হিলারী বললো, হয়তো এটাই স্বাভাবিক। হিলারী টমের পাশে গিয়ে বসলো। বললো, তোমার কী হয়েছে বলে তো টম?
–তোমাকে তো বলেছি, একটুও কাজে মন বসাতে পারছি না আমি। বিজ্ঞানী হিসেবে আমি চুরচুর হয়ে ভেঙে পড়েছি। এই জায়গা
–অন্যেরা সবাই-বা বেশির ভাগ লোকই এখানে–তোমার মতো কই ভাবে না তো?
–কারণ–তারা সব জঘন্য অনুভূতিশূন্য মানুষের খোলস।
অনেকেরই কিন্তু অনুভূতি বেশ প্রবল। তোমার যদি এখানে একজন বন্ধু থাকতো সত্যিকারের একজন বন্ধু
-হ্যাঁ আছে, ওই মার্চিসন। মাথায় অবশ্য কিসসু নেই। সম্প্রতি টরকুইল এরিকসনের সঙ্গে বেশ জমিয়ে নিয়েছে।
–সত্যিই মাথা আছে লোকটার। ওর মতো যদি আমার বুদ্ধি থাকতো।
হিলারী বললো, কেমন যেন অদ্ভুত লোক। ভদ্রলোককে তো আমার সবসময়ে ভীতিকর বলে মনে হয়।
–ভীতিকর? টরকুইল? না না–একেবারে মাটির মানুষ ও। ছোট্ট শিশুর মতো–দুনিয়া সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই জন্মায়নি এখনও।
হিলারী আতঙ্কে বললো, তবুও আমার যেন কেমন ভয় ভয় করে।
–উ–তোমার মনের জোর কমে আসছে মনে হচ্ছে।
-এখনও কমেনি, তবে কমবে বলেই ভয় হচ্ছে। টম-তুমি ওই টরকুইল এরিকসনের সঙ্গে বেশি মিশো না।
স্থির চোখে তাকালো টম, কেন?
-তা জানি না। কিন্তু আমার মনে হয়–আমি অনুভব করি এটা।
.
১৭.
ঘনঘন কাঁধ ঝাঁকাতে লাগলো লেবল্যাঙ্ক। ওরা যে আফ্রিকা ছেড়ে গেছে, এটা কিন্তু নিশ্চিত।
ফরাসি ভদ্রলোকটি বললো, ঠিক নিশ্চিত না হলেও সেটা একটা সম্ভাবনার দিক।
–আমরা যা ভাবছি সেটাই যদি ওদের গন্তব্যস্থল হয়, তাহলে আফ্রিকা থেকে ওরা যাত্রা শুরু করবে কেন? ইউরোপের যে-কোনো স্থল থেকেই এটা অনেক সহজ হতে পারতো।
–তা ঠিক। কিন্তু এখানে জড়ো হয়ে এখান থেকে যাত্রা করার কথা কেউ সন্দেহই করতে পারবে না।
এছাড়া আরো কিছু কারণ আছে বলে আমার মনে হচ্ছে, জেসপ বললো। ওই বিমানবন্দরে একমাত্র ছোট প্লেনই ওঠানামা করে। ভূমধ্যসাগর পার হবার আগে তাকে তেল নেবার জন্য এখানে নামতেই হবে। আর এখানে তারা তেল নিতে নামবে, সেখানে কিছু না কিছু সূত্র পড়ে থাকবেই।
–তেজস্ক্রিয়তা ধরার বিশেষ যন্ত্রে একসময়-না-একসময়ে ধরা পড়বেই। খুব অল্প সংখ্যক প্লেন পরীক্ষা করলেই চলবে।
জায়গাটা আমরা খুঁজে পাবোই। জেসপ নাছোড়বান্দা হয়ে বললো। আমার মনে হচ্ছে কি জানো?
আমরা তো ধরেই নিয়েছি ওরা উত্তর দিকে গেছে–মানে ভূমধ্যসাগরের দিকে-ধরো তার বদলে, ওরা যদি দক্ষিণে গিয়ে থাকে।
–মানে–একই পথে ওরা দুবার ঘুরে গেছে বলতে চাইছেন? কিন্তু তাহলে ওরা যাবে কোথায়? সুউচ্চ অ্যাটলাসের উঁচু উঁচু চুড়ো–আর তার ওপারে অনন্ত বিস্তৃত মরুভূমি।
.
