একজন আমেরিকান ভদ্রলোকও এখানে থাকেন, জেসপ বললেন, অ্যান্ড্রু পিটার্স। খুব সম্ভবত রসায়নশাস্ত্র নিয়ে গবেষণা তার পেশা। হ্যাঁ আমি ঠিক বলেছি বোধহয়, তাই না স্যার? বলেই তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দিকে তাকালেন।
রাষ্ট্রদূত অত্যন্ত চতুর। কূটনৈতিক বুদ্ধি যেমন প্রখর, তেমনি আদর্শবান। জেসপের চোখে চোখ রেখে বললেন, আরে তাই তো, অ্যান্ড্রু পিটার্স। খেয়ালই ছিল না আমার, সত্যিই ওর সঙ্গে দেখা হলে খুব খুশি হতাম। ভ্যান হিদেমের শান্ত বিস্ময়টা ক্রমশ বিস্ফারিত হতে লাগলো। জেসপ এবার অ্যারিস্টাইডসকে দেখে নিলেন।
অ্যান্ড্রু পিটার্স? না স্যার, আপনারা কোনো ভুল সংবাদ পেয়েছেন বলেই আশঙ্কা হচ্ছে আমার। ও নামে আমাদের এখানে কেউ নেই, কাউকে চিনিও না।
–টমাস বেটারটনের নামটা নিশ্চয়ই শুনেছেন, তাই না? আচমকা প্রশ্ন করলেন জেসপ।
–টমাস বেটারটন? হা মানে, মনে হচ্ছে–
সাংবাদিকদের একজন হঠাৎ যেন কথাটা লুফে নিলো। টমাস বেটারটন। হা, কী হয়েছে? বিরাট খবর হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মাত্র ছমাস আগে, তিনি নিরুদ্দেশ হন। সমস্ত দেশবিদেশ তোলপাড় করে পুলিস তাকে খুঁজেছে।
ভ্যান হিদেম বললেন, আশঙ্কা করছি, কেউ আপনাদের ভুল খবর দিয়েছে। সম্ভবত কেউ ধোঁকা দেবার চেষ্টা করেছে আপনাদের। আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মীকে আজ আপনারা দেখেছেন। সমস্ত কিছুই দেখেছেন আপনারা।
পুরোপুরি সবকিছু নয় বলেই আমার মনে হচ্ছে, ঠান্ডা গলায় বললেন জেসপ। এরিকসন নামে আর-একজন যুবকও আছে, আর আছেন ডাঃ লুই ব্যারন, আরও সম্ভবত মিসেস কেলভিন বেকার
-ও-ডাঃ ভ্যান হিদেম যেন আশার আলো দেখতে পেলেন। কিন্তু ওই নামের সব্বাই তো মরক্কোর কাছে এক প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
-তাহলে আপনি বলছেন–আমি ভুল করেছি? বলছেন–এই লোকগুলোর কেউ এখানে নেই?
কি করে তারা এখানে থাকতে পারেন, আপনিই বলুন স্যার? তারা তো সবাই প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত। যতদূর জানি, সব মৃতদেহগুলোই পাওয়া গিয়েছিলো।
যে দেহগুলো পাওয়া গিয়েছিলো সেগুলো এমন ভয়ঙ্করভাবে পোড়া যে, সেগুলো যথাযথভাবে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
কাঁপা কাঁপা সরু একটা গলা ভেসে এলো, কী বললেন? আপনি কি বলছেন যে, মৃতদেহগুলো যথাযথভাবে সনাক্ত করা হয়নি? অবসরপ্রাপ্ত জজসাহেব, লর্ড অ্যালভারস্টোক দুহাতে কান আড়াল করে বুকে পড়লেন।
-সরকারীভাবে যথাযথ সনাক্তকরণ সম্ভব ছিলো না, স্যার, জেসপ বললেন, আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, এই লোকগুলি প্লেন দুর্ঘটনায় মারা যায়নি।
–বিশ্বাস? অখুশিভাবে প্রায় চিৎকার করে উঠলেন লর্ড অ্যালভারস্টোক।
–বিশ্বাস ঠিক নয়, এঁরা যে বেঁচে আছেন তার প্রমাণও আছে আমার কাছে।
–প্রমাণ? কী ধরনের প্রমাণ আছে মিঃ জেসপ?
