ডাঃ স্কুয়ার্জও একজন মহিলা। চেহারা এবং ব্যবহার দুই-ই চমৎকার। হিলারীর স্বাস্থ্য খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে বললেন, ঠিক আছে। এবার ডাঃ রুবেকের কাছে চলুন।
–ডাঃ রুবেক কে? হিলারী জিজ্ঞেস করলো। আরেকজন ডাক্তার?
–ডাঃ রুবেক মনোবিজ্ঞানী।
–মনোবিজ্ঞানীতে আমার কাজ নেই। মনোবিদদের একটুও ভালো লাগে না আমার।
আহা-হা, এখুনি অত ঘাবড়াবেন না, মিসেস বেটারটন। আপনাকে তো এখুনি চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে না। শুধু কটা বুদ্ধির প্রশ্ন করবেন উনি আর তার থেকেই আপনার ব্যক্তিত্বের শ্রেণীবিভাগ করে নেবেন ব্যস।
ডাঃ রুবেকও সুইজ্যারল্যান্ডের লোক। বেশ লম্বা, আমুদে মানুষ। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। হিলারীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে, ডাঃ স্কুয়াংজের হাত থেকে মিসেস বেটারটন সংক্রান্ত কাগজপত্রগুলো নিয়ে চোখ বোলালেন। বললেন, আপনার শরীর বেশ সুস্থ দেখে আনন্দিত হলাম। আচ্ছা আপনি তো সম্প্রতি প্লেন দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন, তাই না?
-হ্যাঁ, হিলারী বললো, ক্যাসাব্লাঙ্কায়–চার-পাঁচদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো।
মাত্র চার-পাঁচদিন। না-না, এ ঠিক করেননি। আরও বেশ কিছুদিন থাকা উচিত ছিলো আপনার।
–আর বেশিদিন থাকতে চাইনি আমি। এখানে আমার স্বামীর কাছে পৌঁছবার জন্য খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম।
– অবশ্য ঠিক। মাথায় অমন চোট লাগলে যথেষ্ট বিশ্রামের প্রয়োজন। মাথার যন্ত্রণা হয়।
-হ্যাঁ। আর তাছাড়া মাঝে মাঝে সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যায় অনেক কথাই যেন মনে করতে পারি না।
ডাঃ রুবেক বললেন, খুব স্বাভাবিক, এ নিয়ে চিন্তা করবেন না। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন আপনার মানসিকতা পরীক্ষা করার জন্য আমি কটা প্রশ্ন করবো-অনুষঙ্গ পরীক্ষা
হিলারী মনে মনে একটু দুর্বল হয়ে পড়লো, কিন্তু ভালোয় ভালোয় সব শেষ হলো। সাধারণ ছকবাঁধা পরীক্ষা-প্রশ্ন আর উত্তর।
ডাঃ রুবেক বলতে লাগলেন, মানবিক অনুভূতির প্রশ্নে একজন প্রথম শ্রেণীর টেনিস খেলোয়াড় বা মঞ্চের একজন প্রধানা গায়িকা বা একজন আণবি পদার্থবিজ্ঞানীর মধ্যে তফাত সামান্যই।
-আপনার কথাই বোধহয় ঠিক। সে যে একজন বিজ্ঞানীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে কাটিয়েছে একথা প্রমাণ করার জন্য হিলারী বললো। এরা অদ্ভুত মেজাজী মাঝে মাঝে মনে হয়, এরা যেন ঠিক মানুষ নয় এরা অন্য কিছু।
–আপনি হয়তো বিশ্বাস করবেন না, কী ধরনের মানসিক ঝড় চলছে এখানে। ঝগড়াঝাটি, হিংসে আর মান-অভিমান! কিন্তু আপনি মাদাম সংখ্যালঘুদের দলে। মানে আমার মনের কথা যদি বলতে পারেন তবে আপনি ভাগ্যবানদের দলে।
-আপনার কথা কিছু বুঝতে পারলাম না। সংখ্যালঘু বলতে?
