–আপনি কি তাহলে পুলিসের প্রার্থিত ব্যক্তি?
-হ্যাঁ, কেন আপনি জানেন না? ও আচ্ছা, ওরা বোধহয় ব্যাপারটা তেমন প্রচার করেনি। হয়তো অলিভও জানতো না। কিন্তু সত্যিই আমি ফেরারী।
–আপনি কি–মানে বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলতে চাইছেন? মানে–আপনি এদের কাছে পারমাণবিক গোপনীয়তা বিক্রি করে দিয়েছেন?
বেটারটন ওর চোখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। কিছুই আমি বিক্রি করিনি। আমি শুধু আমাদের কাজের পদ্ধতিগুলো ওদের বলে দিয়েছি–সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়, নিঃস্বার্থভাবে দিয়েছি। যদি বিশ্বাস করেন বলবো আসলে আমিই ওগুলো ওদের দিতে চেয়েছিলাম। এটা সমগ্র গঠনব্যবস্থার একটা অংশ–বিজ্ঞানে সমস্ত জ্ঞানের একত্রীভবন। আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন না।
ঠিকই বুঝতে পারছিলো হিলারী, এও সে বুঝতে পারছে যে, অ্যান্ড্রু পিটার্সও ঠিক এই কাজই করছে। এই একই উন্মাদনায় পাগল।
হিলারীর মনে হলো, টম বেটারটন যে এই কাজে ব্রতী, এ যেন সে চিন্তা করতে পারছে না। বেটারটন মাত্র কমাস আগে প্রবল উৎসাহ আর আগ্রহ নিয়ে এখানে এসেছিলো, সেই বেটারটন এখন পরাজিত, বিধ্বস্ত–স্বপ্নের জগৎ থেকে আবার বাস্তব জগতে আছড়ে পড়া একটা সাধারণ মানুষের মতো ভীত-সন্ত্রস্ত।
কথাটা কতখানি ঠিক তা যাচাই করার সময় পেলো না সে। চারদিকে তাকিয়ে বেটারটন বললো, সবাই নেমে গেছে, আমরাও বরং
উঠে দাঁড়ালো হিলারী। হ্যাঁ চলুন। কিন্তু অত ঘাবড়াবার কী আছে? এটাই তো অস্বাভাবিক। ওরাও তাই ভাববে–এটাই স্বাভাবিক–অন্তত এই পরিস্থিতিতে।
বেটারটন কেমন যেন অদ্ভুতভাবে বললো, এইভাবেই আমাদেরকে থাকতে হবে, মানে আপনাকে আমার স্ত্রী হিসেবে থাকতে হবে।
–তা তো বটেই।
একই ঘরে থাকতে হবে–এইসব আর কি। তবে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন মানে আমাকে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই।
হিলারী বলে উঠলো, এসব ব্যাপার নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না। আমাদের আসল কাজ হচ্ছে, এখান থেকে জীবন্ত অবস্থায় পালানো।
.
১৪.
ম্যারাকেশের হোটেলে ম্যামাউনিয়ার একটা ঘরে জেসপ নামে সেই ভদ্রলোক মিস হেদারিংটনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ক্যাসাব্লাঙ্কা আর ফেজ-এ হিলারীর সঙ্গে যে হেদারিংটনের আলাপ হয়েছিলো, এ যেন সে হেদারিংটন নয়। একই রকম দেখতে, ঠিক যেন যমজ বোন, সেই একই রকম চুলবাঁধা, কিন্তু হাবভাব যেন সম্পূর্ণ আলাদা। এই মহিলা যেন অনেক চটপটে, কর্মদক্ষ, বয়েসও যেন অনেক কমে গেছে।
ঘরে তৃতীয় ব্যক্তিটি টেবিল চাপড়ে গুনগুন করে ফরাসি গানের কলি ভাঁজছিলো। লোকটির গায়ের রঙ কালো, বেশ শক্তসমর্থ চেহারা, চোখদুটো বুদ্ধির ছটায় উদ্ভাসিত।
তাহলে যতদূর আপনি জানেন, জেসপ বলছিলেন, কেবলমাত্র এই কটি লোকের সঙ্গে সে ফেজ-এ কথাবার্তা বলেছিলো?
