অড্রে বললো, তার কড়ে আঙ্গুল খুব লম্বা।
কো বললো, যার কড়ে আঙ্গুল খুব লম্বা হয় তারা স্বার্থপর হয়। নানারকম আলোচনা হল কড়ে আঙ্গুল নিয়ে।
মেরী বললো, কো কি হাত দেখতে পারে?
এক জ্যোতিষী বলেছিল তাকে যে, তার অনেক ছেলেমেয়ে হবে। কিন্তু এখনো তার বিয়েই হয়নি। সে অনেক দূরদেশ যাবে একথা ঠিক হলো? ছত্রিশ বছর বয়সেও সে ইংল্যাণ্ড ছেড়ে কোথাও যায়নি। টমাসের এই কথাগুলো একটু করুণ শোনাল। টমাস তাকে আশা দিল। মেরী হেসে বললো, ছুটির শেষে তুমি কি আমাকে মালয়ে নিয়ে যাবে। একথায় লজ্জা পেল টমাস। সবাই হাসছিল টমাসের কথায়। একজন সলিসিটর ট্রিভস আজ রাতে এখানে খাবেন। বুড়ো মানুষ আড্ডাবাজ।
কো বললো, সে বুড়োদের সঙ্গে মেশে না।
.
৩.২
একটু আগে ডিনারের পালা শেষ হয়েছে। প্রশস্ত ড্রইংরুমে এসে জড়ো হয়েছে সবাই। মিঃ ট্রিভস তাদের সঙ্গে জড়ো হয়েছেন। গানবাজনা চলছিল। মিঃ ট্রিভস ভাবলেন যৌবনের মতন সময় আর হয় না। মেরী বললো, একটু ব্রীজ খেলা যাক; বেশিক্ষণ হয়তো খেলা যাবে না কারণ পিসীমা ডাকবেন। তিনি এখন আর নীচে নামেন না।
কথায় ছেদ পড়ল। কো তার নাচের সঙ্গী করে নিল ল্যাটিমারকে। লেভিল জিজ্ঞেস করল অড্রেকে, তার সাথে সে নাচবে না কি? অড্রে নাচতে রাজী হলো। সে জানতো লেভিলের সঙ্গে যদি নাচতে রাজী না হয় তাহলে সেটা ভারী বিশ্রী হবে। লেভিলের হাতে হাত মিলিয়ে পা মিলিয়ে সে এগিয়ে এল।
মিঃ ট্রিভস সব দেখলেন, তিনি ভাবছিলেন বিগত যৌবনের কথা। তার আনন্দ আর যন্ত্রণার কথা। অড্রে লেভিলের বাহুবদ্ধ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন। তিনি একটু অস্বস্তিভাবে বললেন তার নাচতে ভালো লাগছিল না। তিনি ঘর ছেড়ে বারান্দায় চলে গেলেন। টমাসকে তার কাছে যেতে বলছিল ট্রিভস।
মেরী বললেন, টমাসকে বলা হয়েছে অড্রেকে বিয়ে করার জন্যে। মিঃ ট্রিভসকে তিনি সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
মিঃ ট্রিভস বললেন মানুষের চেহারা দেখে চরিত্রের আন্দাজ করা হয়। এটা তিনি পারেন। আরও কিছু বলার আগে কফি এসে গেল। মেরী অড্রেকে বারান্দায় কফি দিয়ে আসলেন।
অড্রের সঙ্গে লেভিল বারান্দায় ছিল, মেরী চা নিয়ে যেতে তাদের দেখতে পেলেন। অড্রের চুলের সঙ্গে লেভিলের কোর্টের হাতার বোতাম আটকে গেছিল। তারা ছাড়াবার চেষ্টা করছিলেন। তাতে অড্রের একটু কষ্ট হয়েছিল। মিঃ ট্রিভস দেখতে পেলেন অড্রে কাঁপছে। ট্রিভস মেরীর অলক্ষ্যে তাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল। সে ছাড়িয়ে দিতে চাইলে লেভিল বললো, সে ছাড়িয়ে নিতে পেরেছে। অড্রে শীতে কাঁপছিল মেরী তার কফিটা নিয়ে এলো।
.
