- বইয়ের নামঃ অ্যান্ড দেন দেয়ার ওয়্যার নান, দ্য মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার অ্যাট স্টাইলস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ আদী প্রকাশন
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস, ভূতের গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
অ্যান্ড দেন দেয়ার ওয়্যার নান, দ্য মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার অ্যাট স্টাইলস
০১. ট্রেনটা ছুটে চলেছে
অ্যাণ্ড দেন দেয়ার ওয়াজ নান (অন্যান্য উপন্যাস)
০১.
ট্রেনটা ছুটে চলেছে হাওয়ার বেগে…….
প্রথম শ্রেণীর কামরার এক প্রান্তে বসে আছে মিঃ ওয়ারগ্রেভ, সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। হাতে জ্বলন্ত সিগার, চোখের আগ্রহ দৃষ্টি স্থির নিবদ্ধ দি টাইমস-এর রাজনৈতিক সংবাদ-স্তম্ভে।
সিগারের লম্বা একটা টান দিয়ে ভোলা জানালা পথে বাইরে চোখ মেলে তাকালেন ওয়ারগ্রেভ। সবুজ ঘাসে ছাওয়া মাঠের পর মাঠ। মাঠ পেরিয়ে দুরে, বহুদুরে ভূমিতে মাথা নুইয়ে আকাশ যেন বলছে, প্রণমি তোমায়। দৃশ্যটা অপূর্ব। যেন অকৃপণ হাতে সব সৌন্দ বিলিয়ে দিয়েই প্রকৃতি খুশি সেখানে। সামারসেটের এমন প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী সত্যিই অতুলনীয়।
কব্জি ঘড়ির ওপর দৃষ্টি দিলেন ওয়ারগ্রেভ। পৌঁছতে এখনো ঘণ্টা দুয়েক বাকি। তার গন্তব্যস্থল নিগার দ্বীপ। দ্বীপটা যেন রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। প্রায় প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে শুধু একটি নাম নিগার দ্বীপ। আর খবরের কাগজগুলোই বা কি? দ্বীপটা নিয়ে কাগজগুলো কদিন কত রোমাঞ্চকর লেখাই না লিখল। সেই সব লেখাগুলো এক এক করে ভাবতে বসলেন ওয়ারগ্রেভ। সেই কোটিপতি আমেরিকাবাসী, সমুদ্রের জলে ইয়ার্ট চালাতে যিনি ভালোবাসেন, এই মুহূর্তে তার নামটা ঠিক মনে করতে পারলেন না ওয়ারগ্রেভ। সে যাইহোক এই দ্বীপের তিনিই প্রথম মালিক হন। ডিভনের উপকূলে ছবির মতো একটা বিরাট বিলাসবহুল প্রাসাদ বানালেন তিনি ফুর্তিতে কাটানোর জন্যে–এ সব খবরই খবরের কাগজগুলোতে বেরিয়েছে। আরো আছে, লেখার মতো খোরাকও বটে। সেই কোটিপতি আমেরিকাবাসীর ভাগ্য বোধ হয় নেহাতই খারাপ ছিল, তা না হলে তার, তৃতীয় পক্ষের স্ত্রীটি কেনই বা টিকলো না বেশিদিন। ভদ্রলোক মনের দুঃখে তার সেই সাধের দ্বীপটি ছেড়ে একদিন হঠাৎ উধাও হয়ে গেলেন।
এরপর সেই দ্বীপের মালিক হয়ে এলেন অখ্যাত একজন যার নাম মিঃ ওয়েন। তার ভাগ্যে বাড়িটা সহ্য হলো না। একটা মাসও পূর্ণ হলো না, খবরের কাগজগুলো খবরের মুখর হয়ে উঠল। নতুন করে সত্যি-মিথ্যা মেশানো যত সব আজগুবি খবর ছাপালো, যার মধ্যে বেশির ভাগই থাকত সব কেচ্ছা কাহিনী। খবরের কাগজের সূত্রেই জানা গেলো হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী মিস গ্যাব্রিয়েল টার্ল মাস কয়েকের জন্যে নিশ্চিন্তে ছুটি কাটাতে এসেছেন এই দ্বীপে। তাকে ঘিরে শুরু হলো খবরের কাগজগুলোর জল্পনা-কল্পনা। নানান গবেষণা। কোন