–শপথ ও করবে–হ্যাঁ কিন্তু সে শপথ রাখবে না।
নিশ্চয়ই রাখবে। আমি বলছি ও কথা রাখবে।
-এই তো ঠিক সহধর্মিণীর মতো কথা। তবে এক্ষেত্রে বউদের কথা তেমন যুক্তিগ্রাহ্য নয়। অবশ্য ও যদি এখানে জামিন হিসেবে কাউকে রেখে যায়, তাহলে হয়তো ওর মুখ বন্ধ থাকবে।
–তার মানে?
–আমি বলতে চাইছিলাম ধরুন টমাস বেটারটন যদি চলে যায় আর তার জামিন হিসেবে আপনি এখানে রইলেন–ব্যাপারটা কেমন লাগবে আপনার? আপনি কি রাজি হবেন?
হিলারী জেসপের কথা শুনতে পাচ্ছে। আর তার নির্দেশগুলো মনে করার চেষ্টা করছে। টমাস বেটারটনকে মুক্ত করার যদি কোনো সুযোগ পাওয়া যায়, তা এখনই, পরিবর্তে তাকে এখানে থাকতে হবে। হিনারী জানে সাধারণভাবে জামিন বলতে যা বোঝায় সে তা নয়। একথা অবশ্য মিঃ অ্যারিস্টাইডস জানেন না। জানেন না যে টমাস বেটারটনের কাছে তার এতটুকুও মূল্য নেই। যে স্ত্রীকে সে ভালোবাসতো আগেই সে মারা গেছে, সুতরাং…
-আমি রাজি, বললো হিলারী।
-আপনার সাহস, নিষ্ঠা এবং আত্মত্যাগের যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। যা বাকি কথাগুলো অন্যসময় আলোচনা করা যাবে।
-ওহ না না। হিলারী হঠাৎ দুহাতে মুখ ঘাটলো। এ আমি সহ্য করতে পারছি না। কী ভয়ঙ্কর অমানুষিক!
অত অস্থির হবেন না, মাদাম। বৃদ্ধ লোকটির গলায় সান্ত্বনার আশ্বাস। আজ আপনাকে আমার লক্ষ্য এবং উচ্চাশার কথা বলতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমি বলতে পারি কিছুদিন পরে সবকিছুই আপনার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হবে।
-না-না! ফুঁসে উঠলো হিলারী। কক্ষনো না, কক্ষনো না।
–আচ্ছা–এই তো লালচুলের বীরত্ব ঘুচে আবেগ ঝরছে! আমার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-তারও লালচুল ছিলো। লালচুলওয়ালা সবসময়েই আমি প্রশংসা করি। আপনারও কিছু গুণ আছে–আপনার প্রাণপ্রাচুর্য, আপনার সাহস এবং আপনার একান্ত নিজস্ব একটি বুদ্ধিমান মাথা। এখানে অনেক নারী আছে কিন্তু এমন বেশ উত্তেজক মানসিক সঙ্গিনীর প্রয়োজন আমার। বিশ্বাস করুন, আপনার সাহচর্য আমাকে অনেকখানি শান্তি দিয়েছে।
-আচ্ছা ধরুন–এতক্ষণ যে সমস্ত কথা আমাকে বললেন, আমি যদি আপনার স্বামীকে সব বলে দিই?
অ্যারিস্টাইডস হেসে বললেন, ও আচ্ছা ধরে নিলাম আপনি বলে দেবেন। কিন্তু সত্যিই কী আপনি বলবেন?
-না–মানে আমি ঠিক জানি না।
-আচ্ছা! খুব চালাক আপনি। এমন কিছু জিনিষ আছে যা মেয়েদের চেপে রাখাই উচিত। আপনি এখন ভীষণ ক্লান্ত, বিপর্যস্ত তাই বলে ফেললেন। যাক মাঝে মাঝে আমি যখন এখানে আসবো, আপনাকে ডাকবো–অনেক কিছু আলোচনা করা যাবে।
হিলারী হঠাৎ দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, আমাকে এখান থেকে যেতে দিন-দয়া করে আমাকে যেতে দিন।
অ্যারিস্টাইডস আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে বললেন, কী করে আপনাকে যেতে দিতে পারি বলুন? এখানে আপনি যা যা দেখেছেন, সেই গল্প বাইরের জগতে কী করে ছড়াতে দিতে পারি, আপনিই বলুন?
