- বইয়ের নামঃ ডেসটিনেশন আননোন
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, ভূতের গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
ডেসটিনেশন আননোন
০১. কর্নেল হোয়ারটন
ডেসটিনেশন আননোন
০১.
কর্নেল হোয়ারটন খবর আর কাজের ফিরিস্তি দেখে রাগে ঘরময় দাপাদাপি শুরু করে দিলেন।
কর্নেলের বয়সও বেশ, গায়ের রঙ কালো, মুখে একজোড়া বিরাট গোফ, সারাক্ষণ চিন্তিত এবং বেশ রাশভারী।
ডেস্কের ওপাশে দ্বিতীয় ভদ্রলোকটি সরকারী কাগজপত্রগুলোর উপর চোখ বুলোতে লাগলেন।
সব ওপরের কাগজে লেখা–টমাস চার্লস বেটারটন-পাশে জিজ্ঞাসাচিহ্ন। ভদ্রলোক চিন্তিতভাবে মাথা নেড়ে, বিবরণগুলো পড়ে দরকারী কথা খুঁজে পেলেন না।
বিরক্তভাবে কাঁধ ঝাঁকালেন হোয়ারটন, কার সাধ্য বোঝে?
ভদ্রলোকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন–ই। সত্যিই কার সাধ্য বোঝে! সে খুব চিন্তিতও নয় নির্বিকারও নয়। তার ক্লান্তিময় চোখ এবং চকচকে নিজ মুখ।
ভদ্রলোকের বয়সটা অনুমেয় নয়। বুড়োও নয় ছোকরাও নয়। মাটির তলার কৃত্রিম আলোয় থাকার জন্য গায়ের রঙ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
এদিকে হোয়ারটন রাগে ফেটে পড়েছেন। কত্তো খবর! রোম থেকে, টুরেনের থেকে খবর, আজ রিভিয়েরায় দেখেছি; অ্যান্টওয়ার্পে চোখে পড়েছে; অসলোয় তো একেবারে সামনাসামনি, বিয়ারীজে চিনতে একটুও ভুল হয়নি; স্ট্যাটসবুর্গ-এ সন্দেহজনক অস্ট্যাণ্ডের সমুদ্রতীরে এক সুন্দরী লালচুলওলা মেয়ের সঙ্গে ঘুরতে দেখা গেছে। ব্রাসেলস-এর রাস্তায় গ্রে-হাউন্ড কুকুর নিয়ে বেড়াতে দেখেছি। এই তো তোমাদের খবর! তবু ভালো যে কেউ লেখেনি, চিড়িয়াখানায় জেব্রার গলা জড়িয়ে প্রেম করতে দেখেছি। বিশ্বাস নেই, তাও হয়তো লিখবে।
আহ, অতো চটছো কেন হোয়ারটন? এ বিষয়ে তোমার নিজস্ব অভিমত থাকলে বলল। আমার কিন্তু এই রিপোর্টে কিছুটা আশা জেগেছে। অবশ্য ইতিমধ্যে যদি না–ভদ্রলোক হঠাৎ থেমে গেলেন, যেন ঘুমিয়ে পড়েছেন। একটু পরেই আবার বলতে শুরু করলেন, ই, সম্ভবত তাই। কিন্তু তবুও…আমি ভাবছি?
কর্নেল হোয়ারটন ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ে বললেন, কিন্তু জেসপ, এই সমস্ত প্রশ্ন কোথায়-কেন-কেমন করে উত্তর খুঁজে বের করতেই হবে। প্রতিমাসে এইরকম একজন কৃতী বিজ্ঞানী উধাও হয়ে যাবে আর আমরা কোথায়-কেন-কেমন করে এসবের কিছু না জেনে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবো এটা তো হতে পারে না। আমাদের দেখতে হবে যেখানে আমরা সন্দেহ করছি সেটাই ঠিক না অন্য কোথাও! প্রথম থেকেই আমরা যেটাকে সঠিক বলে জায়গা ভেবেছি কিন্তু এখন আর সেটাকে সঠিক জায়গা বলে ভাবতে পারছি না।…ভালো কথা, সবশেষে খবর আমেরিকা থেকে এসেছে বেটারটন সম্বন্ধে সেটা দেখেছো তো?
