টমাস প্রশ্ন করল, অথচ আপনি জানেন সে হত্যাকারী?
বিলক্ষণ।
তাহলে আপনি তাকে নিজের হাতে শাস্তি দেননি কেন? দেইনি কারণ আইনকে আমি নিজের হাতে তুলে নিতে পারি না।
সে হলে পারত টমস রাইভ বললো। যদি অপরাধ সম্পর্কে নিঃসন্দেহে হতেন তাহলে যে স্রেফ প্রমাণের অভাবে আদালত তাকে শাস্তি দিতে পারছে না, তাহলে শাস্তি দেবার ভার আমি নিজের হাতে তুলে নিতুম।
ট্রিভস বললেন, এটা ঠিক নয়। বিশৃঙ্খলা তাতে বেড়ে যায়। আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়া অন্যায়।
টমাস বললেন, স্রেফ প্রমাণের অভাবে খুনী ছাড়া পেলে তাকে তিনি হত্যা করতেন। ট্রিভস বললেন তার ফলে পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করবে।
টমাস বললো, ন্যায় বিচারের স্বার্থে যদি সে হত্যা করে তাহলে সে প্রমাণ সোপ করে দেবে।
খানিকবাদে ট্রিভস একটা গল্প বললেন, তীর ধনুক নিয়ে দুটি অল্পবয়সী শিশু একদিন খেলা করছিল। তাদের মধ্যে একজনের তীর হঠাৎ অন্যশিশুর বুকে বিধে যায় এবং সে তার ফলে মারা যায়। এ নিয়ে তদন্ত হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত রায় দেওয়া হয়েছিল এটা দুর্ঘটনার ব্যাপার। কেননা খেলতে খেলতে এমন দুর্ঘটনা হতেই পারে।
মেরী মন্তব্য করল যে, যতই মর্মান্তিক হোক এরজন্য শিশুটিকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু এটা যদি দুর্ঘটনা না হয়। কেননা দিনকয়েক পরে সেখানে গিয়ে (ওই দুর্ঘটনার স্থলে) দেখলো এটা সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একটা শিশু অন্য একটা শিশুকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সে তারজন্য তীরধনুক নিয়ে দিবারাত্র প্র্যাকটিস করতো।
মিঃ ট্রিভস বিদায় নিলেন। টমাস তার সঙ্গে গেল। কো, মেরী বিদায় নিল। লেভিল উঠে দাঁড়াল। সে বারান্দায় গিয়ে বসতে চাইল, লেভিল বারান্দায় ঘুরতে গেল। ট্রেড বললো যে, ভোরের দিকে হোটেলে সে একসঙ্গে যেতে চায় ট্রিভসের সাথে। তাই সে কতগুলি রেকর্ড কো কে দেওয়ার জন্য গুছিয়ে রাখছে।
ট্রিভস টমাসকে বললো যে, মিঃ ট্রেড-এর বন্ধু অত্যন্ত ছটফটে।
অড্রের কথায় টমাস বললো যে, তার মত শান্ত মেয়ের পক্ষে তাকে বন্ধু করা সম্ভব নয়। অড্রে তার সঙ্গে ছেলেবেলায় একসঙ্গে মানুষ হয়েছে। টমাস জানাল যে অড্রের সৌজন্যের খাতিরে সে এখানে এসেছে।
ট্রিভস বললেন অড্রে আসবে জেনে লেভিল নিজের থেকে এখানে আসতে চেয়েছিল এর কারণ অড্রের সঙ্গে দেখা করা তার উদ্দেশ্য ছিল। ভাঙ্গা মন কি কখনও জোড়া লাগে।
লেভিল ট্রেডল্যাটিমার ঘরে ঢুকল। ট্রেডের হাতে রেকর্ড ছিল, টমাস বেরিয়ে গেল। লেভিল বললো, টমাস খুব চাপা স্বভাবে, মানুষ। ট্রেড ল্যাটিমাকে সঙ্গে নিয়ে ড্রইংরুম থেকে চত্বরে নেমে এলেন। লেভি ট্রেসিলিয়ানের বাড়ি থেকে ব্যালমোরাল কোর্টের দূরত্ব কম, ট্রেড যাবে ফেরীঘাটে, সে নদী পার হয়ে ইটারহেড হোটেলে যাবে।
