-না, একজন পাকা পথপ্রদর্শক সঙ্গে ছিলেন। পুরোনো শহরেই হয়তো কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকবে।
–যে কারণেই হোক, তিনি একেবারে হঠাৎ ম্যারাকেশ যাওয়া ঠিক করে ফেলেন।
–হেদারিংটন বললেন, একেবারে নয়, আগে থেকেই ওঁর জন্য আসন সংরক্ষিত ছিলো।
-ও হ্যাঁ, আমি ভুল করেছি–জেসপ বললেন, আমি বলতে চেয়েছিলাম, মিসেস কেলভিন বেকারই একেবারে হঠাৎ তার সঙ্গে যাওয়া ঠিক করে ফেললেন, উঠে পড়ে তিনি অস্থির ভাবে পায়চারি করতে লাগলেন। উনি ম্যারাকেশের পথে পাড়ি দিলেন…আর প্লেনটা ধাক্কা খেয়ে জ্বলতে জ্বলতে আছড়ে পড়লো। কেমন যেন দুর্ভাগ্যের পূর্ব লক্ষণ–যেন অলিভ বেটারটন নামে কেউ প্লেনে চড়লেই তা ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রথমে ক্যাসাব্ল্যাঙ্কার কাছে দুর্ঘটনা ঘটলো, তারপর এইটা। এটা কি সত্যিই দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পনা করে ঘটানো? যদি এমন কেউ থাকে, যে বা যারা অলিভ বেটারটনের হাত থেকে রেহাই পেতে চায়। তারা তো-আমি বলবো, একটা প্লেন ধ্বংস করার চেয়ে অনেক সহজ উপায়ে এটা করতে পারতো।
-কে বলতে পারে বলুন, লেবল্যাঙ্ক বললো, আমাকে ভুল বুঝবেন না,-একবার যদি মনের এই অবস্থায় পৌঁছতে পারেন, যেখানে মানুষের জীবন নেওয়াটাই তুচ্ছ ব্যাপার, তখন কাউকে মারার জন্য অন্ধকার গলিখুঁজিতে ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে প্লেনের একটা আসনের তলায় কিছুটা বিস্ফোরক পদার্থ রেখে দেওয়া অনেক সহজ। তাতে করে আরো ছটা লোক যদি মারা যায় তত ভারি বয়েই গেলো।
-তা ঠিক, জেসপ বললেন, আমি জানি, আমার সঙ্গে কেউ একমত হবে না, কিন্তু তবুও আমার দৃঢ় ধারণা এর একটা তৃতীয় সমাধান নিশ্চয় আছে। আমার ধারণা–এই দুর্ঘটনা সাজানো ব্যাপার।
উদগ্রীব চোখে তাকালো লেবব্যাঙ্ক, হ্যাঁ, এটা হতেই পারে। প্লেনটাকে নামিয়ে এনে হয়তো আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু একটা ঘটনা আপনি উড়িয়ে দিতে পারেন না, মিঃ জেসপ–প্লেনের মধ্যে সত্যিকারের মানুষ ছিলো। হ্যাঁ, সত্যিকারের কটা ঝলসানো দেহ।
–জানি, আর এইটাই যা কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। না, না আমার এই কল্পনা যে সম্পূর্ণ অবাস্তব এ বিষয়ে আমার সন্দেহ নেই। কিন্তু এ যেন আমাদের এই অভিযানের এক চমৎকার পরিসমাপ্তি। আমাদের এগোবার মতো আর কোনো সূত্রই নেই। একটু থেমে আবার লেবল্যাঙ্ককে জিজ্ঞেস করলেন, ওদিকে যে অনুসন্ধান নিতে বলেছিলাম সেটা কদ্দূর এগোল?