হুঁ! একটা বয়সে স্বাভাবিক বিপ্লবী হবার ঝোঁক থাকে। তবে বেশিদিন এই ঝোঁক ছিল না। পাকা বিপ্লবী হবারও কোনো খবর পাওয়া যায়নি। যুদ্ধের আগে উনি ভালো কাজ করেছেন। ম্যানহেইম যখন জার্মানি থেকে পালিয়ে যান বেটারটন তার সহকারী হিসেবে কাজ করেন এবং তার মেয়েকে বিয়ে করেন। ম্যানহেইমের মৃত্যুর পর তার কাজকর্ম বেটারটনই দেখাশুনা করেন। কিছুদিনের মধ্যে শূন্য শক্তির পরমাণু বিভাজন আবিষ্কার করে সারা দুনিয়ায় চমক লাগিয়ে দেন। তাকে সবাই সম্মানে ভূষিত করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তার স্ত্রী মারা যান। তিনি সোকে আমেরিকা ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে আসেন। এই দেড় বছর ধরে হারওয়েলে বসবাস করেন এবং ছমাস আগে বিয়ে করেন।
হোয়ারটন প্রশ্ন করেন, ওর বর্তমান স্ত্রী সম্পর্কে কোনো খবর পাওয়া গেছে?
জেসপ মাথা নেড়ে বলেন, খোঁজ নিয়েছি, মেয়েটি এক ব্যবহারজীবীর মেয়ে। বিয়ের আগে একটি বীমাসংস্থায় কাজ করতো। এবং তার রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না।
‘শূন্যশক্তি বিভাজন? গলায় বিতৃষ্ণা ফুটে উঠলো হোয়ারটনের। তিনি বললেন–কথাটার মানে কি ভাবছি! আমি সেকেলে লোক এত বয়সেও একটু পরমাণু চোখে দেখলাম না। অথচ শুনছি এই পরমাণুই দুনিয়াটাকে টুকরো করে দিচ্ছে, পরমাণু দিয়ে বোমা তৈরি হচ্ছে, শূন্যশক্তি বিভাজন হচ্ছে।…কালে কালে কত কী হবে! বেটারটন আবার ভাঙাভাঙির পয়লা নম্বর পাণ্ডা। আচ্ছা, হারওয়েলের লোকেদের ওর সম্পর্কে কী মতামত?
হারওয়েলের লোকেরা বলে উনি মাটির মানুষ। বেটারটনের কাজ সম্পর্কে তাদের ধারণা –অনেক কাজই করেন তবে তার লাগাবার মতো তেমন কিছু নয়। শূন্যশক্তির বিভাজনকে কার্যক্ষেত্রে এদিক-ওদিক প্রয়োগ করেন।
দুজনেই খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। তথ্যসংবাদীয় আলোচনা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যক্তিগত আলোচনায় চলে গেছেন দুজনে।
হোয়ারটন স্তব্ধতা ভেঙে বললেন, ইংল্যান্ডে আসার পর তাকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল?
হা। সবকিছুই সন্তোষজনক ছিলো।
আঠারো মাস আগেকার কথা, হোয়ারটন চিন্তিতভাবে বললেন, তুমি নিশ্চয়ই জানো এই সমস্ত মানুষগুলো দিনরাত অন্ধকার ঘরে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে চোখ রেখে অস্বাভাবিক ভাবে বন্দী জীবন যাপন করে। এরা আদর্শ দুনিয়া গড়ার কথা এবং মানবজাতির কল্যাণের কথা চিন্তা করে এবং ঠিক সেই সময় এক শ্রেণীর মানুষ সুযোগ বুঝে এদের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসে। তিনি আবার বললেন, বিজ্ঞানীদের মতো এত প্রতারিত আর কেউ হয় না, তা অবশ্য আমি বলতে পারবো না।