-হ্যাঁ, আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, তবে সেগুলি নেতিবাচক, ইতিবাচক উত্তর আপনি দেননি? একজন লোকের সম্পর্কে সব কিছু জানা থাকলে তবে কাজের সুবিধা হয়, লোকটিকে খুঁজে পাওয়া যায়।
একটু চিন্তা করে অলিভ বললেন, বুঝলাম, হ্যাঁ, টম সবসময়ই হাসিখুশী, নম্র স্বভাবের মানুষ ছিলেন। এবং বুদ্ধিমানও।
জেসপ হেসে বললেন, এটা তো একজন লোকের গুণের কথা, আমরা এবার ব্যক্তিগত ব্যাপারে আলোচনা করি। আচ্ছা তিনি কি খুব বেশি পড়াশুনা করতেন?
-হ্যাঁ, একটু বেশিই পড়তেন।
–কী ধরনের বই পড়তেন?
–এই জীবনী। মাঝেমধ্যে বুক সোসাইটির সুপারিশ এবং ক্লান্ত থাকলে রহস্যকাহিনী পড়তেন।
–একেবারে রীতিনিষ্ঠ পড়ুয়া, বিশেষ করে কোনো ধরনের বইয়ে আগ্রহ ছিলো না, আচ্ছা উনি কি তাস বা দাবা খেলতেন?
ভালো ব্রিজ খেলতো ও, প্রতি সপ্তাহে একদিন বা দুদিন আমরা ডাঃ ইভান্স আর তার স্ত্রীর সঙ্গে তাস খেলতাম।
-আপনার স্বামীর কি অনেক বন্ধুবান্ধব ছিলো?
–হা, ও খুব মিশুকে।
-না, ঠিক তা বলছি না আমি। আমি বলতে চাইছি তিনি কি এমন ধরনের লোক ছিলেন, যিনি বন্ধুদের জন্য চিন্তা করেন?
–আমাদের দু-এজন প্রতিবেশীর সঙ্গে ও গলফ খেলতো।
–তার নিজের কোনো বিশেষ বা অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলো না?
না আপনি তো জানেনই তার জন্ম কানাডায়, এবং জীবনের অনেকগুলো বছরই কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এখানে বেশি লোকের সঙ্গে ওর পরিচয় ছিলো না।
জেসপ টেবিলের কাগজপত্রগুলোয় একবার চোখ বুলিয়ে দেখে বললেন, দেখতে পাচ্ছি যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে তিনজন লোক টমের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন তাদের নামও রয়েছে এখানে। এর থেকে এটুকু বুঝতে পারছি যে বাইরের দুনিয়ার মাত্র এই তিনজনের সঙ্গেই তার যোগাযোগ ছিল। এঁদের উপর আমরা নজর রাখছি। প্রথম জন হচ্ছে ওয়াল্টার গ্রিফিথ। ইনি হারওয়েলে আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন।
-হ্যাঁ, উনি ইংলন্ডে বেড়াতে এসে টমের সাথে দেখা করে যান।
–তাতে আপনার স্বামীর প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিলো?
–আমেরিকায় থাকতে ওদের বন্ধুত্ব ছিল, টম ওকে দেখে আশ্চর্য এবং খুশীও হয়েছিলো।
–গ্রিফিথকে দেখে আপনার কেমন মনে হয়েছিল, একটু বর্ণনা দিন তো?
–কিন্তু তার সম্পর্কে আপনার সব কিছুই জানা।
–তার সম্পর্কে আমরা সব জানলেও আপনি তাকে কী ভেবেছেন সেটা জানতে চেয়েছি। মার্জিত ব্যবহার করেছিলেন, এবং মনে হয়েছিল..টমকে উনি খুব ভালোবাসেন। টম ইংল্যান্ড থেকে চলে আসার পর সেখানে কী ঘটেছে সেসব কথা বলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, সাধারণ প্রতিবেশীদের গল্প বলে মনে হয়েছিলো। আমি তাদের কাউকে দেখিনি, চিনিও না, এ আলোচনা আমি শুনিওনি। ওরা যখন স্মৃতিচারণে মশগুল, তখন আমি রাতে খাবার তৈরিতে ব্যস্ত ছিলাম।
রাজনৈতিক কোনো আলোচনা এসে পড়েনি?