–দুদিন ধরে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। লোকজনও অনেক লাগানো হয়েছে। প্লেনটা যেখানে পড়েছে, জায়গাটা একেবারেই নির্জন, হ্যাঁ, প্লেনটা কিন্তু পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিলো।
-যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, জেসপ বললেন।
–ওখান থেকে সবচেয়ে কাছের গ্রাম, সব থেকে কাছে জনবসতি এবং সবচেয়ে কাছের গাড়ির চাকার দাগ সবকিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজে পরীক্ষা করা হয়েছে। আপনার মতো আমাদের দেশেও এই অনুসন্ধানের গুরুত্ব কম নয়। ফ্রান্সে আমরাও আমাদের কজন অল্পবয়সী কৃতী বিজ্ঞানীকে হারিয়েছি। কী যে এদের মতিগতি, কে জানে!
–যাত্রী তালিকাটা আর-একবার পরীক্ষা করা যাক, কি বলল?
লেবল্যাঙ্ক তালিকাটা টেবিলের ওপর মেলে ধরতে দুজনেই ঝুঁকে পড়লো। মিসেস কেলভিন বেকার–আমেরিকান। মিসেস বেটারটন-ইংরেজ। টরকুইল এরিকসন, নরওয়েবাসী–এর সম্পর্কে কিছু জানা আছে?
যতদূর জেনেছি, সেটা কিছুই নয়, লেবল্যাঙ্ক জানালো সাতাশ-আঠাশ বছরের যুবক একজন।
জেসপ বললো, নামটা আমার যেন কেমন চেনা চেনা ঠেকছে, মনে হচ্ছে–হ্যাঁ ঠিক, রয়্যাল সোসাইটিতে উনি একবার ওঁর গবেষণাপত্র
–আর একজন সন্ন্যাসিনী দিদিমণি, লেবল্যাঙ্ক আবার তালিকায় মন দিলো। মিস্টার মেরী না কি যেন নাম। অ্যান্ড্রু পিটার্স, ইনিও আমেরিকান।
–ডাঃ ব্যারন–হ্যাঁ একটা প্রতিষ্ঠিত নাম–মাননীয় ডাক্তার ব্যারন। বিরাট প্রতিভাবান লোক। সংক্রামক ব্যাধির ডাক্তার হিসেবে ওঁর জুড়ি নেই।
-হুঁ, জীবাণুযুদ্ধে এঁদের খুব প্রয়োজন, বেশ মিলে যাচ্ছে।
টেলিফোনটা বেজে উঠলো। লেবল্যাঙ্ক ফোনটা তুলে নিলো, হ্যালো, কে বলছেন? আঁ? ও আচ্ছা, হ্যাঁ ওপরে পাঠিয়ে দাও। জেসপের দিকে তাকিয়ে বললো, আমার একজন তোক এইমাত্র খবর দিলো, মিঃ জেসপ, ওরা একটা কিছু খোঁজ পেয়েছে। হা, এটা সম্ভব, আমি স্বীকার করছি আপনার অবাস্তব কল্পনা অত্যন্ত সঠিক।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজন লোক ঘরে ঢুকলো। প্রথম জনের সঙ্গে লেবল্যাঙ্কের যথেষ্ট মিল আছে। কালো গাট্টাগোট্টা, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা। ভদ্রলোকের সঙ্গে একজন স্থানীয় গ্রাম্যলো, দেহাতী সাদা পোশাক গায়ে। অবাক দৃষ্টিতে সে ঘরের চারদিকে দেখছিলো, আর সেই সময়ে অন্য লোকটি দ্রুত ফরাসি ভাষায় বলছিলো
পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিলো এবং ভালোভাবে প্রচারও করা হয়। এ লোকটি এবং এর পরিবারের আর সবাই বিপুল উদ্যমে খোঁজ শুরু করে। ও যেটা খুঁজে পেয়েছে সেটা ওকে নিজে হাতে পৌঁছে দেবার জন্য এবং আপনার যদি ওকে জিজ্ঞাসা থাকে সেই জন্যই ওকে নিয়ে এসেছি।
স্থানীয় লোকটির দিকে তাকিয়ে লেবল্যাঙ্ক বললো, চমৎকার কাজ করেছো তুমি। কই দেখি, কী তুমি আবিষ্কার করেছ দেখাও।
কোচার ভাজ খুলে লোকটা একটা বস্তু বের করলো। এগিয়ে এসে টেবিলের ওপর রাখলো। বেশ বড়মাপের ধূসর লাল রঙের একটা মুক্তো।