–হু, সবার বেলাই এগুলো করা হয়। এটাই স্বাভাবিক বলে মনে হয়।
তোমার বেলাও এসব হয়েছিলো?
–হ্যাঁ, তা প্রায় সবই হয়েছিলো।
তারপর আমাকে দেখা করতে নিয়ে গেলো ওই যে সহকারী পরিচালক না কী বলে যেন, তার সঙ্গে।
হ্যাঁ, উনিই এই অঞ্চলটা পরিচালনা করেন। অত্যন্ত যোগ্য ব্যক্তি এবং সত্যিকারের ভালো প্রশাসক একজন।
-উনি তাহলে সংস্থার কর্তা নন?
–নানা সংস্থার মাথা হচ্ছেন খোদ পরিচালক নিজে।
–আমি তাকে দেখতে পাবো?
আশাকরি পাবে। তবে তিনি বড় একটা দেখা দেন না। মাঝে মাঝে এসে আমাদের সামনে বক্তৃতা করেন–চমৎকার ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষ।
বেটারটনের ভুরুর উপর ক্ষীণ একটা ভাজ পড়লো। হিলারীর বুঝতে অসুবিধে হলো না এ আলোচনা এখন বন্ধ করা উচিত, এ তারই ইঙ্গিত। বেটারটন ঘড়ি দেখে বললো, আটটায় নৈশভোজ। আটটা থেকে সাড়ে আটটা। তুমি তৈরি হলে, চলো নিচে নামি। এমনভাবে বললো, হিলারীর মনে হলো ঠিক যেন তারা কোনো একটা হোটেলে রয়েছে।
হিলারী তৈরি হয়ে নিচে নেমে, লম্বা বারান্দা পেরিয়ে বিরাট খাবার ঘরে ঢুকতেই মিস জেনসেন এগিয়ে এলো। আজ তোমাদের জন্য একটা বড় টেবিলের ব্যবস্থা করেছি টম, বেটারটনকে বললো সে। তোমার স্ত্রীর সহযাত্রী তোমাদের সঙ্গে বসবেন, আর–মার্চিসনরা তো আছেই।
নির্দিষ্ট টেবিলে তারা বসলো। অ্যান্ড্রু পিটার্স আর এরিকসন আগে থেকেই তাদের টেবিলে বসেছিলো। হিলারী তার স্বামীর সঙ্গে দুজনের পরিচয় করিয়ে দিলো। একটু পরেই বাকি দুজন এসে পড়লো। বেটারটন পরিচয় করিয়ে দিলো, ডক্টর এবং মিসেস মার্চিসন। সাইমন আর আমি একই গবেষণা ঘরে কাজ করি, বুঝলে
সাইমন মার্চিসনের বয়স বেশি নয়। পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের রোগা যুবকটি এত ফর্সা, মনে হয় রক্তহীনতায় ভুগছে। তার স্ত্রী মোটাসোটা কালো। হিলারীর মনে হলো ভদ্রমহিলা ইতালিয়ান। নাম বিয়াঙ্কা। বিয়াঙ্কা বললো, কালকে আপনাকে জায়গাটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবো। আপনি তো বিজ্ঞানবিশারদ নন, তাই না?
-না, বিজ্ঞানের কোনো বিশেষ শিক্ষা আমি পাইনি বলেই আমার আশঙ্কা, হিলারী হাসলো।
বিয়াঙ্কার কিছু আইনসম্পর্কিত শিক্ষা আছে, সাইমন জানালো। অর্থনীতি আর বাণিজ্যিক আইন নিয়ে ও পড়াশুনা করেছে। মাঝেমধ্যে ও বক্তৃতা দেয়। কিন্তু বড় একটা কেউ মন দিয়ে শোনে না।
বিয়াঙ্কা কাঁধ ঝাঁকালো। ওসব আমি ঠিক করে নেবো। আমি তো এখানে এসেছিলাম শুধু তোমার সঙ্গে থাকব বলে। কিন্তু এখানে দেখছি অনেক কিছুই করার আছে। আর মিসেস বেটারটন, উনিও হয়তো একাজে আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।
হিলারী এককথাতেই রাজি হয়ে গেলো।
অ্যান্ড্রু পিটার্স জিজ্ঞাসা করলো, আপনার গবেষণার বিষয় কোন্টা? পুরুষ তিনজনের আলোচনা হিলারী কিছুই বুঝতে পারছিলো না। এরিকসনের দিকে ফিরে দেখলো, চেয়ারে গা এলিয়ে উদাস চোখে সে তাকিয়ে রয়েছে। হেসে সে জিজ্ঞেস করলো, কি হলো, আপনারও কি ঘরকুনো কচি ছেলের মতো বাড়ির জন্য মন কেমন করছে নাকি?
