এরপর বিচারপতি ওয়ারগ্রেভের প্রসঙ্গে আসা যাক। তিনি ছিলেন বিচারপতি, ঠিক আছে। তার এই বিচারপতিই সিটনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে বলা যেতে পারে, সিটন ছিলেন প্রকৃত অপরাধী, তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করার মধ্যে কোনো ভুল নেই। ফাঁসির পরে অবশ্য সেটা নিয়ে কথা ওঠে, কিন্তু তার আগে সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে দেখা যায়, তার অপরাধ ছিলো সন্দেহাতীত। তখনকার সময়ে দশজন লোকের মধ্যে নজনেরই ধারনা ছিলো, সিটন ছিলো নিরপরাধ। এবং বিচারপতির রায়টা ছিলো প্রতিহিংসা নেওয়ার জন্য।
ক্লেথর্ন মেয়েটির খোঁজখবর নিতে গিয়ে আমি দেখেছি। সে ছিলো একটি পরিবারের গভর্নের্স, আর সেই পরিবারের একজন জলে ডুবে মারা যায়। সেই শিশুটিকে স্নান করাতে নিয়ে যায় সে সমুদ্রে। যাই হোক, এর জন্য তাকে অবশ্য দোষ দেওয়া যায় না। সত্যি কথা বলতে কি ভালো আচরণই করেছিলো সে শিশুটির সঙ্গে তাকে উদ্ধার করার জন্য সাঁতার কেটে এগিয়েও গিয়েছিলো সে। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য সমুদ্রের ভয়ঙ্কর স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে নি সে, ভেসে গিয়েছিলো শিশুটি।
বলে যাও, দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার।
হাঁপিয়ে উঠেছিলো মেইন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে সেই আবার বলতে শুরু করলো, এবার ডঃ আর্মস্ট্রং এর কথা বলি। বহু পরিচিত লোক তিনি। হারলে স্ট্রীটের চেম্বারে তার ভালো পসার ছিলো। তিনি তার পেশায় কোনো অবৈধ কাজকর্ম যে করেছিলেন, সে রকম কোনো রেকর্ড নেই। তবে এ কথা সত্যি যে, ১৯২৫ সালে লেইথামার হাসপাতালে ক্লিজ নামে একটি মেয়েকে অপারেশন করেছিলেন তিনি, অপারেশন টেবিলেই মারা যায় সে। হয়তো তার খুব বেশী অভিজ্ঞতা না থাকার দরুণ অপারেশনে তেমন দক্ষ ছিলেন না তিনি প্রথম জীবনে, তবে এর জন্য কখনোই তাকে অপরাধী হিসাবে সাব্যস্ত করা যায় না। আর অবশ্যই এই মৃত্যুর পিছনে তার কোনো মোটিভ খুঁজে পাওয়া যায় না।
তারপরে মিস্ এমিলি ব্লেন্টের প্রসঙ্গে আসা যাক। বেট্রিস টেইলর নামে এক যুবতী কাজ করতো তার বাড়ীতে। গর্ভবতী হয়ে পড়ে মেয়েটি অবৈধ প্রণয়ে। তাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করলেন মিস্ ব্লেন্ট, সে তখন জলে ডুবে আত্মহত্যা করলো। ব্যাপারটা ভালো না হলেও মেয়েটির মৃত্যুর জন্য কোন ক্রমেই অভিযুক্ত করা যায় না তাকে।
মেইন তার তালিকা দেখে পড়তে শুরু করলো, তরুণ মার্স্টান ছিলো বেপরোয়া গাড়ি চালক। দু-দুবার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়েছে, আমার মতে তার গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিৎ। তার শাস্তি এ রকমই হওয়া প্রয়োজন। কেম্রিজের রাস্তায় দুটি বাচ্চা ছেলে জন কোম্ব ও লুসি কোম্বাসকে চাপা দেয় সে। তার স্বপক্ষে তার কয়েকজন বন্ধু বান্ধব সাক্ষ্য দেয় আদালতে, আর তাতেই জরিমানার হাত থেকে রেহাই পেয়ে যায় সে।
ওদিকে তদন্ত করে জেনারেল ম্যাকআর্থারের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় নি। চমৎকার তার সার্ভিস রেকর্ড। আর্থার রিচমন্ড তার অধীনে কাজ করতো, যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যায় সে। জেনারেলের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ ছিলো না। সত্যি কথা বলতে কি তারা দুজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো।
তা হতে পারে, বললেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার।
এখন ফিলিপস লম্বার্ডের কথায় আসি। বিদেশে সন্দেহভাজন লোকদের সঙ্গে তার মেলামেশা ছিলো। জেলও খেটেছে বার দুয়েক। ভয়ঙ্কর ছিলো না, একটু বেপরোয়া স্বভাবের লোক ছিলো সে। সেই সঙ্গে তার একটু অহঙ্কারও ছিলো। তার পক্ষে খুন জখম করাটা অস্বাভাবিক নয়।
তারপর ব্লোর-এর কথা বলি, একটু ইতস্ততঃ করে মেইন বলে দশজনের একমাত্র সেই বাকী থাকে।
ব্লোর। জোর দিয়ে বললেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, সেই শয়তানটা না?
আপনিও কি তাই মনে করেন স্যার?
সব সময়েই আমি তাই মনে করি, বললেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, লোকটা দারুন ধুরন্ধর। ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আমার ধারণা ল্যান্ডরের মামলায় তার কোনো কারচুপি ছিল নিশ্চয়ই। সেই সময় খুব একটা খুশি হতে পারিনি আমি। আবার আমার কিছু করারও ছিলো না। হ্যারিসকে কাজে লাগালাম। কিন্তু সেও কোনো কাজ করতে পারলো না। কিন্তু তখনো আমার বিশ্বাস, তাকে ধরার মতো ঠিক মতো ফঁদ পাততে পারলে, ও ভাবে সে আমাদের কলা দেখিয়ে পার পেয়ে যেতে পারতো না। সহজ প্রকৃতির লোক ছিলো না সে। একটু থেমে জিজ্ঞেস করলেন স্যার টমাস লেগ, তুমি বলছো আইজ্যাক মরিসও মারা গেছে? তা সে কবে মারা গেলো?
ভেবেছিলাম, আপনি নিশ্চয়ই এ প্রসঙ্গে আসবেন স্যার। হ্যাঁ ৮ই আগস্ট রাতে মারা যায় সে। অতিরিক্ত ঘুমের পিল খাওয়ার দরুনই তার মৃত্যু ঘটে। তার সেই মৃত্যুটা আত্মহত্যা, নাকি দুর্ঘটনা ঠিক বোঝা যায় না।
আমার কি ধারণা জানো মেইন?
সম্ভবত আন্দাজ করতে পারি স্যার।
আর যাই হোক, দারুন উত্তেজিত হয়ে বললেন লেগ, মরিসের মৃত্যুতে একজনের খুব সুবিধে হয়েছে।
মাথা নেড়ে তার কথায় সার দিয়ে বললো ইন্সপেক্টর মেইন, আমি জানতাম স্যার, আপনি ঠিক এই কথাই বলবেন।
টেবিলের ওপর ঘুষি মেরে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার বলে উঠলেন উত্তেজিত হয়ে সমস্ত ব্যাপারটাই অদ্ভুত অবিশ্বাস্য। পাহাড়ে ঘেরা একটা ছোট্ট দ্বীপে দশজন লোক মারা গেলো, অথচ আমরা জানতেও পারলাম না, এর জন্য দায়ী কে, কিংবা কেনই বা হত্যা করা হলো, আর কি ভাবেই বা।