অলিভ মাথা নাড়লেন।
–সেদিন রাত্রে তিনি আর হোটেলে ফেরেননি। যতদূর খোঁজ পাওয়া যায় তাতে জানা গেছে তিনি নিজের ছাড়পত্র দেখিয়ে কোনো সীমান্ত অতিক্রম করেননি। আপনার কি মনে হয় অন্য কারো নামে তার কাছে দ্বিতীয় ছাড়পত্র ছিল?
-না তা কেন থাকবে?
জেসপ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, একরকম কোনো জিনিষ তার কাছে আছে। কি না লক্ষ্য করেননি?
অলিভ মাথা নেড়ে বললেন, না, আমি কিছুতেই বিশ্বাস করি না টম স্বেচ্ছায় কোথাও পালিয়েছে। যেটা আপনারা প্রতিপন্ন করতে চাইছেন। আমার বিশ্বাস তার কিছু একটা হয়েছে কিংবা স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে।
-তার স্বাস্থ্য তো বেশ ভালো ছিলো, তাই না?
হা! খুব বেশি প্রশ্ন করতেন দেখে একটু ক্লান্তি বোধ করতেন, এছাড়া আর কিছু না।
–তাকে দেখে কখনো চিন্তিত বা মনমরা মনে হতো?
-কোনো ব্যাপারে তিনি মনমরা থাকতেন না। অলিভ কাঁপা হাতে ব্যাগ খুলে রুমাল বের করলেন। বিশ্রী ব্যাপার সব, তার গলা কাঁপছে। অসম্ভব, আমাকে না বলে উনি কোথাও যেতেন না। নিশ্চয়ই ওকে কেউ গুম করেছে। এরকম ভাবতেও আমার গা শিউরে ওঠে। হয়তো বা উনি মারাও যেতে পারেন।
–আহা, দয়া করে শুনুন মিসেস বেটারটন, এতখানি খারাপ চিন্তা করবেন না, তিনি যদি মারা যেতেন তাহলে তার মৃতদেহ পাওয়া যেত।
–নাও হতে পারে। প্যারিসে সবকিছুই সম্ভব, হয়তো তাকে মেরে নর্দমায় খুঁজে দিয়েছে।
–আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি, প্যারিসে পুলিশী ব্যবস্থা অত্যন্ত সুষ্ঠু।
রুমালটা সরিয়ে নিয়ে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন অলিভ। আপনি কী ভাবছেন আমি জানি, কিন্তু সেটা সঠিক নয়। টম কখনোই গোপনীয়তাকে নিয়ে বিক্রি বা বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। টম কমিউনিস্ট নয়। তাঁর সারা জীবনের ইতিহাস একটা ভোলা বইয়ের পাতার মতো উন্মুক্ত।
-তার রাজনৈতিক বিশ্বাস কি ছিলো, মিসেস বেটারটন?
আমার ধারণা অ্যামেরিকায় ডেমেক্র্যাট ছিলেন কিন্তু এখানে শ্রমিক দলকে ভোট দিয়েছেন। রাজনীতিতে কোনোদিনই স্পৃহা ছিল না। তিনি শুধু বিজ্ঞানী–প্রতিভাবান বিজ্ঞানী; ব্যাস।
হ্যাঁ, জেসপ বললেন, উনি প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ছিলেন আর সেটাই ঘটনার মূলবস্তু। হয়তো এরজন্যই তাকে অনেক কিছুর লোভ দেখিয়ে এই দেশ থেকে অন্যদেশে নিয়ে যায়।
-না, এ ঠিক নয়। অলিভের চোখে ক্রোধের ঝিলিক খেললো। খবরের কাগজ প্রমাণ করতে চেষ্টা করছে এবং আপনারাও একই প্রশ্ন করছেন। অথচ এ সত্যি নয়। আমাকে আভাস না দিয়ে উনি কোথাও যেতে পারেন না।
–তিনি আপনাকে কিছুই বলে যাননি, তাই তো? জেসপ একথা বলে ওঁকে লক্ষ্য করতে লাগলেন।
কিছুই বলেননি। উনি কোথায় আছেন, না আছেন আমি কিছুই জানি না। ওকে গুম করা হয়েছে হয়তো বা মেরেও ফেলা হয়েছে। বিশ্বাস করুন, এভাবে আর আমি চলতে পারছি না। খেতে পারি না, ঘুমোতে পারি না, অসহ্য, আপনি আমাকে সাহায্য করতে পারেন না?