–আপনি কি আবার বলতে চাইছেন তিনি কমিউনিস্ট। অলিভ বেটারটনের মুখটা আরক্ত হয়ে উঠলো। আমি নিশ্চিত যে তিনি এরকম ব্যাপারের সঙ্গে জড়িত নন। যতদূর জানি সরকারী কাজে জিলা-এ্যাটর্নী অফিসে এসেছিলেন তিনি। টম একবার তাকে আমেরিকায় ‘ডাইনী ধরার ব্যাপারে কী যেন একটা রসিকতা করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে উনি গম্ভীর হয়ে বলেছিলেন, আমেরিকায় ওটার প্রয়োজন আছে, আমরা এখানে বসে সেটা বুঝতে পারবো না। এর থেকেই বোঝা যায় উনি কমিউনিস্ট নন।
মিসেস বেটারটন, অত উত্তেজিত হবেন না।
–আমি হাজারবার বলছি টম কমিউনিস্ট ছিলেন না। আর আপনি আমাকে বিশ্বাস করছেন না।
–হ্যাঁ এবার বাইরের দুনিয়া থেকে আসা দ্বিতীয় ব্যক্তি ডঃ মার্ক লুকাস, লন্ডনের ডরসেটে তার সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয় আপনাদের।
-হ্যাঁ, আমরা ডরসেটে নৈশাহার করছিলাম। রসায়ণশাস্ত্রের গবেষক, নাম লুকাস, এগিয়ে এসে টমকে জড়িয়ে ধরলেন। টম যখন আমেরিকায় থাকতো তখনই তার সাথে শেষ দেখা। পরে ভদ্রলোক আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। এসব তো…
-হ্যাঁ, এসব আমি জানি। ভদ্রলোককে দেখে আপনার স্বামী কি খুব খুশী এবং অবাক হয়েছিলেন?
–হ্যাঁ, ভীষণ খুশী এবং ভীষণই অবাক হয়েছিলেন।
–আপনি নিশ্চিৎ নন? জেসপ বললেন।
–টম যে তাকে খুব একটা পাত্তা দেয়নি সেটা পরে ও আমাকে বলেছিল।
–এটা কি নিছকই সাক্ষাৎকার আপনার মনে হয়? পরে কি আবার দেখা-সাক্ষাৎ করার দিন ধার্য হয়নি?
-না, এটা নিছকই হঠাৎ দেখা।
-এবার বাইরে থেকে আসা তৃতীয় ব্যক্তি হলেন একজন মহিলা, নাম–ক্যারল স্পীডার। এঁকে আপনার কেমন মনে হয়েছে?
-ভদ্রমহিলার জাতিসঙ্ঘে কোনো কাজ ছিলো। একদিন টমকে জিজ্ঞেস করেন মধ্যাহ্নভোজে আসতে পারবেন কিনা?
–আপনারা গিয়েছিলেন?
–না।
–আপনি যাননি, কিন্তু আপনার স্বামী গিয়েছিলেন।
–কি বললেন? অলিভ বললেন।
–যেন আপনাকে উনি কিছু বলেননি?
–না।
অলিভ বেটারটন কেমন যেন হতচকিত হয়ে গেলেন। জেসপ আশার আলো খুঁজে পেলেন। মিসেস বেটারটন বললেন, আমি বুঝতে পারছি না টম এ ব্যাপারে আমাকে কিছু বলেনি কেন?
–হ্যাঁ, ১২ই আগস্ট বুধবার মিসেস স্পীডার যেখানে থাকতেন সেখানেই মধ্যাহ্নভোজ সারেন।
–বারোই আগস্ট?
হা। হা…ঐ সময়ে ও লন্ডন গিয়েছিল বটে কিন্তু আমাকে কিছুই বলেনি। হঠাৎ একটা প্রশ্ন করে বসলেন, ভদ্রমহিলাকে কেমন দেখতে বলুন তো?
জেসপ সঙ্গে সঙ্গে বললেন, বয়স তিরিশের কাছাকাছি, উদ্ভিন্নযৌবনা নন, কর্মদক্ষ এবং চটপটে। সুন্দরী নন, আপনার স্বামীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা ছিলো এরকম খবরও নেই। তাই অদ্ভুত লাগছে এই সাক্ষাৎকার কেন তিনি গোপন করলেন?