ক্লাবে একদিন পুরনো মিলিটারির খোশগল্প শুনতে গিয়ে জেনারেল ম্যাকআর্থারের অপরাধ কাহিনী শুনলাম। সম্প্রতি আমাজন ফেরত একজন নোক লম্বার্ডের অপরাধ কাহিনী শোনাল। ম্যাজোরকায় এক রাগী মেমসাহেবের মুখ থেকে পিউরিটান এমিলির কাহিনী শুনলাম। আর আন্টনি মার্স্টান হলো আমার নিজের আবিস্কার, যেমন করে আর পাঁচজন অপরাধীকে খুঁজে বার করা হয়। জীবন সম্পর্কে তার কোনো দায়িত্ববোধ ছিলো না, সে ছিলো সম্পূর্ণ অপদার্থ। এ ধরনের লোককে আমি সমাজে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করি, এর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। প্রাক্তন ইন্সপেক্টর ব্লোর স্বাভাবিকভাবেই এসে যায় আমার অন্বেষণ পথে। ল্যান্ডর কেসের মামলার ব্যাপারে আইনের পেশায় নিযুক্ত আমার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে ব্লোর-এর নামটা ওঠে। পুলিশ হচ্ছে আইন ও শৃঙ্খলার বাহক, পেশাগত মর্যাদায় পুলিশের কথাই শেষ কথা এবং সত্য বলে ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু পুলিশের লোক হয়েও ব্লোর ছিলো মিথ্যা ভাষণের প্রতিভূ। তাকে ক্ষমা করা যায় না।
অবশেষে পাওয়া গেলোলা ভেরা ক্লেথনের কেস। আমি তখন আটলান্টিক পাড়ি দিচ্ছি। একদিন গভীর রাতে ধূমপান করে আমি ও হুগো হ্যামিল্টন নামে একটি সুদর্শন যুবক বসে আছি। পরিচয় হলো যুবকটির সঙ্গে। যুবকটির জীবন মোটেই সুখের নয়। সে তার দুঃখ ভুলতে মাত্রাতিরিক্ত মদ গিলেছিল। ফলের খুব একটা আশা না করেই শুরু করলাম কথাবার্তা। তার সঙ্গে তার কথা শুনে আমি তো অবাক। এখনো মনে আছে তার সেদিনের সেই কথাগুলো। সে বলেছিলো, আপনি ঠিকই বলেছেন। খুন মানেই বেশীর ভাগ লোকে যা ভাবে ঠিক তা নয়, খাবারে আর্সেনিক মিশিয়ে দেওয়া কিংবা উঁচু পাহাড় থেকে কাউকে ঠেলা মেরে ফেলে দেওয়া। সামনের দিকে ঈষৎ ঝুঁকে পড়ে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আরো সে বলে, আমি একজন নারী খুনীকে চিনি, আমি আপনাকে বলছি? তাকে আমি বেশ ভাল করেই জানি। আরো কি জানেন, এক সময় তাকে পাওয়ার জন্য আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করুন। বলছি বড় দুর্ভাগ্যই বটে। জানেন, কম বেশী আমার জন্যই অমন নিষ্ঠুর কাজ সে করেছিল…তবে তাই বলে এই নয় যে, আমি কখনো সে রকম স্বপ্ন দেখেছিলাম নারী মাত্রই শয়তান দানবী পুরোপুরি দানবী একজন চমৎকার, সাদাসিধে হাসিখুশীতে ভরা মেয়েকে আপনি দানবী হিসেবে চিন্তাই করতে পারেন না, পারেন কি? সেই নারী একদিন এক দুধের শিশুকে স্নান করাতে নিয়ে গেলো এবং আমাকে পাওয়ার জন্য তাকে জলে ডুবিয়ে হত্যা করলো একজন নারী যে এমন একটা নিষ্ঠুর কাজ করতে পারে, আপনি চিন্তা করতে পারেন?
আমি তাকে বললাম, আপনি নিশ্চিত, এ কাজ সে করেছে?
