এবার অ্যারিস্টাইডস বললেন, সত্যিই খুব গুরুতর ব্যাপার মনে হচ্ছে, খুবই গুরুতর। কিন্তু আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনাদের যে ভুল পথে নিয়ে আসা হয়েছে এ বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এঁদের কেউ এখানে নেই। আমার এই প্রতিষ্ঠানে যেমন খুশি অনুসন্ধান করার পূর্ণস্বাধীনতা আপনাদের রয়েছে–আপনারা দেখতে পারেন।
-খুঁজে কিছু পাবো কিনা সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে, স্যার-জেসপ বললেন, মানে ওপর ওপর খুঁজে কিছু পাওয়া যাবে না। এবার এক মোম চাল চাললেন জেসপ, কিন্তু ঠিক কোন্ জায়গা থেকে অনুসন্ধান শুরু করতে হবে সেটা আমি জানি।
–আচ্ছা! তা সে জায়গাটা কোথায় শুনি?
–দ্বিতীয় গবেষণাগার পেরিয়ে চতুর্থ বারান্দার একেবারে শেষে বাঁদিকে যেতে হবে।
হঠাৎ কেমন চঞ্চল হয়ে উঠলেন ডাঃ ভ্যান হিদেম। হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে জেসপ বললেন, দেখতেই পাচ্ছেন ডাক্তার, আমাদের হাতে অনেক পাকা খবর আছে।
তীক্ষ্ণস্বরে চটপট জবাব দিলেন ভ্যান হিদেম, এ অসম্ভব। সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আপনারা ইঙ্গিত করছেন যে, কিছু লোককে আমরা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এখানে আটকে রেখেছি। এ অভিযোগ আমি সরাসরি অস্বীকার করছি।
মন্ত্রীমহাশয় বললেন, মনে হচ্ছে আমরা কানাগলিতে ঢুকে পড়েছি।
মিঃ অ্যারিস্টাইডস শান্ত স্বরে কথা বললেন, আপনাদের তত্ত্বটা সত্যিই চমকপ্রদ কিন্তু নেহাতই তত্ত্ব। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি ব্যস্ত হয়ে বললেন, মহাশয়রা আমায় মাফ করবেন, এবার আপনাদের উঠতে হবে। বিমানঘাঁটি পর্যন্ত অনেকখানি রাস্তা আপনাদের মোটরে পাড়ি দিতে হবে, সময়মতো পৌঁছতে না পারলে চারদিকে আবার খবর চলে যাবে আপনাদের সন্ধান করার জন্য সুতরাং
লেবল্যাঙ্ক এবং জেসপ দুজনেই উপলব্ধি করলেন, এই মুহূর্তে সামনাসামনি ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় এসে গেছে। অ্যারিস্টাইডস তার ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এরা কিছু করুক বা না করুক তা আর সে চাইছে না।
অ্যারিস্টাইডস জেসপ আর লেবল্যাঙ্কের মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছেন। কিন্তু ওপরওলার নির্দেশ ছাড়া ওরা কিছুই করতে পারবে না।
লর্ড অ্যালভারস্টোক বললেন, আমার মত–আমাদের যাত্রাকে ত্বরান্বিত করা উচিত হবে না। কারণ এখানে এমন একটা ঘটনা রয়েছে যার ভালো ভাবে তদন্ত প্রয়োজন। অত্যন্ত সাংঘাতিক সব অভিযোগ করা হয়েছে, আমার মতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। এই অভিযোগ খণ্ডন করার আইনসঙ্গত সুযোগ এঁদের দেওয়া উচিত।
–প্রমাণ করার দায়িত্ব কিন্তু আপনার উপর বর্তাবে, অ্যারিস্টাইডস তাঁর ব্যক্তিত্বের রোশনি ছড়ালেন।
দারুণ চমকে বোঁ করে ঘুরে দাঁড়ালেন ডাঃ ভ্যান হিদেম। একজন মুর ভৃত্য কখন সামনে এগিয়ে এসেছে। চমৎকার স্বাস্থ্যবান ভৃত্যটির গায়ে কাজ করা সাদা পোশাক, মাথায় মরক্কো টুপি; তেলতেল কালো মুখটা চকচক করছে।