জেসপ চেয়ার ছেড়ে এসে বলতে লাগলেন, মিসেস বেটারটন, আমি দুঃখিত। আপনার স্বামীর খোঁজ পাবার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। দেশবিদেশের প্রান্ত থেকে রোজই কিছু-না-কিছু খবর আসছে।
অলিভ তীক্ষ্ণ স্বর করে বললো, কোথাকার খবর, কী খবর আসছে?
–অনেকের খবর। খবরগুলো বাছাই করে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। জানেনই তো, . এসবের ক্ষেত্রে দেখা যায় শেষ পর্যন্ত সবকিছুই ফক্কা।
-কিন্তু আমাকে সবকিছু জানতে হবে, অলিভ বলতে লাগলেন। এভাবে চলা অসম্ভব।
–স্বামীর জন্য খুব চিন্তা করেন, মিসেস বেটারটন?
–অবশ্যই চিন্তা করি। চিন্তা করাই স্বাভাবিক, মাত্র ছমাস হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে।
-আমি জানি, তবু একটা কথা জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হচ্ছি বলে মাফ করবেন–আপনাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাটি বা অন্য কোনো মহিলাকে নিয়ে মন কষাকষি হয়েছিল?
-মোটেই না–একথা আপনাকে আগেও বলেছি। গত এপ্রিল মাসে মাত্র আমাদের বিয়ে হয়েছে।
–আপনি বিশ্বাস করুন একথা আমি মোটেই বোঝাতে চাইছি না যে, এমন কোন ঘটনা ঘটেছে–কিন্তু একজন মানুষ হঠাৎ উবে গেলে তার সবদিক খুঁটিয়ে দেখা একান্ত প্রয়োজন। তাহলে আপনি বলছেন–বর্তমানে আপনার স্বামীকে এখনও উদ্বিগ্ন বা চিন্তিত বা কোনো বিষয়ে চঞ্চল বলে মনে হয়নি?
আপনি হয়তো জানেন মিসেস বেটারটন, আপনার স্বামী যে ধরনের কাজ করেন বা পরমাণুসংক্রান্ত কাজ, এটাতে কঠোর নিরাপত্তা মেনে চলতে হয়। এই অবস্থায় মাথা খারাপ হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
অলিভ না হেসে বললেন, উনি অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিলেন।
–নিজের কাজকর্ম সম্পর্কে উনি কি খুব খুশী ছিলেন? আপনার সঙ্গে কাজকর্ম সম্বন্ধে আলোচনা করতেন?
-না, ওসব বড়ই কুটচালের ব্যাপার।
–তিনি যে এই আণবিক বোমার বিধ্বংসী সম্ভাবনা সম্পর্কে বিবেকের তাড়নায় অস্থির হয়ে উঠেছিলেন একথা আপনি মনে করেন না, তাই তো? বিজ্ঞানীরা কিন্তু এক-একসময় এই কথাটা খুব বেশি করে অনুভব করেন।
না–তাকে এ ধরনের কথা কখনো বলতে শুনিনি।
জেসপ বললেন, দেখুন মিসেস বেটারটন, আমি যা বলতে চাইছি তা হলো আপনার স্বামীর সম্পূর্ণ ছবি। তিনি কী ধরনের লোক ছিলেন সেটাই জানতে চেষ্টা করছি। কিন্তু আপনি আমাকে সাহায্য করছেন না।
-আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আমি দিয়েছি-এর থেকে বেশি আমি কী বলতে পারি?