- বইয়ের নামঃ সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন
- লেখকের নামঃ আইজাক আসিমভ
- প্রকাশনাঃ সন্দেশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, বৈজ্ঞানিক
সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন
১ম পর্ব: মিউলের অন্বেষণ
সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন (সায়েন্স ফিকশন)– আইজাক আসিমভ
অনুবাদ : নাজমুছ ছাকিব
ভূমিকা
ভেঙে যাচ্ছে দশ হাজার বছরের ফার্স্ট গ্যালাকটিক এম্পায়ার। গ্যালাক্সির প্রতিটা গ্রহ নক্ষত্র ছিল এই এম্পায়ারের অন্তর্ভুক্ত। মানব জাতি প্রায় ভুলেই গিয়েছিল যে অন্য কোনো ধরনের শাসন ব্যবস্থা ছিল বা থাকতে পারে।
এক মাত্র হ্যারি সেলডন বুঝতে পেরেছিলেন।
হ্যারি সেলডন ছিলেন ফাস্ট গ্যালাকটিক এম্পায়ারের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ। তার হাতেই সায়েন্স অব সাইকোহিস্টোরি পরিপূর্ণ বিকশিত হয়। সাইকো হিস্টোরি সমাজ বিজ্ঞানেরই অতি উন্নত একটি শাখা। এর সাহায্যে মানুষের আচরণকে গণিতের সূত্রে প্রকাশ করা যায়।
একজন মানুষের আচরণ ব্যখ্যা করা কঠিন, কিন্তু সেলডন দেখতে পেলেন যে দলবদ্ধ একটি বিশাল মানবগোষ্ঠীর আচরণ পরিসংখ্যানিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। জনগোষ্ঠী যত বৃহৎ হবে ফলাফল হবে তত বেশী নিখুঁত। আর সেলডন যে সময়ে তার সাইকোহিস্টোরি নিয়ে গবেষণা করেন সেই সময় গ্যালাক্সির জনসংখ্যা হিসাব করা হতো কুইন্টিলিয়ন্স-এ।
হ্যারি সেলডন, একমাত্র তিনিই প্রচলিত ধ্যান ধারণার উর্ধ্বে উঠে বুঝতে পেরেছিলেন যে মানুষের হাতে গড়ে উঠা সবচেয়ে জটিল এবং শক্তিশালী সংগঠন, ধারণা করা হতো যা কখনো ধ্বংস হবেনা-পচন ধরেছে তার ভেতর, ধীরে ধীরে ক্ষয় হচ্ছে। তিনি অনুমান করতে পারলেন (বা তার সমীকরণগুলো সমাধান করে এ-ধরনেরই কোনো ফলাফল পেলেন) যে আরেকটা নতুন সমন্বিত শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠার আগে গ্যালাক্সিতে যে সিমাহীন অরাজকতা, বর্বরতা এবং অশান্তি তৈরি হবে তার স্থায়িত্ব হবে ত্রিশ হাজার বছর।
মানব জাতিকে রক্ষার উপায় তিনি বাতলে দিলেন, মাত্র একহাজার বছরের মধ্যে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তৈরি করলেন মহাপরিকল্পনা। সতর্কতার সাথে গ্যালাক্সির দুই বিপরীত দিকের সুদূরতম প্রান্তে ফাউণ্ডেশন’ নামে বিজ্ঞানীদের দুটো কলোনি স্থাপন করলেন। একটি ফাউণ্ডেশন তিনি স্থাপন করেন প্রকাশ্য দিবালোকে। অর্থাৎ গ্যালাক্সির সবাই এই ফাউণ্ডেশনের কথা জানত। অন্য ফাউণ্ডেশনের কথা তিনি গোপন করে যান। ফলে ওই ফাউণ্ডেশনের অস্তিত্ব ও উদ্দেশ্য থেকে যায় অজানা।