ব্যালমোরাল কোর্টে গিয়ে নেমে পড়লেন ট্রিভস, ট্রেড ল্যাটিমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। তিনি বললেন যতদিন না একঘেয়ে লাগে ততদিন নিশ্চয়ই তিনি এখানে থাকবেন।
ফেরীঘাট থেকে টমাস আসলেন। তিনি বললেন, রাত্রিতে খাবার পর পায়চারি না করলে তার ঘুম আসে না। তিনি হাঁটতে হাঁটতে ফেরীঘাটে গেছিলেন। এবার ফিরে শুয়ে পড়বেন। হোটেলের দরজা দিয়ে লিফটের সামনে এলেন। লিফটের সামনে নোটিশ ঝুলছে।
লিফটটা বিকল হয়ে গেছে। মিঃ ট্রিভস বললেন তাকে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হবে। টমাস বললেন তার সিঁড়ি ভাঙ্গা উচিত নয় কিন্তু উপায় তো নেই। সিঁড়ি দিয়ে রাস্তায় ট্রিভস বেরিয়ে গেলেন। টমাসও রাস্তায় বেরিয়ে গেল। দুজনে দুদিকে যাবে। টমাস গাল পয়েন্টের দিকে যাবে আর ট্রেড ফেরীঘাটের দিকে যাবে।
মেরী বললো, ঠিক যেন গ্রীষ্মকাল। মেরী আর অড্রে ইটারহেড হোটেলের সামনে বসেছিলো। ওপারে গালস পয়েন্ট লেভি ট্রেসিলিয়ানের বাড়ি। কো জলে নামল না। সে মেরীর পাশে এসে বসল, বললো ভীষণ ঠাণ্ডা। ট্রেড ল্যাটিমার তার পিছনে এসে দাঁড়াল, সে জলে নামবে না। কো বললো যে, সে জলে নামে না খালি পাড়ে বসে রোদ পোহায়। কো ট্রেডের সঙ্গে ঘুরতে চাইল। তারা চলে যেতে মেরী বললো যে দুটোকে বেশ মানায়। কিন্তু কেন যে লেভিল তাদের মধ্যে এল। অড্রের মতে তাদের মানিয়েছে। অড্রের কথা শুনে মেরী মনে করল সে নিজেকে সান্ত্বনা দেবার জন্যই এই কথাটা বলছে। অড্রের আগে লেভিলের জন্য কষ্ট হত এখন আর হয় না। অড্রে গরম কাপড় পরার জন্য ভেতরে গেল।
মেরী বসে ভাবছিল। ট্রেড হঠাৎ ফিরে এসে তার পেছনে দাঁড়িয়েছেন সে এসে কো-র কথা জিজ্ঞেস করল। মেরীর মনে হল কো-কে লেভিল বিয়ে করেছে দেখে ট্রেডের মনে কোন দুঃখ আছে। ট্রেডের হয়তো এ জায়গাটা ভালো লাগছে না। ট্রেড আসলে কোর বন্ধু বলে তাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। আসলে পাছে কো কিছু মনে করে তাই তাকে কাছে টানা হয়েছে। মেরীর ভীষণ খারাপ লাগছিল। তার নিজের জন্য নয়, ট্রেডের জন্য তার সমবেদনা জাগছিল।
ট্রেড তাকে জানাল যে, তাকে কো ভালোবাসত কিন্তু তা লেভিলকে দেখার আগে। তারপরও সে ভালোবাসে কো-কে। মেরী তাকে এখান থেকে চলে যেতে বললো। কেননা চলে না গেলে দুঃখের বোঝা আরও বাড়বে। ট্রেড শুনে বললো যে, তাকে তিনি চেনেন না। নীরবে নতমুখে সব কিছুকে মেনে নেওয়া তার স্বভাব নয়। খুব শিগগির হয়তো নতুন কিছু ঘটতে পারে। মেরী তার কথা বুঝতে পারল না। ট্রেড তাকে অপেক্ষা করতে বললো।