এখানে খুব বেশি কারো স্ত্রী নেই। খুব অল্প কয়েকজন স্ত্রীকেই আসার অনুমতি দেওয়া হয়। স্বামী আর তাদের সহকর্মীদের বুদ্ধির ঝড়ে এদের গায়ে এতটুকুও আঁচ লাগে না। দিব্যি ঘুরে ফিরে বেড়ান
স্ত্রীরা তাহলে কী করে এখানে, হিলারী জিজ্ঞেস করলো।
–এখানে নানারকম খেলাধূলা, আনন্দ উৎসব আর শিক্ষাদীক্ষার ব্যাপক সুযোগসুবিধে আছে। আশা করি এখানকার জীবনযাত্রায় সুখেই থাকবেন আপনি।
আপনার মতো?
এ প্রশ্ন করা উচিত হলো কিনা কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করলো হিলারী। ডাঃ রুবেককে দেখে কিন্তু মনে হলো বেশ মজাই পেয়েছেন। বললেন, হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন, শেষপর্যন্ত এখানকার জীবন শান্তিপূর্ণ এবং আনন্দময় হয়ে উঠবে বলেই আমার বিশ্বাস।
যাক এরপর আমাকে কার কাছে যেতে হবে? হিলারী উঠে দাঁড়িয়ে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো।
মাদমোয়াজেল লা রোজ আপনাকে পোশাক বিভাগে নিয়ে যাবেন। জায়গাটা যে খুব পছন্দ হবে আপনার সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
.
লা রোজ প্যারিসে থাকত, এক দর্জির দোকানে পোশাক বিক্রি করতো। চমৎকার মেয়েলী আপ্যায়নে অভিভূত করলো হিলারীকে। আজ আপনি খুব ক্লান্ত, সেইজন্যই আমি বলি কি, আপনি শুধু কয়েকটা একান্ত প্রয়োজনীয় পোশাক বেছে নিন এখন। পরে সময়মতো ভালো করে দেখেশুনে বাকি পোশাকগুলো নিয়ে যাবেন।
মিষ্টি হেসে চটপট মাপজোক নিয়ে হিলারীকে একটা বিরাট দেওয়াল আলমারির সামনে নিয়ে এসে কয়েকটা প্রয়োজনীয় পোশাক বেছে নেবার পর হিলারীকে প্রসাধনবিভাগে নিয়ে গেলো লা রোজ। টুকিটাকি কয়েকটা পাউডার, লিপস্টিক আর ক্রিম বেছে নিলো হিলারী। সমস্ত জিনিষ গুছিয়ে একটা স্থানীয় মেয়ের হাত দিয়ে হিলারীর ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। সবকিছু যেন কেমন একের পর এক স্বপ্নের মতো মনে হতে লাগলো হিলারীর।
আশাকরি শীঘ্রই আপনার সাথে দেখা হবে। লা রোজ খুশিতে বললেন।
মিস জেনসেনকে আসতে দেখা গেলো, এখানে আসার পরই যাকে দেখা গিয়েছিলো, তাকে আসতে দেখা গেলো। ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো, আপনার এখানে কাজ শেষ হয়েছে তো মিসেস বেটারটন?
-হা ধন্যবাদ।
–তাহলে আসুন, সহকারী পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে আসবেন।
–সহকারী পরিচালক কে? হিলারী জিজ্ঞেস করলো।
–ডক্টর নিয়েলসন।
এখানে প্রত্যেকটি লোকই কি কোনো-না-কোনো বিষয়ের ডক্টরেট!–হিলারী ভাবলো, মুখে বললো, ঠিক কোন বিষয়ের ডক্টর উনি? চিকিৎশাস্ত্রের, বিজ্ঞানের না কোন্ বিষয়ের?
উনি চিকিৎসাশাস্ত্রের ডক্টর মিসেস বেটারটন। উনিই এখানকার প্রশাসনিক অধিকর্তা। যে কোনো রকমের অভিযোগ করতে হলে ওঁর কাছে যেতে হবে। দলের প্রশাসনিক দায়িত্বও ওঁর হাতে। নতুন কেউ এলে প্রত্যেকের সাথে উনি দেখা করেন। তারপর আর এঁকে-কোনোদিন দেখতে পাবেন না, যদি না গুরুতর কিছু ঘটে।