অতঃ কিম।
এই লেখাটা শেষ করবো। লেখাটা বোতলবন্দী করে সীমোহর আঁটতে হবে বোতলের মুখে, এবং তারপর বোতলটা সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে হবে।
আমার যতদূর ধারণা নিগার দ্বীপের রহস্যের সমাধান কখনো হবে না, রহস্যই থেকে যাবে চিরদিনের মতো, অবশ্য আমি জানি, পুলিশ আমার থেকেও চালাক, যাইহোক, এই সব খুনের তিনটি কু রয়েছে। একঃ পুলিশ বেশ ভাল করেই জানে, এডওয়ার্ড সিটন অপরাধী। অতএব তারা জানে, কোনো কারণেই দ্বীপের দশজন লোকের মধ্যে একজনও খুনী হতে পারে না এবং এর পরেই ধরে নিতে হয় যে, প্রচলিত মত বিরোধ থাকলেও অথচ যা সত্য তা হলো যুক্তিগ্রাহ্য হিসাবে সেই লোকটিই খুনী। দ্বিতীয় ক্ল নিহীত রয়েছে ছেলেবেলায় সেই কবিতার সপ্তম পংক্তিতে। আর্মস্ট্রং এর মৃত্যুর কারণ জলে ডুবে, সে ছিলো ভাল সাঁতারু, তবে মনে হতে পারে লাল সিন্ধু পাখীর আক্রমণের টাল সামলাতে না পেরে জলে ডুবে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এটা কি একটা ভোজবাজী বা প্রতারণা নয় কি? হ্যাঁ, সে রকমই একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় তার মৃত্যুর মধ্যে-আর্মস্ট্রং প্রতারিত এবং মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেওয়া হয় তাকে। আর এই কুকে কেন্দ্র করেই পুলিশী তদন্ত শুরু করা যেতে পারে। সেই সময় দ্বীপে মাত্র চারজন জীবিত ছিলো, আর সেই চারজনের মধ্যে একমাত্র আমিই সেই সম্ভাব্য ব্যক্তি যে কিনা আস্থার সঙ্গে তাকে গভীরে অশান্ত সমুদ্রে সাঁতার কাটার জন্য অনুপ্রাণিত করে থাকতে পারে। আর তৃতীয় সূত্রটা নিছকই সাংকেতিক। আমার কপালে মৃত্যুর পরওয়ানা আঁকা ছিলো। বুলেটের চিহ্ন। আমার কাল্পনিক চিহ্ন। আমার কাল্পনিক মৃত্যুটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য পুলিশ একটু ভাল করে তদন্ত করলেই হয়তো প্রকৃত সত্য উদঘাটন করতে পারবে।
আমার মনে হয়, আরো একটু বলার আছে।
বোতলবন্দী আমার এই স্বীকারোক্তিটা সমুদ্রে নিক্ষেপ করার পর ফিরে যাবো আমার ঘরে এবং বিছানায় বিছিয়ে দেবো আমার দেহটা। আমরা চশমার ফ্রেমে সরু কালো ইল্যাস্টিক সুতো লাগানো থাকবে। সেই চশমার ওপর আমার দেহের সম্পূর্ণ ভার পড়ে থাকবে। সুতোর এক প্রান্ত দরজার হাতলে করে জড়িয়ে রাখবো রিভলবারে। এতে কি ঘটবে আমি কি ভাবছি জানেন।
রুমালে হাত জড়িয়ে নিয়ে আমি আমার কপালে তাক করে রিভলবারের ট্রিগার টিপবো। হাতটা আমার দেহের পাশে এলিয়ে পড়বে। ইল্যাস্টিকের পাশে এলিয়ে পড়বে। ইল্যাস্টিকের সুতোয় টান পড়বে, এর ফলে সুতোয় বেঁধে রাখা রিভলবারটা ছিটকে গিয়ে দরজার হাতলে আছড়ে পড়বে এবং সঙ্গে সঙ্গে সুতো বন্ধন মুক্ত হয়ে ছিটকে পড়ে যাবে। ইল্যাস্টিক সুতোটা তখন রিভলবার মুক্ত হয়ে নিরীহ হয়ে ঝুলতে থাকবে আমার চশমার ফ্রেমে। আর রুমালটা পড়ে থাকবে ঘরের মেঝের ওপর, কোনো মন্তব্য ব্যতিরেকেই।
আমার বিছানায় আমি আবিষ্কৃত হবো, আমার সহ শিকারদের মতো আমার মৃত্যুর কারণ নথীভুক্ত হবে কপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে। আমার মৃতদেহ যখন পরীক্ষা করা হবে তখন মৃত্যুর সঠিক সময় নির্ধারিত হবে না।
ঝড় যখন থেমে যাবে তখন ওপারের মূল ভূখণ্ড থেকে নৌকো আসবে। আসবে লোকেরা এই দ্বীপে, এবং তারা আবিষ্কার করবে দশটি মৃতদেহ এবং নিগার দ্বীপের সমাধানের অযোগ্য একটি সমস্যা।
স্বাক্ষর :
লরেন্স ওয়ারগ্রেভ।