লোকটি বললো, আমাদের যে জিনিসটা দেখানো হয়েছিলো, এটা প্রায় সেইরকম দেখতে। দামি জিনিষ ভেবে এটা কুড়িয়ে নিয়েছিলাম।
জেসপ প্রায় ছোঁ মেরে মুক্তোটা তুলে নিলেন। পকেট থেকে ঠিক ওই রকম আর একটা মুক্তো বের করে দুটোকে পরীক্ষা করতে লাগলেন।
এই তো, হ্যাঁ ঠিক সেই দাগটা রয়েছে, গলায় তার খুশি উপচে পড়লো। টেবিলের কাছে ফিরে এসে বললেন, লক্ষ্মী মেয়ে, সত্যিই লক্ষ্মী মেয়ে সোনা মেয়ে। কাজটা তাহলে করতে পেরেছে।
লেবল্যাঙ্ক তখন লোকটিকে আরবি ভাষায় কী সব যেন জিজ্ঞেস করে জেনে নিচ্ছিলো। জেসপকে বললো, আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, মিঃ জেসপ। এই লোকটা বলছে, মুক্তোটা সে নাকি ওই জলন্ত প্লেনটা থেকে প্রায় আধমাইল দূরে পেয়েছে।
জেসপ বলতে লাগল, যা থেকে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে, অলিভ বেটারটন মারা যায়নি। যদিও বলা হয় ফেজ থেকে প্লেনটা সাতজন যাত্রী নিয়ে রওনা হয়েছিলো এবং তাতে সাতটা ঝলসানো দেহই পাওয়া গিয়েছিলো, তবু বলা যেতে পারে সাতটা মৃতদেহের মধ্যে একটা অন্তত অলিভ বেটারটনের নয়।
এবার তাহলে আমরা জোর তল্লাশী করতে পারি, বলে লেবল্যাঙ্ক লোকটির সঙ্গে আরো কি যেন কথা বললো। লোকটি খুশি হয়ে অন্য লোকটির সঙ্গে বেরিলয়ে গেলো। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ওকে ভালো পুরস্কারই দিতে হবে-জেসপকে সে বললো। আর এবার ওই মুক্তোগুলোর খোঁজ নিতে আশপাশের গ্রামগুলোয় ব্যাপক তল্লাশী করবো। আমি ভাবছি, মিঃ জেসপ, এবার আমরা সুফল পাবোই-শুধু বেটারা যদি মিসেস বেটারটনের ফেলে যাওয়া সূত্রগুলো ওলটপালট না করে ফেলে।
জেসপ আস্তে আস্তে ঘাড় নাড়ল। অথচ কত স্বাভাবিক ব্যাপার এটা। কত মেয়েই তো গলায় অমন মুক্তোর আঁটো হার পরে। আর তা যে-কোনো সময়ে ছিঁড়ে-যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। এরপর শুধু পকেটে একটা ছোট্ট ফুটো থাকলেই হলো। যেখানে যেমন দরকার একটি করে মুক্তো সেই ফুটো দিয়ে ঠেলে গলিয়ে ফেলে দেওয়া, ব্যস। তাছাড়া ওকে তারা সন্দেহই বা করে কেন? সে অলিভ বেটারটন স্বামীর সঙ্গে দেখা করার জন্য আকুল হয়ে চলেছে।
লেবল্যাঙ্ক বললো, ব্যাপারটা আমাদের পর্যালোচনা করতে হবে। অলিভ বেটারটন, ডাক্তার ব্যারন, নাম দুটোর নীচে তালিকায় দাগ দিলো। অতন্ত এই দুজনে যে সেখানে যাচ্ছিল এটা নিশ্চত, এদের গন্তব্যস্থল এক। ঐ বিমানের যাত্রীদের একই দিনে, একই প্লেনে নিয়ে যাবার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে অত্যন্ত সুচতুরভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিলো। তারপর জ্বলন্ত প্লেনটা আবিষ্কার করা হলো–ভেতরে সমসংখ্যক মৃতদেহ। কিন্তু কী করে এটা সম্ভব করলো সেটাই আশ্চর্য।
-হ্যাঁ, বিশ্বাস করানোর মতো সূক্ষ্ম নিখুঁত কাজ। আমরা কিন্তু এখন জেনে ফেলেছি, ওই ছ-সাতটা নোক আবার নতুন করে যাত্রা শুরু করেছিলো। কোথা থেকে তারা তাদের নতুন যাত্রা আরম্ভ করেছে সেটাও আমরা জানতে পেরেছি। এরপর আমাদের জায়গাটা দেখে আসা উচিত নয় কি?