৩.৩
মিঃ ট্রিভসকে দেখে ট্রেসিলিয়ান খুশী হলো, তাদের পুরানো দিনের কথা নিয়ে গল্প হলো। তারা অতীত দিন থেকে বর্তমানে পৌঁছালেন। প্রেম নিয়েই কথা হচ্ছিল। আগে জীবনে যাই থাক সুখ ছিল, শান্তি ছিল। অথচ একালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভালোবাসা একটা নেশা ছাড়া কিছু নয়। তাও চোখের নেশা; যদি তাই না হবে তাহলে অড্রেকে ছেড়ে কো-কে কেন লেভিল বিয়ে করল?
তাদের বাড়িতে একটা ক্রিকোণ প্রেমের সৃষ্টি হয়েছে। আচ্ছা মিঃ ট্রিভস এটি দেখে আপনার কি মনে হয়?
তার মতে উভয়ই সুন্দরী। তাহলে কেন তাকে ছেড়ে দিল। মেরী বললো, দ্বিতীয় পত্নীকে নিয়েই যে খুশী থাকবে তার কি মানে?
ট্রিভস বললো, দ্বিতীয় পত্নীকে ছেড়ে দিয়ে প্রথম পত্নীর কাছে ফিরে যাওয়ার ঘটনা সে অনেক দেখেছে।
ট্রেসিলিয়ান বললে এটা তার ক্ষেত্রে ঘটবে না। কারণ অড্রে খুব অভিমানী মেয়ে তার স্বামী তার ভালবাসার সম্মান দেয়নি। লেভিল যদি অড্রের কাছে ফিরে আসতে চায় সে রাজী হবে না। অড্রে দুঃখ জ্বালায় মরে গেলেও কাউকে সে কথা জানাতে চায় না। ও দেখাতে চায় লেভিলকে ছাড়া ও বাঁচতে পারে। না আসলে এটা অভিমানের ব্যাপার। ট্রিভস মনে করেন এমন হতে পারে সেই ছেলেটিকে আবার কাছে টানতে চাইছে।
লেভি ট্রেসিলিয়ান বললেন তাহলে এটা একটা বিশ্রী ব্যাপার হবে। তিনি চান অড্রে এখান থেকে চলে যাক। কিন্তু এটা সম্ভব নয়; এক্ষেত্রে লেভিলের এখান থেকে বিদায় নেওয়া উচিত, তিনি মনে করেন।
ট্রেসিলিয়ান মিঃ ট্রিভসকে বললেন যেন তিনি সময় পেলেই চলে আসেন। যদি কিছু না মনে করেন তাহলে ঘণ্টির দড়ি টেনে দিয়ে যাবেন। এটি মাদামের ইলেকট্রিক কলিংবেলের বদলে করা হয়েছে। ঘন্টি আছে উপরতলায় ব্যারেটের ঘরে। সেখান থেকে দড়ি টানলেই সেটা বেজে ওঠে।
মিঃ ট্রিভসকে দেখে মেরী অলিডন প্রস্তাব করলেন একরাউণ্ড ব্রিজ খেলা যাক। ট্রিভস হোটেলে ফিরতে চাইলেন। লেভিল বললেন সবে তো দশটা বাজে। আসলে এই হোটেল রাত বারোটায় কাজ হয়।
কো বললো, ট্রেড তুমি ইচ্ছে করলে ব্যালমোরাল কোর্টে আসতে পার। ট্রেড বললো, অত তাড়াতাড়ি তার পক্ষে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়।
মেরী বললো, ট্রিভস দেখেছেন কি, খুনের মামলায় একজন নাকি গ্রেপ্তার হয়েছে?
ট্রিভস বললো, কারো বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া না গেলেও আর আজকাল নিশ্চিন্ত হবার উপায় নেই। কে খুনী নয়, আমি নিজেই এমন একজনকে জানি যে কিনা শিশু হত্যার অপরাধী। কিন্তু আদালত তাকে শাস্তি দিতে পারেনি। জনকয়েক সাথী জুটিয়ে এমন একটা অ্যালিবাই সে দাঁড় করিয়ে দিলে, কিছুতেই তাকে মিথ্যা প্রমাণ করা গেল না। ফলে প্রমাণের অভাবে সে ছাড়া পেয়ে গেল। ভদ্রসমাজে দিব্যি সে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে।