অ্যান্ড্রু তুমি কি ভাবছো তখন কোনো সুযোগ পাওয়া যাবে…?
-না, তা আমি মনে করছি না। কারণ, আমার ধারণা ওই সময়ে যথেষ্ট কড়া ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু এর থেকে অনেক ধারণা গড়তে পারবো–এই সময়ে কেমন ধরনের ব্যবস্থা করা হয়। সেইমতো পরের বার কিছু ব্যবস্থা করা যাবে। এই সময়টাতে জেনসেনকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখলে ওর কাছ থেকে খোঁজখবর আদায় করতে পারবো।
-যারা আসছে তারা এখানকার সম্পর্কে সবকিছু জানে?
–আমাদের-মানে এই সংস্থা সম্পর্কে কিছু জানে না। আমার মনে হয় ওরা শুধু এখানকার ব্যবস্থাপত্র দেখবে একটু, বড়জোর ডাক্তারি গবেষণাগারগুলো একবার পরিদর্শন করবে। এই জায়গাটাকে ইচ্ছে করেই একটা গোলকধাঁধার মতো করে সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে বাইরের কেউ ভেতরে এলেও এর কোথায় কী আছে সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা করতে না পারে। আমার ধারণা–কোনো একটা গোপন দরজা আছে, যেটা বন্ধ করে দিলে আমাদের এদিকটা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সবকিছুই যেন কেমন অদ্ভুত শোনাচ্ছে। জানি, এখানে থাকলে অর্ধেক সময়ই স্বপ্নের ঘোরে কাটাতে হয়। এখানকার সবচেয়ে আশ্চর্য জিনিষ হচ্ছে–এখানে একটি শিশু দেখা যায় না। নেই তাই রক্ষে! তোমারও যে কোনো শিশুসন্তান নেই এটা তোমার পক্ষে যথেষ্ট সুখের বিষয়।
হিলারীকে হঠাৎ কেমন আড়ষ্ট হয়ে যেতে দেখলো পিটার্স। নিজেও সে অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। আমি দুঃখিতনা জেনে হয়তো ভুল কিছু বলে ফেলেছি!
-না না, কিছু ভুল বলনি তুমি। সত্যিই আমার সন্তান ছিলো…সে মারা গেছে…
–তোমার সন্তান ছিলো? বিস্ময়ে স্থির হয়ে তাকালো পিটার্স। আমি ভেবেছিলাম–মানে শুনেছিলাম যে বেটারটনের সঙ্গে তোমার মাত্র ছমাস আগে বিয়ে হয়েছে!
অলিভ আরক্ত হয়ে উঠলো, তাড়াতাড়ি বললো, হ্যাঁ ঠিকই শুনেছে। কিন্তু আমি আগেও একবার বিয়ে করেছিলাম। প্রথম স্বামীর সঙ্গে আমার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে।
হিলারী বলে উঠলো, আমিও তোমার কথা কিছুই জানি না। কেমনভাবে তুমি মানুষ হয়েছে, কোথায়–তোমার বাড়ির কথা
–আমি একদম কড়া বৈজ্ঞানিক আবহাওয়ায় মানুষ। বিজ্ঞানের কথা ছাড়া আর কোনো কথা কেউ বলতো না। হঠাৎ পিটার্স বলে উঠলোনাঃ, ওসব কথা আর ভাবতে চাই না–এখানে, এই মুহূর্তে আমাদের অনেক কাজ রয়েছে।
হিলারী, টরকুইল এরিকসনকে দেখে চিন্তা করলো যে ওর সাথে বোরিস গ্লাইদরের বর্ণনা হুবহু মিলে যাচ্ছে। জেসপের কাছ থেকে বোরিসের যে বর্ণনা শুনেছিলো, তার সঙ্গে এ বর্ণনার এতটুকুও পার্থক্য নেই। হিলারী পিটার্সকে জিজ্ঞেস করলো, উনি সত্যিই এরিকসন তো? মানে–অন্য কেউ হতে পারে না নিশ্চয়? না মানে আমি বলতে চাইছি–উনি এরিকসন সেজে এখানে আসেননি তো?
ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করলো পিটার্স। না, আমার তা মনে হয় না, ও যে বিজ্ঞানী এতে কোনো সন্দেহ নেই, তাছাড়া…এরিকসন, ওদেশে অতি সুপরিচিত ব্যক্তি।
–কিন্তু এখানকার কেউ তো ওঁকে আগে কখনো দেখেনি? কিংবা একদিকে উনি হয়তো সত্যিই এরিকসন, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় একটা সত্তাও ওঁর থাকতে পারে।
-তুমি বলতে চাইছে-এরিকসন দ্বৈত জীবন যাপন করছে? হ্যাঁ, তা হতে পারে। কিন্তু এটা বোধহয় ঠিক বাঞ্ছনীয় নয়।
-না! মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়।
না, এরিকসন কক্ষনো বোরিস গ্লাইদর হতে পারে না। কিন্তু অলিভ বেটারটন কেন বার বার টমকে বোরিস সম্পর্কে সাবধান করে দেবার জন্য পীড়াপীড়ি করেছিলো? সে কি জানতে পেরেছিলো যে, রোরিস এই সংস্থায় আসার জন্য রওয়ানা হয়ে গেছে? আচ্ছা এও তো হতে পারে–লন্ডনে যে লোকটা বোরিস গ্লাইদর বলে পরিচয় দিয়েছিলো, আসলে সে বোরিস নয়? সেই হয়তো আসলে টরকুইল এরিকসন! বর্ণনার সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। এখানে আসার পর থেকে সে টমের প্রতি বড্ড বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। যাইহোক্ এরিকসন যে একজন সাংঘাতিক লোক হতে পারে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
অলিভ-কী হলো তোমার? এমন করছো কেন?
-নাহ ও কিছু না। ওদিকে দেখো, সহকারী পরিচালক বোধহয় কিছু ঘোষণা করবেন বলে মনে হচ্ছে।
ডাঃ নিয়েলসন হাত তুলে সবাইকে চুপ করতে বলছিলেন, বন্ধু এবং সহকর্মীবৃন্দ। আগামীকে আপনাদের সকলকে জরুরী বিভাগে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। বেলা ঠিক এগারোটার সময়ে আপনারা এক জায়গায় জড়ো হবেন, সেখানে প্রত্যেকের নাম ডাকা হবে। আপনাদের সামান্য যেটুকু অসুবিধা হবে তার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।এই বলে তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন, আবার বাজনা শুরু হলো।
আবার আমাকে জেনসেনের শরণাপন্ন হতে হবে, পিটার্স বললো। থামের আড়াল থেকে ও সাগ্রহে আমাকে লক্ষ্য করছে। ওর কাছ থেকে জেনে নিতে হবে, এই জরুরী বিভাগের কোথায় কী আছে। এই বলে সে জেনসেনের দিকে এগিয়ে গেলো।
নতুন করে আবার ভাবতে লাগলো অলিভ। সত্যিই কি তার এই চিন্তাটা নেহাত কল্পনা? টরকুইল এরিকসন? বোরিস গ্লাইদর? এরা কি…
বিশাল হলঘরে এক এক করে নাম ডাকা হচ্ছিল। সবাই উপস্থিত। নাম ডাকার সঙ্গে সঙ্গে এক-একজন করে সাড়া দিচ্ছিলো। নাম ডাকা শেষ হতে সবাইকে দাঁড় করানো হলো, তারপর কুচকাওয়াজের ভঙ্গিতে এগিয়ে যাবার নির্দেশ দেওয়া হলো।
পথ সেই একই রকম, অজস্র বারান্দায় পাক খাওয়া গোলকধাঁধার জটিলতা। অলিভ পিটার্সের পাশে পাশে হাঁটছিলো। পিটার্সের হাতের চেটোয় যে ছোট্ট দিকদর্শক যন্ত্র লুকানো আছে, সে জানে। এর থেকে পিটার্স একমনে দিক ঠিক করার চেষ্টা করছিলো।