ফাউণ্ডেশন এবং ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার এ ফাস্ট ফাউণ্ডেশনের প্রথম তিন শতাব্দীর ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল গ্যালাক্সির আউটার পেরিফেরির ছোট এক গ্রহে এনসাইক্লোপেডিস্টদের ছোট লোকালয় হিসেবে। ধারাবাহিকভাবে তারা একটা একটা করে ক্রাইসিসের মুখোমুখি হয় যেখানে মানুষের আন্তঃসম্পর্ক এবং সময় উপযোগী সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবাহের সমন্বয় ঘটে। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট পথে চলার স্বাধীনতা ছিল এবং সেই পথে চলার ফলে প্রথম ফাউণ্ডেশন দ্রুত উন্নতি লাভ করে। সবকিছুই হ্যারি সেলডন ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছিলেন।
প্রথম ফাউণ্ডেশন উৎকৃষ্ট বিজ্ঞানের সাহায্যে আশেপাশের অনুন্নত গ্রহগুলো দখল করে। এম্পায়ার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অত্যাচারী ওয়ারলর্ডদের পরাজিত করে। শেষপর্যন্ত এম্পায়ারের শেষ শক্তিশালী সম্রাট এবং শেষ শক্তিশালী জেনারেলদের সাথে ফাউণ্ডেশনের যুদ্ধে এম্পায়ারের পুরোপুরি পতন ঘটে।
কিন্তু তারপর ফাউণ্ডেশন এমন এক বিপদের মুখোমুখি হয় যে বিপদের কথা এমনকি হ্যারি সেলডন নিজেও ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেননি। তিনি অনুমানও করতে পারেননি একজন মানুষের অতিমানবিক ক্ষমতা কত ভয়াবহ হতে পারে। তার নাম ছিল মিউল–একটা মিউট্যান্ট। মানুষের ইমোশন এবং মাইণ্ড কন্ট্রোল করার জন্মগত ক্ষমতা ছিল তার। কোনো সামরিক বাহিনীই তার সামনে টিকতে পারেনি এবং পারছিল না। তার ক্ষমতার কাছে প্রথম ফাউণ্ডেশন পরাজিত হয় এবং সেলডনস প্ল্যান আংশিক ধ্বংস হয়ে যায়।
আর সবার অগোচরে রয়েছে রহস্যময় “দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন”-যাদের মিউলের মতো ক্ষমতা রয়েছে। সবাই খুঁজছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন। গ্যালাক্সির দখল সম্পূর্ণ করতে হলে মিউলকে অবশ্যই দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন খুঁজে বের করতে হবে। প্রথম ফাউণ্ডেশনের রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক কারণ।
কিন্তু কোথায় দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন? কেউ জানে না।
এই কাহিনী হচ্ছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন অনুসন্ধানের কাহিনী।
*
প্রথম পর্ব: মিউলের অন্বেষণ
১.১ পুরোনো প্রাসাদ
মিউল… প্রথম ফাউণ্ডেশনের পতনের পর মিউল শাসন ব্যবস্থার গঠনতান্ত্রিক বিষয়সমূহ স্পষ্ট হতে থাকে। প্রথম গ্যালাকটিক এম্পায়ারের পরিপূর্ণ ভাঙনের পর ইতিহাসে মিউলই সর্বপ্রথম সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্যে গ্যালাক্সির বিশাল অংশ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ফাউণ্ডেশনের বাণিজ্যিক সম্রাটেরা ছিল বিভিন্ন মতে বিশ্বাসী এবং সাইকোহিস্টোরির অস্পর্শনীয় বন্ধন থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। তার সাথে মিউলের দক্ষ ও শক্ত নিয়ন্ত্রণে থাকা “পৃথিবীসমূহের ইউনিয়নের” কোনো তুলনাই হয় না যে ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল গ্যালাক্সির এক দশমাংশ অঞ্চল এবং এক পঞ্চদশমাংশ জনসংখ্যা। বিশেষ করে তথাকথিত অনুসন্ধানের সময়…