমি আমার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ছি।
বিস্মিত চোখ তুললো হিলারী, কেন? কী করবেন আপনি
–চলে যাবো, অলিভ। চলে যাওয়াই আমার পক্ষে ভালো।
–চলে যাবেন। কোথায়?
–যেখানে হয়।
–কিন্তু কেন?
–এখানকার অবস্থা আমার জানা নেই। এই তাঞ্জিয়ের এক অদ্ভুত জায়গা নির্দিষ্ট কোনো রাষ্ট্রের আইনের আওতায় পড়ে না। কিন্তু আমি জানি, তোমাদের সঙ্গে জিব্রাল্টার পৌঁছলেই কী ঘটবে। সেখানে আইন আছে, সরকার আছে। প্রথমেই ওরা আমাকে গ্রেপ্তার করবে সেখানে।
হিলারীর চোখে মুখে গভীর চিন্তার রেখা পড়লো। অ্যারিস্টাইডসের মরণফাঁদ থেকে মুক্তি পাবার উত্তেজনায়, টম বেটারটনের দুশ্চিন্তার কথা সে ভুলেই গিয়েছিলো। বললো, আপনি কি ভাবছেন, সরকারী গোপন তথা ফাঁসের অভিযোগে আপনাকে অভিযুক্ত করা হবে? তা যদি হয়, তাহলে কি আপনি পালিয়ে বাঁচতে পারবেন? কোথায় যাবেন আপনি? ওরা অনেক বেশি শক্তিশালী। এই দুনিয়ার যেখানে যেভাবেই থাকুন-না-কেন ওরা আপনাকে খুঁজে বের করবেই।
সেটা খুব সহজ হবে না। আমার যে বর্ণনা ওদের কাছে আছে তার সঙ্গে আমার বর্তমান চেহারার কোনো মিলই নেই। আমার উদ্দেশ্য ছিলো-ইংল্যান্ড থেকে পালিয়ে, কিছু টাকা-পয়সার ব্যবস্থা করে নিজের চেহারা সম্পূর্ণ পালটে ফেলা, যাতে বাকি জীবনটা নিরাপদে কাটাতে পারি।
দু চোখে সন্দেহ ঘনালো হিলারীর। বললো, আপনি ভুল করছেন। এর চেয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে বিচারের সামনে দাঁড়ানো অনেক ভালো।
এখন তো আর যুদ্ধের সময় নয়। হয়তো অনেক বছরের জেল হবে। সারাজীবন পুলিশের তাড়া খাওয়ার কী দরকার?
–তুমি বুঝছে না। যাকগে, নষ্ট করার মতো আর একটুও সময় আমার নেই।
চত্বরের শেষ প্রান্তে পৌঁছলো ওরা। দেওয়ালের গায়ে ছোট্ট একটা দরজা। সেই দরজা দিয়ে সরু একটা রাস্তা পাহাড়ী পথ বেয়ে এঁকে-বেঁকে বন্দরের দিকে চলে গেছে।
বেটারটন বললো, এই পথ দিয়ে আমি বেরিলয়ে যাচ্ছি। কেউ লক্ষ্য করবে না। বিদায়।
–আপনার সৌভাগ্য কামনা করি, বিদায়! স্থির দাঁড়িয়ে সে বেটারটনকে দেখতে লাগলো। দরজাটা খুলে যেতেই বেটারটন এক পা পিছিয়ে এসে নিশ্চল দাঁড়িয়ে পড়লো। দরজা জুড়ে তিনজন লোক দাঁড়িয়ে। তাদের মধ্যে দুজন বেটারটনের দিকে এগিয়ে এলো।
-টমাস বেটারটন, আপনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রয়েছে আমার কাছে। যতক্ষণ না আপনাকে মার্কিন সরকারের হাতে বিচারের জন্য সমর্পণ করা হচ্ছে, ততক্ষণ আপনি আমাদের হাতে বন্দী হয়ে থাকবেন।