কিন্তু কেমন করে?
তা আমরা জানি না। লম্বার্ড তার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, তবে তুমি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো তাহলে বলবো একমাত্র বিপজ্জনক ব্যক্তি হলো ব্লোর। লোকটার সম্পর্কে আমরা কতোটুকুই বা জানি। সে তো নিজেই একজন পুলিশম্যান হিসাবে পরিচয় দিয়েছে। এ সব বানানো গল্প, হয়তো সে একজন উন্মাদ, জেদী ব্যবসায়ী, কিংবা সে রকম কিছু। যে কোনো অপরাধমূলক কাজ সে অনায়াসে করতে পারে। আর একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, এ ধরনের অপরাধ যে কোনো লোকের সঙ্গে করতে পারে সে।
ফ্যাকাসে সাদা হয়ে গেলো ভেরার মুখ। এক নিঃশ্বাসে বললো সে ধরুন যদি সে তার নাগালের মধ্যে আমাদের পায়?
তার থেকে আমি অনেক বেশী সতর্ক, পকেটে রাখা রিভলবারের ওপর চাপড় মেরে কেমন কৌতূহলী চোখ নিয়ে ভেরার দিকে তাকালো লম্বার্ড। নরম গলায় বললো, আমার ওপর তোমার বিশ্বাস আছে, আছে না ভেরা? তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো আমি তোমাকে গুলি করবো না।
উত্তরে ভেরা বলে, একজন না একজন কাউকে বিশ্বাস তো করতেই হবে…..সত্যি কথা আর্মস্ট্রং–হঠাৎ তার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো ভেরা, আপনার কি মনে হয় না, একজন হা কেউ একজন সব সময় আমাদের উপর নজর রাখছে, খতম করার জন্য সুযোগের অপেক্ষা করছে?
ওটা তো তোমার নার্ভাসের লক্ষণ।
তাহলে আপনি সেটা অনুভব করেছেন? অনেক আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ভেরার গলা কেঁপে ওঠে। ঝুঁকে পড়ে লম্বার্ডের পাশে একটু ঘন হয়ে দাঁড়ালো ভেরা। বলুন, আপনি তা মনে করেন না? একবার আমি একটা গল্প পড়ি-দুই বিচারক একদিন আমেরিকায় ছোট্ট একটা শহরে এলো সুপ্রিম কোর্ট থেকে। তাদের বিচার হলো, একেবারে ন্যায্য বিচার যাকে বলে। কারণ তাদের সেই বিচারক তো এ জগতে ছিলেন না, তিনি ছিলেন……।
ভ্রু তুলে বললল লম্বার্ড, তার মানে তুমি বলতে চাইছে, বিচারক নেমে এসেছিলেন স্বর্গ থেকে এঃ? না, না ও সব আধ্যাত্মিক বা ঐশ্বরিক ক্ষমতায় আমি বিশ্বাসী নই। এ সব কাজ মানুষের পক্ষে যথেষ্ট।
নিচু গলায় বলে ভেরা জানেন এক এক সময়ে আমিও ঠিক নিশ্চিত হতে পারি না, মনে হয়……
তার দিকে চকিতে একবার তাকিয়ে তার মুখের কথাটা কেড়ে নিয়ে বললো লম্বার্ড। সেটা বিবেকের দংশন….কিছুক্ষণ নীরব থেকে শান্ত গলায় আবার বললো তার মানে আসলে তুমি সত্যিই ডুবিয়ে মেরেছিলে ছেলেটিকে?
না। না আমি তাকে হত্যা করিনি, আমি তাকে মারতে চাইনি। জোর দিয়ে বললো ভেরা, আমার এ কথা বলার কোনো অধিকার নেই।
লম্বার্ডের ঠোঁটে একটা সহজ সরল হাসি ফুটে উঠতে দেখা গেলো। হা, তুমি ঠিক তাই করেছিলে সোনামণি। তবে তার কারণ আমি জানি না। আর কল্পনাও করতে পারি না। তবে সম্ভবত এর মধ্যে একজন পুরুষ থেকে থাকবে। কে, কে সে?
