মিউল বলল, রাগ করে লাভ নেই… তুমি লুকোচ্ছ, তাই না? কিন্তু আমি সব দেখতে পারছি। তাই শুধু মনে রাখবে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটবে এবং বারবার ঘটতে থাকবে। আমার মেন্টাল পাওয়ার দিয়ে অনেক মানুষ মেরেছি এবং এর চেয়ে কষ্টকর মৃত্যু আর নেই।
থামল সে, ‘এই পর্যন্তই।‘
.
মিউল আবার একা হল। আলো বন্ধ করে সে সামনের দেওয়ালের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনল। আকাশ এখন কালো, আর মহাকাশের মসৃণ গহ্বরে গ্যালাকটিক লেন্সের প্রসারমান অবয়ব চুমকীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে।
নিহারিকার পাতলা কুয়াশার মতো যা দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে অসংখ্য নক্ষত্রের সমষ্টি পরস্পরের সাথে এমনভাবে মিশে গেছে যে মনে হয় একটি আলোর মেঘ।
এবং এর সবকিছুই তার-–
আর শুধু একটা কাজ সারতে হবে, তারপর ঘুমাতে যাবে সে।
প্রথম সম্মেলন
তাদেরকে বলা হয় সাইকোলজিস্ট-এবং তাতেও সবটুকু ব্যাখ্যা হয় না। বরং বলা উচিৎ “সায়েন্টিস্ট উইথ সাইকোলজিক্যাল অরিয়েন্টেশন।” অর্থাৎ এই মানুষগুলোর বৈজ্ঞানিক দর্শন আমাদের পরিচিত বৈজ্ঞানিক দর্শন থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। প্রচলিত সাইকোলজির অনুমিতির সাথে এই সাইকোলজির কোনো মিল নেই।
বিষয়টা ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন-অনেকটা একদল অন্ধলোকের নিকট আরেকজন অন্ধলোকের রং এর বর্ণনা দেওয়ার মতো।
মোট কথা এখানে যারা আছেন তাদের প্রত্যেকেই প্রত্যেকের মাইণ্ড গঠন এবং কার্যপ্রণালী বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারেন। শুধু তাত্ত্বিক ভাবেই নয় বহুদিন ধরে এই তত্ত্বগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির উপর প্রয়োগ করে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন তারা। আমাদের কাছে যা দীর্ঘ বক্তব্য হিসেবে পরিচিত এখানে সেটা অপ্রয়োজনীয়। বাক্যের কোনো একটি ছোট অংশও এখানে বাহুল্য। ইশারা, ইঙ্গিত-এমনকি নির্দিষ্ট সময়ের নীরবতা থেকেও পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্যের আদান প্রদান হয়।
যাই হোক আশৈশব সাইকোলজিক্যাল অরিয়েন্টেশনে বেড়ে উঠা এই মানুষগুলোর সম্মেলনের ক্ষুদ্র একটি অংশ শব্দ এবং বাক্যের সমন্বয়ে প্রকাশ করা হলো আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বোঝার জন্য। যদিও সূক্ষ্ম তারতম্যের কিছুটা ভয় আছে।
প্রধান ‘কণ্ঠস্বর’ সবাই তাকে জানে শুধুমাত্র ফার্স্ট স্পিকার হিসেবে, তিনি বলছিলেন ‘স্পষ্টতই এখন বোঝা যাচ্ছে মিউল তার প্রথম আগ্রাসন থামাতে কেন বাধ্য হয়েছিল। মিউল তার কৃত্রিম ব্রেইন এনার্জি বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের অবস্থান প্রায় জেনে ফেলেছিল। সেই লোক, প্রথম ফাউণ্ডেশন যাকে “সাইকোলজিস্ট” বলে জানত, মিউলের কাছে তার আবিষ্কারের কথা বলার আগ মুহূর্তে তাকে হত্যা করা হয়। ফেজ থ্রি অনুযায়ী এটি একটি আকস্মিক ঘটনা। এবার তুমি বল।‘
