ওদিকে আর একবার কাশি দমন করলেন বিচারপতি ওয়ারগ্রেভ রুমালে মুখ চেপে। তারপর রগার্সের দিকে ফিরে বললেন তিনি, আমি কিন্তু সেই প্রশ্নটার জবাব এখনো পাইনি, আচ্ছা রগার্স সত্যি করে বলতো গ্রামাফোনটা কি তুমিই চালিয়ে দিয়েছিলে আমাদের সবার অলক্ষ্যে।
হ্যাঁ আমিই চালিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন স্যার, কান্নার মতো শোনালো রগার্সের কণ্ঠস্বর, ঐ রেকর্ডে কি আছে আগে আমি কিছুই জানতাম না। জানলে কি আর চালাই
তা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু কেনই বা তুমি চালাতে গেলে বলতো?
হ্যাঁ নিশ্চয়ই বলবো স্যার, একটু দম নিয়ে সে তার কথার জের টেনে বললো, আমার ওপর নির্দেশ ছিলো।
কার নির্দেশ?
মিঃ ওয়েনের।
তাই বুঝি। মিঃ ওয়েন তোমাকে আর কি নির্দেশ দিয়েছিলেন বলো।
ড্রয়ার খুলে রেকর্ডটা বার করে ডিস্কের ওপর বসিয়ে দিয়ে যাই। ভাবলাম আপনাদের কফি করার সময় ইথেল এ ঘরে গিয়ে চালিয়ে দেবে গ্রামাফোন। কথা মতো সেইরকম হয়েছে?
বাঃ বাঃ চমৎকার একটা আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে বসলে তো, ওয়ারগ্রেভের ঠোঁটে একটা সূক্ষ্ম ব্যঙ্গের হাসি ফুটে উঠলো।
না স্যার, এটা কোনো আষাঢ়ে গল্প নয়। বিনীত স্বরে বললো রগার্স, ঈশ্বরের নামে আমি শপথ নিয়ে বলছি এ সবই সত্যি, এর মধ্যে এতটুকু মিথ্যার আশ্রয় নেই। ঐ রেকর্ডটার মধ্যে সত্যি কি আছে, আমি তার বিন্দু বিসর্গ জানতাম না। আমার ধারণা ছিলো ওটা কোনো গানের রেকর্ড-টেকর্ড হবে। মিঃ ওয়েন আমাকে বাজিয়ে শোনাতে বলে থাকবেন। তা ঐ রেকর্ডটার ওপর চাকতিতে কি যেন একটা নাম লেখা ছিলো
চিন্তিত ওয়ারগ্রেভ বললেন, তুমি আমাদের গান শোনাতে চেয়েছিলে? তা সেই চাকতিতে কি লেখা ছিল দেখেছ?
তা তো ঠিক মনে নেই স্যার
আমি দেখেছি। সমুদ্র-পাখীর গান। দারুণ মিষ্টি নাম তাই না? দাঁত বার করে হাসলো লম্বার্ড।
মিথ্যে, সব মিথ্যে, সব বানানো গল্প। হঠাৎ রাগে চিৎকার করে উঠলো ম্যাকআর্থার। এই অন্যায় অভিযোগের একটা প্রতিকার দরকার। মিঃ ওয়েনকে ডাকো এখুনি। ঐ শঠ, প্রতারক, নচ্ছাটাকে একবার হাতের কাছে পেলে আমি
হাতের ইঙ্গিতে তাকে থামতে বললেন। এমিলি, উনি তো ঠিকই বলেছেন। কে, কে এই মিঃ ওয়েন?