-আমি যদি শপথ করে বলি যে একটা কথাও আমি কাউকে বলবো না, বিশ্বাস করবেন না আমায়?
-না বিশ্বাস করবো না, বিশ্বাস করলে বোকামি করবো।
–আমি এখানে থাকতে চাই না। এই বন্দীশালায় এক মুহূর্তও থাকতে চাই না আমি। আমায় মুক্তি দিন।
-কিন্তু এখানে আপনার স্বামী রয়েছেন। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় মিলিত হবার জন্যই আপনি এখানে এসেছিলেন।
–কিন্তু কোথায় আসছি তা আমি জানতাম না, কোনো ধারণাই ছিলো না আমার।
না, সত্যিই আপনার কোনো ধারণাই ছিল না। কিন্তু আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি যে বিশেষ জগতে আপনি এসে পড়েছেন সে জগৎ অনেক সুখের। এখানে আপনার প্রয়োজনের সবকিছুই হাতের কাছে পাবেন।
উঠে দাঁড়িয়ে তিনি আস্তে করে কাঁধ চাপড়ে দিলেন হিলারীর। এখানে আপনি ঠিক মানিয়ে চলতে পারবেন। একবছর, বড়জোর দুবছরের মধ্যে আপনি নিজেকে সবচেয়ে সুখী বলে মনে করবেন।
.
১৯.
পরের রাত্রে ভীষণ চমকে ধড়মড় করে জেগে উঠলো হিলারী। আধশোয়া হয়ে কান খাড়া করে শব্দটা শুনতে চেষ্টা করলো, টম, টম–শুনতে পাচ্ছো?
-হ্যাঁ–একটা উড়োজাহাজ-খুব নিচু দিয়ে উড়ছে, ও নিয়ে ঘাবড়াবার কিছু নেই। মাঝে, মাঝেই এমনি ওপর দিয়ে যায়।
–ও আমি ভেবেছিলাম–কথাটা সে শেষ করলো না।
ঘুম এলো না আর, শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো। অ্যারিস্টাইডসের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে দেখা হওয়া, কথাবার্তা বার বার সব মনের মধ্যে তোলপাড় করতে লাগলো। বুড়ো যেন-হঠাৎ খেয়ালে ওর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছে।
বুড়োর এই খেয়ালটাকে ও কি কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে? ভালোবাসার অভিনয় করে, শেষ পর্যন্ত বুড়োর সঙ্গে বাইরের জগতে ফিরে যাবার জন্য কি তার ওপর চাপ ফেলতে পারবে?
পরের বার বুড়ো যখন আসবে, তখন যদি আবার ডেকে পাঠায়, হিলারী ওর লালচুলওলা বউয়ের আলোচনা পাড়বে। অন্ধকারে হিলারী হাসলো। ওর মনে পড়ে গেলো চেলটেমহ্যামের জর্জ কাকার কথা। জর্জ কাকা আর অ্যারিস্টাইডসের মধ্যে পার্থক্য নেই।
টমকে সেদিন হিলারী বলেছিলো, এখান থেকে মুক্তি পাবার একটা পথ আমি বের করবোই। সেই পথ কী অ্যারিস্টাইডস? তা যদি হয় পথটা সহজ হবে না…
খবর, শেষপর্যন্ত একটা খবর এসেছে, লাফিয়ে উঠলো লেবল্যাঙ্ক।
সবেমাত্র একটা আর্দালি একটা কাগজ দিয়ে গেছে। কাগজের ভাজ খুলেই সে উত্তেজিত। আমাদের পরিদর্শক প্লেনের একজন চালক এই খবর পাঠিয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে এক বিশেষ স্থানে আসতেই সে লক্ষ্য করলো, সঙ্কেত বাতিটা জ্বলছে নিভছে। বিশেষ সাঙ্কেতিক তারবার্তা পরপর দুবার। সে এই বার্তা সংগ্রহ করে। এই যে দেখুন। জেসপের সামনে সে কাগজটা মেলে ধরলো।