মিশকালো গম্ভীর মুখটার দিকে চিন্তিতভাবে তাকালো পিটার্স। ওই কালো চেহারায় ধবধবে সাদা পোশাকে অপূর্ব দেখাচ্ছিলো মহম্মদকে। পিটার্স বললো, আমরা যদি এখান থেকে বেরোতে পারি তবেই তোমার বাসনাটা পূরণ হবে।
কালো ঠোঁটের আড়াল থেকে ঝকঝকে কটা সাদা দাঁত হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। না পারলে মৃত্যু আমার ক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত। আপনার ক্ষেত্রে হয়তো তা হবে না কারণ এদের কাছে আপনি মূল্যবান।
–এখানে এরা মৃত্যুকে খুব সাধারণ চোখে দেখে, তাই না?
মহম্মদ বললো, মৃত্যু! কী তা জানি না। সেটাও নিশ্চয়ই আল্লাহর ইচ্ছা।
-তোমাকে কী কী করতে হবে বুঝে নিয়েছ তো?
-বুঝেছি, বাবু। অন্ধকার নামলে আপনাকে ছাদে নিয়ে আসতে হবে। আমি আর অন্যান্য চাকরবাকরেরা যে পোশাক পরি, সেইরকম একটা পোশাক আপনার ঘরে রেখে আসতে হবে। পরে–অন্য কাজগুলো করতে হবে।
-ঠিক আছে, এবার বরং তুমি আমাকে লিফট থেকে নামিয়ে দাও। কেউ হয়তো দেখে ফেলবে যে, বার বার আমরা ওঠানামা করছি। হয়তো কিছু সন্দেহ করবে।
নাচ চলছিলো, অ্যান্ড্রু পিটার্স জেনসেনের সঙ্গে পা মেলাচ্ছিলো। জেনসেনের কানের কাছে কিছু বলছিলো। ঘুরতে ঘুরতে ওরা হিলারীর কাছে এলো। আর তখনি হিলারীকে চোখ টিপে কী যেন ইঙ্গিত করলো।
হিলারী দ্রুত চোখ সরাতেই ওধারে বেটারটনকে দেখলোটরকুইল এরিকসনের সঙ্গে গল্প করছে। দুজনকে একসাথে দেখে নিজের অজান্তেই ভুরু দুটো কুঁচকে উঠলো হিলারীর।
হিলারীর কানের কাছে এসে মার্চিসন জিজ্ঞেস করলো, আমাদের সঙ্গে একটু নাচবে নাকি অলিভ?
বললো, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই নাচবো, সাইমন।
মার্চিসন সাবধান করে দিলো হিলারীকে, আগেই কিন্তু বলে রাখছি, আমি মোটেই ভালো নাচতে পারি না। হিলারীকে বললো, বিয়াঙ্কাকে তোমার কথা বলেছিলাম, এখানে এসে চমৎকার মানিয়ে নিয়েছ তুমি। সত্যিই চমৎকার জায়গা। টাকাপয়সার জন্য ভাবতে হয় না, আয়কর দেবার ঝঞ্ঝাট নেই, কোথায় কখন কোনটা প্রয়োজন, আগে থেকেই সে ব্যবস্থা করে রাখে।
আচ্ছা–টম কোথায় গেলো?–ও ওই তো টরকুইলের সঙ্গে গল্প করছে। টরকুইল ডোকরা তোমার ভক্ত হয়ে পড়েছে।
এক চক্কর নাচ শেষ হলো। অ্যান্ড্রু পিটার্স পরের বার হিলারীর সঙ্গে নাচতে চাইলো।
–আমি আমার কাজ গোছাচ্ছিলাম, দেখেছো তো? আঁ! ওই জেনসেনের সঙ্গে?
–হা, রাখঢাক না করে যদি বলি তাহলে বলতে হয়, এই ধরনের মেয়েদের পটাতে পারলে খুব সহজেই গলে যায়।
-তুমি নিশ্চয়ই ওর প্রেমে পড়ার ভান করছো?
-তা তো বটেই। এই মেয়েটাকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে অনেক খোঁজখবর আমরা পাবো; অলিভ, এখানকার অভিসন্ধি ও সব জানে। এখানে কিছু লোকের সমাবেশ ঘটবে, এটা ওঁর কাছ থেকে জানতে পারলাম।