–সে তো একশোবার, অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে গিয়ে বসবো আমরা। আর আমার ধারণা যদি ভুল হয় তাহলে, একবার এই সূত্র ধরে এগোতে শুরু করলে অন্যান্য প্রমাণগুলো পেয়ে যাবো।
একদিন লেবল্যাঙ্ক লাফিয়ে উঠে বললো, আব্দুল মহম্মদ নামে একজনের বাড়ির পায়খানার এক অন্ধকার কোণে চেবানো চুইংগামে আটকানো একটা মুক্তো পেয়েছি। আব্দুল এবং তার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কিন্তু প্রথমে তারা বলতে চাইছিলো না। তারপর ভয় দেখানোর পর বললো, একটা মোটরগাড়িতে ছজন লোক একদিন এসে তাদের বাড়িতে রাত্রিবাস করেছিলো। বলেছিলো তারা নাকি জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ। অনেক টাকা ওদেরকে দিয়ে বলেছিলো কাউকে যেন কিছু না বলে। কারণ তারা নাকি এক অভূতপূর্ব বিস্ময়র খননকার্যে যাচ্ছে, যা কাউকে জানাতে চায় না। এ কেইফ গ্রামের কটা বাচ্চা ছেলে দুটো মুক্তো কুড়িয়ে পেয়েছে। আপনার ভবিষ্যৎবাণী অনুসারে, ওই যে ওকে ধরে এনেছি ও আপনাকে এ ব্যাপারে সবকিছু বলতে পারবে।
ওই যে–বলে যাকে দেখালো সে একজন স্থানীয় লোক, বিকট দেখতে। বললো, সেদিন রাত্তিরে আমি আমার দলবল নিয়ে ফিরছিলুম, হঠাৎ একটা মোটরগাড়ির আওয়াজ কানে এলো। গাড়িটা সাঁ করে পাশ দিয়ে বেরিলয়ে গেলো–আর স্পষ্ট দেখলুম, গাড়ির একপাশে ফতিমার হাত। হ্যাঁ বাবু, বিশ্বাস করুন, ওই অন্ধকারেও হাতটা জ্বলজ্বল করে জ্বলছিলো।
দস্তানার গায়ে ফসফরাস মাখিয়ে দিলে চমৎকার ফল পাওয়া যায়, প্রায় ফিসফিস করে জেসপের কানে কানে বললো লেবল্যাঙ্ক। আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ দেবো স্যার–এরকম একটা চিন্তা মাথায় আসা
-এটা খুব কার্যকরী হয়, জেসপ বললেন, কিন্তু ভীষণ বিপজ্জনক কাজ! মানে-একটা সাংঘাতিক কাজ করে পালাবার সময় অপরাধীরা এত সজাগ হয়ে থাকে যে, যে-কোনো সময়েই তারা এটা দেখে ফেলতে পারে।
দিনের বেলা এটা তো আর দেখা যায় না।
–না। কিন্তু অন্ধকারে যদি কোনো কারণে তারা গাড়ি থেকে নামে তো
-তখন ওরা কিছু ভাববে না। এটা আরবদেশের এত প্রচলিত কুসংস্কার যে কিছু সন্দেহই করতে পারবে না ওরা। কত গাড়িতেই ওই হাত এঁকে দেওয়া হয়। বড়জোর ওরা ভাববে, কোনো ধার্মিক মুসলমান বেশি করে চোখে পড়ার জন্য–কোনো জ্বলজ্বলে রঙ দিয়ে তাদের গাড়িতে ওঠার ছাড় দিয়েছে।