মিসেস বেটারটন যখন ফেজ থেকে ম্যারাকাশের পথে রওনা হন, তখন তাঁর গলায় একটা ঝুটো মুক্তোর আঁটা হার ছিলো। সেই হারেরই একটা মুক্তো, প্লেনটা যেখানে পুড়েছে তার থেকে আধমাইল দূরের একটা জায়গায় পাওয়া গিয়েছে।
নিশ্চিত করে কী করে আপনি বলছেন যে, যে মুক্তোটা পাওয়া গিয়েছে সেটা মিসেস বেটারটনের হারেরই?
কারণ ওই হারের প্রতিটি মুক্তোয় এমন একটা করে ছোট্ট চিহ্ন ছিল যা খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু শক্তিশালী আতস কাঁচে দেখা যায়।
–মুক্তোগুলোর গায়ে এই চিহ্ন কে দিয়েছিলো?
–আমি দিয়েছিলাম, লর্ড অ্যালভারস্টোক–আমার এই সহকর্মী, লেবল্যাঙ্কের সামনে এ কাজ আমি করেছিলাম।
-মুক্তোগুলোর গায়ে ওইরকম চিহ্ন এঁকে দেবার নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিলো আপনার?
-হা, লর্ড অ্যালভারস্টোক। আমার বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ ছিল যে, মিসেস বেটারটন আমাদের তার স্বামীর কাছে পৌঁছে দেবেন, যাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।–জেসপ বলে চললেন। আরও দুটো মুক্তো আমাদের নজরে পড়ে। দুটোই পাওয়া যায়, যেখানে প্লেন দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে আসার মধ্যবর্তী পথে। মুক্তোগুলো যেখানে যেখানে পাওয়া যায়, সেখানে সেখানে খোঁজখবর নিয়ে ছজন লোকের বর্ণনা পেয়েছি আমরা। এই ছজনের সঙ্গে যারা পুড়ে গেছে বলে প্রকাশ তাদের বর্ণনা প্রায় হুবহু মিলে গেছে। এই দুজন যাত্রীর মধ্যে একজনের কাছে ছিলো আমাদের দেওয়া দস্তানা। যার গায়ে জ্বলজ্বলে ফসফরাসের রঙ লাগিয়ে দেওয়া ছিল। এই ফসফরাসের ছাপ একটি গাড়ির গায়ে দেখতে পাওয়া যায়, যে গাড়িটা এই যাত্রীদের আসার পথে অনেকখানি পথ বয়ে এনেছে।
লর্ড অ্যালভারস্টোক মন্তব্য করলেন, খুব গুরুতর ব্যাপার।
চেয়ারের মধ্যে বসে থাকা মিঃ অ্যারিস্টাইডস জিজ্ঞেস করলেন, শেষ কোথায় এই দলটির দেখা পাওয়া যায়?
–একটা পরিত্যক্ত বিমানঘাঁটিতে। জেসপ জায়গাটার মোটামুটি একটা বর্ণনা দিলেন। অ্যারিস্টাইডস বললেন, সে তো এখান থেকে অনেক দূরে।…যেহেতু বিমানঘাঁটিটা এখান থেকে কয়েক শো মাইল দূরে, আমি বুঝতে পারছি না কিসের ভিত্তিতে আপনি বলছেন যে তারা এখানেই এসেছেন। কেনই বা তারা আসবেন এখানে?
–কিছুদিন আগে আমাদের একটা সন্ধানী প্লেন একটা সঙ্কেতবার্তা ধরে ফেলে। সেই বার্তাটি লেবল্যাঙ্কের কাছে যায়। গোপন সঙ্কেতলিপি দিয়ে শুরু করা সেই বার্তাটি সন্ধান দেয় যে, যাদের আমরা খুঁজছি সেই লোকগুলো কোনো এক কুষ্ঠ আশ্রমে আছে।