এক সাংবাদিক লিখলেন, এতদিনে বুঝি এবার যথার্থ এক মধুকুঞ্জে পরিণত হলো নিগার দ্বীপটি। কোথায় হলিউডে চিত্র সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে বিদ্ধ হওয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে নিগার দ্বীপে নির্ঝঞ্ঝাট ছুটি উপভোগ করবেন গ্যাব্রিয়েল। আর হতে দিলো না খবরের কাগজগুলো! কোন কোন কাগজ আবার একটা চাঞ্চল্যকর খবরের বোমা ফাটালো-ইংল্যাণ্ডের রাজপরিবারে জনৈক লর্ড নাকি এই দ্বীপটির বর্তমান মালিক। আবার কারোর মতে সেই নামী দামী লর্ডকে পঞ্চশর বিদ্ধ করতে এমন একটা আদর্শ জায়গা নাকি সারা বিশ্বে আর কোথাও নেই। শোনা যায় লর্ড নাকি এতদিনে জনৈক যুবতীর প্রেমে ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়েছেন, এবং খুব শীগগীর তাকে বিয়ে করছেন। তিনি বিয়ের পর তার নরপরিণীতা বধুকে সঙ্গে নিয়ে মধুচন্দ্রিমা যাপন করবেন। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই আর একটা কাগজ বোমা ফাটালো, হ্যাঁ এবার সত্যিকারের বোমা ফাটানোর মতো ব্যবস্থাই বটে। সেই কাগজের খবর হল এই রকম জনৈক লর্ড ও তার নবপরিণীতা বধূর মধুচন্দ্রিমা যাপনের জন্যে নিগার দ্বীপের সেই প্রাসাদটা কেনা নয় আসলে ব্রিটেনের নৌবাহিনীর প্রতিরক্ষা গবেষণা দপ্তর সেখানে নতুন ধরনের অস্ত্র পরীক্ষা চালাবার উদ্দেশ্য নিয়ে সেই দ্বীপটি এবং প্রাসাদটা কিনেছে। পরিশেষে শেষ সংবাদ সূত্রে আর একটি কাগজ লিখেছে, বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, হলিউডের সেই অভিনেত্রী মিস্, টার্লের কোন এক স্তাবকই নাকি এই দ্বীপটি তাকে কিনে দিয়েছেন। প্রেমিকের এই মূল্যবান উপহারটি পেয়ে প্রিয়া নাকি দারুণ খুশী।
সেই সময় কাগজগুলো এমনি কত খবরই না ছাপিয়েছিল। তার মধ্যে কোনটা সত্যি আবার কোন্টাই বা মিথ্যে যাচাই করার প্রয়োজন বোধ কেউ করেননি। অমন সব মুখরোচক খবর পড়েই সন্তুষ্ট সবাই, এবং ওয়ারগ্রেভও।
ওয়ারগ্রেভ তার চিন্তার ইতি টেনে এবার তার কোটের পকেট থেকে অতি সন্তর্পণে চিঠিখানি বার করে চোখের সামনে মেলে ধরলেন। হাতের লেখা অতি জঘন্য, তার ওপর আবার অস্পষ্ট, অনেক জায়গায় আবার ভাল করে বোঝাই যায় না। তবে সেই বোঝ না বোঝার সমস্যাটা কাটিয়ে উঠে কোনক্রমে চিঠির বক্তব্যটা পাঠোদ্ধার করলেন ওয়ারগ্রেভ :
প্রিয় লরেন্স,
কতদিন তোমার কোন খবর নেই বল তো? যাইহোক, নিগার দ্বীপে তোমার কিন্তু আসা চাই-ই। তোমার নিশ্চয়ই খুব ভাল লাগবে, ভারী চমৎকার জায়গা। চিঠিতে বোঝানো যাবে না। চলে এসো এখানে। নিজের চোখেই প্রত্যক্ষ করে যাও। সেই যে তোমার হারিয়ে যেতে নেই মানা। তোমার সঙ্গে দুজনে মিলে স্মৃতিচারণ করা যাবে। প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে রোদ্দুরে পিঠ রেখে বালুকাবেলায় শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে আকাশ পানে উন্মুখ হয়ে, তার একটা আলাদা মাদকতা আছে। প্যাডিংটন থেকে বারোটা চল্লিশের ট্রেন ধরে রওনা হবে। ওকব্রীজ স্টেশনে আমাদের দেখা হবে…………
তোমার বিশ্বস্ত কনস্টান্স কালসিংটন