এই প্রশ্নটা আমারও, তাকে সমর্থন করলেন ওয়ারগ্রেভ, এই রসিকবরযিনিই হোক না কেন, তাঁকে আমার সশরীরে একবার দেখতে চাই। শোনো রগার্স, তুমি এক কাজ করো, তোমার অসুস্থ স্ত্রীকে ওর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চট-জলদি ফিরে এসো এখানে, তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে।
ইথেলকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে রগার্সকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন ডঃ আর্মস্ট্রং। দুজনে ধরাধরি করে ইথেলকে নিয়ে ঘরথেকে বেরিয়ে যেতেই উঠে দাঁড়ালো মার্স্টান, অনেকক্ষণ থেকেই উসখুস করছিল সে। আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তো আমি তাহলে এক পাত্তর
দয়া করে আমাকেও একটু দেবেন, মার্স্টানকে অনুসরণ করলো লম্বার্ড।
দুজনে ফিরে এলো একটু পরে পানীয়র গ্লাস সাজানো ট্রে হাতে নিয়ে। ম্যাকআর্থার ও ওয়ারগ্রেভ তুলে নিলেন হুইস্কি গ্লাস। অন্যেরা ব্রাণ্ডি। কেবল এমিলিই ও-রকম অনাসক্ত, নিলেন শুধু এক গ্লাস জল।
খানিক পরে ফিরে এসে সবাইকে সুরা পান করতে দেখে ডঃ আর্মস্ট্রং বললেন, মিসেস রগার্সকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ফিরে আসতে একটু দেরী হলো বলে কি আমি ও রসে বঞ্চিত হবো? এ অধমের প্রতি একটু দয়া করুন ভাই।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে চললো পানোৎসব। এক সময় রগার্স ফিরে এলো।
রগার্সের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে ঘরটা পরিণত হলো যেন এক বিচারকক্ষ। আর বিচারপতির ভূমিকা নিলেন প্রধান বিচারপতি ওয়ারগ্রেভ। শুরু করলেন তার জেরা।
এখনো বলো রগার্স, মিঃ ওয়েনের ব্যাপারে তুমি ঠিক কতটুকু জানো।
এই দ্বীপ, এই প্রাসাদ, সব কিছুরই মালিক তিনি।
নতুন করে সে খবর জানতে চাই না তোমার কাছে থেকে। অমি সেই লোকটার সম্পর্কে জানতে চাই। বলো কি জানো তুমি আমার সম্পর্কে?
কিছুই তো জানি না স্যার। আসলে আমি তাকে দেখিইনি কোনোদিন।
অবাক চোখে সবাই এ ওর দিকে তাকায়। প্রতিবাদ করে উঠলেন ম্যাকআর্থার, বড় অদ্ভুত কথা তুমি শোনালে তো। কোনদিন দেখনি মানে?
বিশ্বাস করুন সত্যিই তাঁর সঙ্গে আমার সামনা-সামনি দেখা হয়নি। কৈফিয়ত দেয় রগার্স আসলে আমার চাকরী এখানে মাত্র এক সপ্তাহের জন্যে। প্লিমাউথ রেজিনা এজেন্সিতে আমাদের নাম লেখানো ছিলো, তাদের সুপারিশেই আমার এই চাকরী। তা সেই চাকরীর চিঠিতেই লেখা ছিল কবে এখানে আসতে হবে আমাদের। চলে এলাম। এখানে এসে দেখি সাজানো প্রাসাদ, খাবারের ঘরে নানান ধরণের খাবার মজুত, থরে থরে পানীয়ের বোতল সাজানো ওয়াইন ক্যাবিনেটে।
তারপর
তারপর আর একখানি চিঠি পেলাম। এখানে নাকি একটা ঘরোয়া পার্টি দেবেন মিঃ ওয়েন, ঘরদোর যেন সাফ করে রাখি। তাও রাখলাম। কিন্তু গতকালই এলো তৃতীয় চিঠি। সেই চিঠিতে মিঃ ওয়েন জানিয়েছেন অনিবার্য কারণবশতঃ তিনি আসতে পারবেন না, আর তার স্ত্রীও আসছেন না। তবে আমাদের সেবা-যত্নের ত্রুটি আমরা যেন না রাখি। আর সেই চিঠিতেই নির্দেশ ছিলো নৈশভোজের পর কফি দেওয়া হয়ে গেলে যেন গ্রামাফোন
সেই চিঠিখানা দেখাতে পারো?
নিশ্চয়ই সেটা আমার পকেটে আছে। এই দেখুন স্যার। চিঠিটা পকেট থেকে বার করে তাঁর হাতে তুলে দিলে রগার্স।