হঠাৎ একটা পরিবর্তন অনুভব হলো ভেরার মধ্যে, তারা কারা মুখ ছেয়ে গেলো একটা চিন্তার ছায়া। ম্লান বিষণ্ণ গলায় বললো সে, হা, তার মধ্যে একজন পুরুষ ছিলো…
ধন্যবাদ, নরম গলায় বললো লম্বার্ড, হ্যাঁ এই কথাটাই আমি জানতে চেয়েছিলাম।
এই সময় হঠাৎ ভেরা উঠে দাঁড়িয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলো, এ কি? ভূমিকম্প নাকি?
না, না, ভূমিকম্প টম্প নয়, উত্তরে বললো লম্বার্ড শব্দটা মনে হলো প্রাসাদের দিক থেকেই এলো। আমি ভাবলাম–আচ্ছা তুমি কোনো কান্নার শব্দ শুনতে পেয়েছো? আমি কিন্তু শুনেছি।
প্রাসাদের দিকে তাকালো তারা। হা ঐ প্রাসাদ থেকেই কান্নার আওয়াজটা যেন ভেসে এলো। চলো, প্রাসাদের দিকে যাওয়া যাক।
না, না আমি যাচ্ছি না।
তাহলে তুমি থাকো, আমি চললাম।
ভেরা তখন মরিয়া হয়ে বললো, ঠিক আছে, আমি আপনার সঙ্গে যাবো।
প্রাসাদে যাওয়ার ঢালু পথ দিয়ে এগিয়ে চললো তারা। প্রাসাদের সামনের উঠোনটা দুর থেকে বেশ শান্ত বলেই মনে হলো, দুপুরের রোদের আলো ঝলমল করছিল সেখানে। এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে একটু ইতস্তত করলো তারা। তারপর প্রাসাদে প্রবেশ না করে দেওয়ালে পিঠ দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।
আর তখনি তারা দেখতে পেলো ব্লোরকে। উঠানের পূর্ব দিকে হাত পা ছড়িয়ে চিত হয়ে পড়ে আছে সে, একটা ভারি সাদা মারবেল পাথরের আঘাতে থেঁতলে গেছে তার মাথাটা।
মাথা তুলে ওপরের দিকে তাকালো লম্বার্ড, তারপর জানালার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো সে, আমার ঠিক মাথার ওপরে ঘরটা কার বলো তো?
আমার, নিচু গলায় বললো ভেরা, ঘরের তাকে রাখা ঐ পাথরটা ঘড়ির খাপ……হ্যাঁ, এখন আমার মনে পড়েছে, সেটা দেখতে কতকটা ভালুকের মতো ছিলো।
ফিলিপস লম্বার্ড তার কাঁধ ঝাঁকালো। এখন বোঝা যাচ্ছে, ঐ প্রাসাদেই কোথাও লুকিয়ে আছে আর্মস্ট্রং। আমি চললাম তাকে খুঁজতে।
কিন্তু তাকে জড়িয়ে ধরলো ভেরা। প্রায় আর্তনাদ করে উঠলো সে। বোকামি করো না। তার কথায় অন্তরঙ্গতার সুর, এখন আমাদের পালা এর পর আমরা। আমরা খুঁজি, এটাই তো সে চায়। সে এখন মুহূর্ত গুনছে আমাদের জন্য। আমাদের খতম করতে পারলেই তার সব হিসেব শেষ।
থমকে দাঁড়ালো ফিলিপ। কি ভেবে বললো সে, এর মধ্যে কিছু একটা রহস্য অবশ্যই আছে।
সে যাই হোক, ভেরা বলেন, আমার অনুমান যে ঠিক, এখন তুমি নিশ্চয়ই স্বীকার করবে।
মাথা নেড়ে সায় দিলো সে। হ্যাঁ, তোমারি জয়। হ্যাঁ, এ সব কাজ আর্মস্ট্রং এরই কিন্তু সেই শয়তানটা কোথায় বা নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে? আমরা তাকে চিরুণী খোঁজার মতো খুঁজেছি।