সাধারণ মানুষ তারা, কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে ইন্সপেক্টর মেইন, সমুদ্রে বেড়াতে ভালোবাসে। তারা শুধু জানে, ওয়েন নামে একজন লোক ঐ দ্বীপটা কিনে ছিলো, এর বেশী কিছু নয়।
তা ঐ দ্বীপটা কে দেখাশোনা করে, আর কেই বা এ সব ব্যবস্থা করে থাকে?
মরিস, আইজ্যাক মরিস নামে একজন লোক।
এ ব্যাপারে তার কি অভিমত?
কিছুই সে বলতে পারবে না স্যার, কারণ সে তখন মৃত।
ভ্রু কুচকে উঠলো অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের, এই মরিস লোকটা সম্পর্কে তুমি কিছু জানো?
হ্যাঁ স্যার, তাকে আমরা জানি। খুব একটা ভদ্র নয় সে। বছর তিনেক আগে সেই বেনিটোজের শেয়ার কেলেঙ্কারীর ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে, আমরা নিশ্চিত জানতাম, সে জড়িত ছিলো, কিন্তু আমরা সেটা প্রমাণ করতে পারিনি। তারপর ডোপের কারবারে মিশে যায় সে। সেক্ষেত্রেও তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ আমরা খাড়া করতে পারিনি। জানেন স্যার, মরিস খুবই সাবধানী লোক।
আর এখানেও এই দ্বীপটা সংক্রান্ত ব্যাপারেও মরিস জড়িত ছিলো?
হ্যাঁ সার, এই দ্বীপটা বিক্রীর সঙ্গে সেও জড়িত, যদিও তৃতীয় পক্ষের হয়ে নিগার দ্বীপটা সে কিনেছে, সেটা পরিস্কার করে দিলেও ক্রেতার নাম সে প্রকাশ করেনি।
আর্থিক দিক থেকে সে কতো বেশী বলীয়ান সেটা আগে জানতে হবে, বুঝলে?
হাসলো ইন্সপেক্টর মেইন। আপনি মরিসকে চেনেন না স্যার। দেশের সব থেকে ভালো একজন চাটার্ড এ্যাকাউন্টেন্ডকে দিয়ে তার হিসাবের খাতাপত্র পরীক্ষা না করে দেখলে তার আর্থিক অবস্থাটা সঠিক জানা যাবে না। বেনিটোজ কারবারের তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, তার কর্মচারীরা তাদের মালিকের মতোই চতুর ও ধুরন্ধর।
ইন্সপেক্টর মেইন বলে চলে, স্টিকলহ্যাভেনের সব ব্যবস্থাই করে এই মরিস লোকটা তাদের বলে, এই নির্জন দ্বীপে মানুষ বসবাসের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে যাচ্ছে তারা এক সপ্তাহের জন্য। আর সে তাদের এও বলে সেখান থেকে কোনো সাহায্যের আবেদন এলে তারা যেন নজর না দেয়।
অস্বস্তিবোধ করলেন স্যার টমাস লেগ, তার মানে তুমি বলেত চাইছো সেই সব লোকগুলো তার ঐ ধরনের কথায় একটুও সন্দেহ প্রকাশ করেন নি। তার সবকথা তার এক কথায় বিশ্বাস করে নিলো?
ভুলে যাচ্ছেন স্যার, আগে এই নিগার দ্বীপের মালিক ছিলেন একজন আমেরিকান যুবক এলমার বোরসন। সেখানে তিনি প্রায়ই একটা না একটা পার্টি দিতেন। সেই সব পার্টি দেখতে দেখতে তাদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছিলো। তাই তারা ধরে নিয়েছিলো, বিত্তবানের ব্যাপারে তাদের মাথা না ঘামানোই উচিৎ। আর এই কারণেই বোধহয় মরিসের সেই উপদেশ শুনে কোনো সন্দেহ জাগেনি তাদের মনে। এদিকটার কথাও আপনাকে ভেবে দেখতে হবে স্যার।
তার যুক্তিটা মেনে নিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার।
মেইন আরো বলে, ফ্রেড নারাকট তার লঞ্চে করে এই দশজন লোককে সেই দ্বীপে পৌঁছে দিয়ে যান। সেই নারাকট একটু অদ্ভুত কথা শুনিয়েছে। সে বলেছে, সেই লোকগুলোকে দেখে একটু আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলো সে। মিঃ বোরসনের পার্টির লোকদের মতো ঠিক নয়। লোকগুলো কেমন সরল ও সাধারণ মানুষের মতো, মনে হয়েছিল তার, সেই সঙ্গে একটা চিন্তাও জেগেছিলো, তার মনে। আর বোধহয় সেই কারণেই বোধ হয় এস. ও. এস সিগনাল পাওয়ার পরেই মরিসের সব উপদেশ উপেক্ষা করে একটুও দেরী না করে সে তার লঞ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলো নিগার দ্বীপের দিকে।
সে আর অন্য লোকে কবে সেখানে গিয়েছিলো?
এগারো তারিখ সকালে স্টিকলহ্যাভেন একদল স্কাউটের চোখে পড়ে সেই সংকেত। সেইদিন যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিলো না। তাই বারো তারিখের আগে সেই দ্বীপে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার জিজ্ঞেস করলেন, প্রাসাদে যে গ্রামোফোন রেকর্ডটা তুমি পেয়েছিলে, সেটার কি খবর? ওটা থেকে কোনো ক্লু কিংবা সাহায্য পেলে না?
উত্তরে ইন্সপেক্টর মেইন বলে ওটা নিয়েও আমি মাথা ঘামিয়েছি। সেই রেকর্ডটা যে কোম্পানি সরবরাহ করেছিলো, তারা সিনেমা ও থিয়েটারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরী করে থাকে। রেকর্ডটা আইজ্যাক মরিসের ঠিকানায় মিঃ ইউ. এন. ওয়েনের কাছে পাঠিয়ে দেয় তারা। তাদের বলা হয়েছিলো সখের থিয়েটারে সেই রেকর্ডটা নাকি ব্যবহার করা হবে। টাইপ করা স্ক্রিপটা রেকর্ডের সঙ্গেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
লেগ জিজ্ঞেস করলেন, তা সেই রেকর্ডটার বিষয়বস্তুই বা কি ছিলো?
সেই প্রসঙ্গে আম আসছি স্যার, গম্ভীর হয়ে বললো ইন্সপেক্টর মেইন। গলা পরিস্কার করে আবার বলতে শুরু করলো সে, সমস্ত অভিযোগের ব্যাপারে যতদূর সম্ভব আমি খোঁজখবর নিয়েছি। প্রথমে রগার্স দম্পতিদের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। ওরাই সর্ব প্রথম সেই দ্বীপে এসে পৌঁছায়। আগে ওরা মিস ব্র্যান্ডির বাড়িতে কাজ করে? মিস্ ব্র্যান্ডি হঠাৎ মারা যান। তার চিকিৎসকের কাছ থেকে তেমন কিছুই জানা যায়নি। সে বলে, রগার্স দম্পতি অবশ্যই তাকে বিষ খাওয়ায়নি। কিংবা সেরকম কিছু করেনি, কিন্তু তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস হলো, মিস্ ব্র্যান্ডির হঠাৎ মৃত্যুটা কেমন যেন একটু গোলমেলে হয়তো তাদের তরফ থেকে অবহেলা করার দরুণই তার অসময়ে মৃত্যু ঘটে। সে আরো বলে, তবে এই অভিযোগ প্রমাণ করা অসম্ভব ব্যাপার।