যেন অনেক দূর থেকে দৃষ্টিটা ফিরিয়ে এনে এরিকসন তার দিকে তাকালো। বললো, না ঘরের প্রয়োজন নেই। এইসব-স্নেহের বন্ধন, বাবা, মা, ছেলেপুলে–এসব হচ্ছে বিরাট বাধা। কাজ করতে হলে সম্পূর্ণ মুক্ত পুরুষ হতে হবে।
-এখানে আপনি সেই মুক্তি পাবেন, মনে করছেন?
–এখুনি তা বলতে পারবো না, কিন্তু তাই আশা করছি।
বিয়াঙ্কা হিলারীকে বললো নৈশভোজের পর সময় কাটাবার জন্য অনেক রকমের ব্যবস্থা আছে এখানে। তাস খেলার ঘরে গিয়ে ব্রিজ খেলতে পারেন বা সিনেমা দেখতে পারেন, কিংবা সপ্তায় তিনদিন করে যে নাটক হয় তাও দেখতে পারেন।
এরিকসন বিরক্তিভরে ভুরু কোচকালো। এসব একেবারেই অপ্রয়োজনীয় জিনিষ। এতে কর্মশক্তির অপচয় হয়।
–আমাদের মানে মেয়েদের ক্ষেত্রে নয়, বিয়াঙ্কা জবাব দিলো। মেয়েদের ক্ষেত্রে এগুলো প্রয়োজনীয় জিনিষ।
হিলারী চেষ্টা করে একটা হাই তুললো। বললো, একটু সকাল সকাল শুয়ে পড়বো ভাবছি। আজ আর তাস খেলতে বা সিনেমা দেখতে ইচ্ছে করছে না।
তার কথাটা লুফে নিয়ে টম বেটারটন তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, আজ সকাল সকাল শুয়ে পড়ে একটা লম্বা ঘুম দিয়ে শরীরটা ঠিক করে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো। রাস্তায় তো কম ধকল যায়নি
খাওয়া শেষ করে সবাই উঠে পড়লো। বেটারটন বললো, রাত্রের খাওয়াটা এখানে সত্যিই চমৎকার। রাত্রে পড়ার ঘরে ঢোকার আগে বা সিনেমা ক্লাবে যাওয়ার আগে সাধারণ আমরা ছাদের বাগানে একটু পায়চারি করে নিই। প্রথমে একটু বাগান থেকে ঘুরে আসি চলো তারপর বরং তুমি ঘুমোতে যেও।
লিফটে চড়ে ওরা ছাতে উঠলো। ওপরে উঠে বাগানের আশাতীত শোভায় হিলারীর চোখ ধাঁধিয়ে গেলো। একি সম্ভব! কত অজস্র অর্থ ব্যয় হয়েছে বাগানটা গড়তে, চিন্তাও করতে পারলো না সে। ঠিক যেন সেই আরব্য উপন্যাসের পরীর দেশ।
–এ যেন বিশ্বাসই করা যায় না, বললো হিলারী। এই দিগন্তবিস্তারী মরুভূমির মাঝখানে–এ যেন সেই আরব্য উপন্যাসের পরীর দেশ।
মার্চিসন বললো, আমিও আপনার সাথে একমত মিসেস বেটারটন, দেখলে মনে হয় সত্যিই যেন যাদুমন্ত্রে কেউ জীনকে দিয়ে একটা গড়িয়ে নিয়েছে। অবশ্য–আমার ধারণা, টাকা এবং জল এ দুটো জিনিষ প্রচুর পরিমাণে থাকলে, মরুভূমির বুকেও যা খুশি গড়ে তুলতে পারবেন।