নিগ্রোদের মতো পুরু ঠোঁটের আড়াল থেকে পরিষ্কার শুদ্ধ ইংরেজি উচ্চারণ শুনে সমস্ত দলটা বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো।
ভৃত্যটি বলে উঠলো, প্রমাণ আছে। আপনারা এখনই আমার সাক্ষ্য নিতে পারেন। এই ভদ্রলোক বলছেন যে, অ্যান্ড্রু পিটার্স, টরকুইল এরিকসন, মিঃ এবং মিসেস বেটারটন ও ডাঃ লুই ব্যারন এখানে আছেন–এবং তাদেরই প্রতিনিধি। এক পা এগিয়ে এসে সে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সামনে দাঁড়ালো। বললো, এই মুহূর্তে হয়তো আমাকে চিনতে আপনার কষ্ট হচ্ছে স্যার–আমি অ্যান্ড্রু পিটার্স।
অ্যারিস্টাইডস তার দিকে তাকিয়ে একটা ক্ষীণ শব্দ করে ভাবলেশহীন মুখ নিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন।
সব্বাইকে এখানে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, পিটার্স বললো, মিউনিখের স্কুয়াজ, হেলগা নিডহেইম, আমেরিকার পল ওয়েড, ইংরেজ বিজ্ঞানি জেফ্রি এবং ডেভিডসন, ইতালির রিকোসেটি, বিয়াঙ্কা এবং মার্চিসন–সবাই এখানে আছেন। মাঝখানের দরাজাটা বন্ধ করার এমন অপূর্ব কৌশল যে খালিচোখে সে দরজার হদিস কেউ পাবে না। গোপন গবেষণাগারগুলোও তৈরি করা হয়েছে, পাহাড়ের তলায় সুড়ঙ্গ কেটে।
–হায় ভগবান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বললেন, ভৃত্যটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তিনি বললেন, না, এখনও যে তোমাকে ঠিক চিনতে পেরেছি তা বলবো না আমি।
ঠোঁটে প্যারাফিন ইনজেকশন নেওয়ার ফলে এইরকম হয়েছে স্যার। আর গালের রঙের ব্যাপারটা না বললেও চলবে।
-তুমি যদি পিটার্স হও, এফ.বি.আই.-এর কোন নাম্বারে তুমি কাজ করছো?
–৮১৩৪৭১ স্যার।
বেশ। আর তোমার ছদ্মবেশের আদ্যাক্ষর?
বি.এ.বি.ডি.জি. স্যার।
রাষ্ট্রদূত বললেন, এ লোক পিটার্স কোনো সন্দেহ নেই আমার, মন্ত্রীর দিকে ফিরলেন তিনি।
মন্ত্রীবর পিটার্সকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বলছো–এই সমস্ত লোকদের তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এখানে আটকে রাখা হয়েছে?
-কেউ কেউ স্ব-ইচ্ছায় আছেন, কেউ কেউ নয়, স্যার।
–হু, সে ক্ষেত্রে তাদের জবানবন্দি নিতেই হবে। পুলিসের বড়কর্তার দিকে তাকালেন তিনি। ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন।
–একটু দাঁড়ান, অ্যারিস্টাইডস নির্দেশ দিলেন। ধীর শান্ত হতাশ স্বরে বললেন, সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে, আমার বিশ্বাসের ওপর চরম আঘাত হেনেছে এরা। আরক্ত শীতল দৃষ্টিতে ভ্যান হিদেম এবং পরিচালককে বললেন, বিজ্ঞানের আবিষ্কার উন্মাদনায় মেতে আপনারা এখানে কী যে করেছেন তা আমার জানা নেই। আমার এই কল্যাণ প্রতিষ্ঠানের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো বিজ্ঞানের সাধনা। যদি এঁদের অভিযোগ সত্য হয় তাহলে এই মুহূর্তে সেই লোকদের আপনি এখানে হাজির করুন, যাদের বেআইনিভাবে এখানে আটকে রাখা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।