জানেত হেদারিংটন ঘাড় নাড়লেন। কেলভিন বেকার নামে মহিলাটিও ওখানে ছিলো, যার সঙ্গে আগেই ক্যাসাব্লাঙ্কায় আমাদের আলাপ হয়েছিলো। তবে নির্দ্বিধায় আমি স্বীকার করছি, ভদ্রমহিলাকে এখনও আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। স্রেফ বন্ধুত্ব করার জন্যই সে আগ বাড়িয়ে অলিভ বেটারটনের সঙ্গে আলপ করেছিলো, আমার সঙ্গেও তাই। আমেরিকানদের স্বভাবই তাই। হোটেলে, গাড়িতে গায়ে পড়ে আলাপ করে, তাদের সঙ্গে বেড়াবার ছক তৈরি করে ফেলে।
–হুঁ! জেসপ বললেন, আমরা যা খুঁজছি তার পক্ষে এগুলো এতই অস্পষ্ট…
–আর তাছাড়া, হেদারিংটন বললেন, ভদ্রমহিলা ওই প্লেনেই ছিলেন।
–আপনার কী ধারণা–এই দুর্ঘটনাটা পূর্বপরিকল্পিত? জেসপ এবার ঘাড় ফিরিয়ে কালো মতন লোকটির দিকে তাকালেন, তোমার কী মনে হয়, লেবল্যাঙ্ক?
লেবল্যাঙ্ক বললো, অনেক কিছুই হতে পারে। হয়তো কেউ প্লেনের যন্ত্রপাতি বিগড়ে রেখেছিলো। যার ফলে এই দুর্ঘটনা। সেকথা তো আমরা কোনোদিনই জানতে পারবো না। প্লেনটা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে–সাক্ষ্য দেবার মতো একজনও বেঁচে নেই।
-প্লেনের চালক সম্পর্কে তোমার কিছু জানা আছে?
–আলকাডি? হা জোয়ান ছোকরা, মোটামুটি দক্ষ, ব্যস ওই পর্যন্ত।
লেবল্যাঙ্ক বললো, সাতটা মৃতদেহ পাওয়া গেছে। সবকটাই বিশ্রীভাবে পোড়া, সনাক্ত করা সম্ভব নয়, কিন্তু পুরো সাতটা মৃতদেহ। তার মানে–একজনও রেহাই পায়নি।
জেসপ হেদারিংটনের দিকে ফিরলেন, আপনি যেন কী বলছিলেন?
–ফেজ-এ একটি ফরাসি পরিবারের সঙ্গে মিসেস বেটারটনের দু-একটা কথাবার্তা হয়েছিলো। ওখানে আর ছিলো একজন সুইডিস ব্যবসাদার আর তার সুন্দর প্রেয়সী। আর ছিলেন, ব্যবসায়ী জগতের চূড়ামণি, কোটিপতি বৃদ্ধ : মিঃ অ্যারিস্টাইডস।
ও, সেই টাকার খনিটা ওখানে ছিলো?
লেবল্যাঙ্ক বললল, লোকে বলে বুড়োর নাকি সাঙ আমলের সব চীনা মৃৎ-শিল্প সংগ্রহের বাতিক আছে।
চীনারা নিজেরাই কিন্তু বলে, ষাট থেকে সত্তর বছর বয়সটাই জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। জীবনের এই সময়টাতেই সে জীবনের মাধুর্য ও সৌন্দর্য সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি মুখর হয়ে ওঠে।
আমি ওদের দলে নেই, বললো লেবল্যাঙ্ক।
–কজন জার্মানও ছিলো ফেজ-এ, জানতে হেদারিংটন বলে চললেন, কিন্তু যতদূর জানি, অলিভ বেটারটনের সঙ্গে তাদের কোনো কথাবার্তা হয়নি।
–কোনো পরিচারক বা ভৃত্যের সঙ্গে সম্ভবত কথা বলেছিলেন?
–সে তো সবসময়ই হতে পারে।
–আর–আপনি বলছেন, পুরোনো শহর দেখতে একাই বেরিলয়েছিলেন?