হ্যাঁ আমি একেবারে নিশ্চিত, উত্তরে সে দৃঢ়স্বরে বলে কেউ তা ভাবেওনি। কিন্তু আমি জানি ফিরে এসে আমি যখন তার দিকে তাকালাম……সে তখন বুঝে গেছে, আমি তার সব ছলাকলা বুঝে গেছি …….তবে সে কথা উপলব্ধি করতে পারেনি তা হলো সেই নিষ্পাপ শিশুটিকে আমি ভালবাসতাম…..।
তারপর সে আর কিছু বলেনি, তবে যেটুকু সে বলেছিল, তাতেই যথেষ্ট, এ পর্যন্ত যে সব তথ্য সংগ্রহ করেছি আমার পরিকল্পনার রূপরেখা টানা তখন আটকায় কে।
তখন দরকার আমার দশম শিকার। পেলাম তাকে, নাম তার মরিস। কুখ্যাত লোক সে। আফিম কোকেনের ঢালাও, চোরাই ব্যবসা তার। আমার এক বন্ধুর মেয়েকে আফিম কোকেনের নেশায় আসক্ত করে ফেলে সে। মাত্র একুশ বছর বয়সে আত্মহত্যা করে মেয়েটি।
আমার এই পরিকল্পনার ব্যাপারে অন্বেষণ চালানোর সময় ধীরে ধীরে সেটা আমার মনের মধ্যে গেঁথে যায় পাকাপাকি ভাবে। আমার প্ল্যান তখন সম্পূর্ণ। বাস্তবে সেটা রূপায়িত করার আগে গেলাম একদিন হারলে স্ট্রীটে এক ডাক্তারের কাছে চেক আপ করানোর জন্য। আমি তাকে বললাম, আগেই আমার একটা অপারেশন হয়ে গেছে। শুনে সেই ডাক্তার বলে তাহলে আপনার দ্বিতীয়বার অপারেশন অর্থহীন। আমার চিকিৎসক খোলাখুলি ভাবে আমাকে জানিয়ে দিলেন একটা অপ্রিয় সত্য কথা হা, এই রকমই একটা সত্য ভাষণ শুনতে অভ্যস্ত আমি।
আমার সিদ্ধান্তের কথা আমি ডাক্তারকে বলিনি যে, আমার মৃত্যু যেন ধীরে ধীরে বিলম্বিত না হয়, আমি চাই স্বাভাবিক মৃত্যু। না আমার মৃত্যু হওয়া উচিত কোনো এক উত্তেজনা মুহূর্তে। মৃত্যুর আগে আমি বাঁচতে চাই।
এখন আসল কাজ হলো নিগার দ্বীপে অপরাধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। সেই দ্বীপটা সংগ্রহ করার কাজে মরিসকে ব্যবহার করা খুবই সহজ ব্যাপার। এ সব ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ সে। আমার সাম্ভাব্য যে কজন শিকারের খবর সংগ্রহ করেছিলাম তাদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা টেপে ফেললাম। আমার কোনো প্ল্যানই ভেস্তে যায় নি। আমার সব অতিথিরাই আটই আগস্ট এসে হাজির হলো নিগার দ্বীপে। আমিও মিশে গেলাম তাদের দলে।
এখানে আসার আগেই মরিসের সব হিসেব নিকেশ হয়ে গিয়েছিল। পেটের অসুখে ভুগছিল সে। লণ্ডন ত্যাগ করে আসার আগে আমি তাকে একটা ক্যাপসুল দিয়ে বলি, আমার নিজের গ্যাস্টিক পেনে যথেষ্ট উপকার পেয়েছি এই ক্যাপসুল ব্যবহার করে। দ্বিধাহীন চিত্তে যে সেটা গ্রহণ করে নেয়। একটু স্নায়ুবিক রোগাগ্রস্ত লোক সে। লোকটা যে এ ব্যাপারে কোনো নথীপত্র রেখে যেতে পারে, সে রকম ভয় আমার ছিলো না। সে ধরনের লোকই নয় সে।