ফার্স্ট স্পিকার, পঞ্চম বক্তাকে নির্দেশ করলেন, সে সূক্ষ্ম কাঠিন্যের সাথে বলা শুরু করল, ‘এটা নিশ্চিত যে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছিল। সম্মিলিত আক্রমণের মুখে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম, বিশেষ করে যে-আক্রমণ পরিচালিত হয় মিউলের মতো তীক্ষ্ণ মেন্টাল পাওয়ারের অধিকারী একজনের দ্বারা, প্রথম ফাউণ্ডেশনকে পরাজিত করার কিছুদিন পরে, সঠিক হিসাবে ছয়মাস পড়ে সে ট্রানটরে এসেছিল। ছয়মাসের মধ্যে আবার সে এখানে আসবে এবং সমস্ত সম্ভাবনা আমাদের প্রতিকুলে–৯৬.৩ প্লাস অথবা ০.০৫%, যথার্থ হিসাবে। যে-শক্তি মিউলকে থামতে বাধ্য করেছিল তার বিশ্লেষণ করতে আমাদের প্রচুর সময় দিতে হয়েছে। আমরা জানি কোন অনুভূতি তাকে পরিচালিত করেছে। শারীরিক খুঁতের কারণে তার ভিতরে তৈরি জটিলতা এবং মানসিক বিশেষত্ব আমাদের জানা। যাই হোক, ফেজ থ্রি দ্বারা সমস্ত ঘটনা বিশ্লেষণ করে চিহ্নিত করা গেছে যে–তার এই নিয়ম-বহির্ভূত আচরণের প্রধান কারণ হচ্ছে তার প্রতি সত্যিকার অনুভূতি রয়েছে এমন একজন ব্যক্তির উপস্থিতি।
‘এবং যেহেতু এই নিয়ম-বহির্ভূত আচরণ সঠিক সময়ে আরেকজন হিউম্যান বিয়িং এর উপর নির্ভর করে, তাই শুধু এই ঘটনাই আকস্মিক। আমাদের এজেন্ট নিশ্চিত যে এক তরুণী মিউলের সাইকোলজিস্টকে হত্যা করে। এই মেয়েটিকে মিউল বিশ্বাস করত এবং তাই তাকে সে মেন্টালি কন্ট্রোল করেনি–কারণ মেয়েটি তাকে পছন্দ করত।
‘সেই ঘটনার পর, পুরো বিষয়টির একটি গাণিতিক বিশ্লেষণ করা হয়–যার বিস্তারিত বর্ণনা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে রয়েছে। এই বিশ্লেষণ আমাদের সতর্ক করে তুলেছে। কারণ আমরা মিউলকে থামিয়েছি অপ্রচলিত পদ্ধতিতে যার ফলে সেলডনের সমস্ত পরিকল্পনা প্রতিদিন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।‘ এই বলে সে শেষ করল।
ফার্স্ট স্পিকার বলার পূর্বে প্রত্যেককে বিষয়টি অনুধাবন করানোর জন্য কিছুক্ষণ থেমে থাকলেন। পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। সেলডনের মুল পরিকল্পনা প্রায় ধ্বংসের মুখে এবং সেই সাথে আমি এও বলব যে, আমাদের দূরদৃষ্টির অভাবে ব্যাপারটি আরও জটিল হয়ে পড়ছে। সময় চলে যাচ্ছে। আমার মতে আমাদের হাতে একটাই সমাধান রয়েছে–যদিও সেটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।
‘আমাদের খুঁজে বের করার জন্য মিউলকে সুযোগ দেব–আপাতদৃষ্টিতে।‘
আবার কিছুক্ষণ থামলেন, এই সুযোগে সকলের অনুভূতি বুঝে নিলেন, তারপর আমি আবারও বলছি–আপাতদৃষ্টিতে।
১.২ মহাশূন্য
মহাকাশযান যাত্রার জন্য প্রায় তৈরি। কোনো কিছুর অভাব নেই, শুধু গন্তব্য ছাড়া। মিউল আবার ট্র্যানটরে ফিরে যেতে বলেছে–যা ছিল মানব সভ্যতার সর্ববৃহৎ অতুলনীয় মেট্রো পলিস–এই ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবী একসময় ছিল গ্যালাকটিক এম্পায়ারের রাজধানী।