‘মজার ব্যাপার, কিন্তু এই বিষয়ে তোমার ধারণা কতটুকু? এই মাইণ্ড পাওয়ারের ধারণার কথা অন্য কারো কাছে বলেছ?”
‘গ্যালাক্সি, না! আপনি কী মনে করেন তারা শুধু নিজেদের গ্রহেই বসে থাকবে। না স্যার। আমি মনে করি আমরা যতটুকু জানি তার চেয়ে অনেক বেশি দুর্বল বলে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন নিজেদের লুকিয়ে রেখেছে।‘
‘সেই ক্ষেত্রে, ব্যাপারটি সহজ করে বলি। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনকে খুঁজে বের করার একটা অভিযানে নেতৃত্ব দিতে তোমার কেমন লাগবে।‘
মুহূর্তের জন্য মনে হল ধারণার চেয়েও দ্রুত ঘটনাগুলো ঘটে যাওয়ায় চ্যানিশ হতভম্ব হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ সময় সে চুপ করে রইল।
মিউল শুষ্কভাবে জিজ্ঞেস করল, ‘তো?’
কপালে ভাঁজ পড়ল চ্যানিশের। ‘নিশ্চয়ই। কিন্তু আমাকে কোথায় যেতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ আপনার কাছে আছে।‘
‘জেনারেল প্রিচার তোমার সাথে যাবে–’
‘অর্থাৎ আমি প্রধান ব্যক্তি নই?
কাজ শেষে নিজেকে বিচার করো। শোনো, তুমি ফাউণ্ডেশন থেকে আসনি। কালগানের স্থানীয় অধিবাসী, তাই না? তাহলে সেলডন প্ল্যান সম্পর্কে তোমার ধারণা খুবই সীমিত। যখন প্রথম গ্যালাকটিক এম্পায়ারের পতন ঘটছে, সেই সময় হ্যারি সেলডন এবং কয়েকজন সাইকোহিস্টোরিয়ান গণিতের সূত্রের মাধ্যমে ইতিহাসের ভবিষ্যৎ ধারা বিশ্লেষণ করে গ্যালাক্সির দুই শেষপ্রান্তে দুটো ফাউণ্ডেশন স্থাপন করেন। তিনি এমনভাবে পরিকল্পনা করেন যাতে দ্বিতীয় এম্পায়ারের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক গতিধারা ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। হ্যারি সেলডন পরিকল্পনা সম্পন্ন করতে এক হাজার বছর সময় নির্ধারণ করেছেন–এবং ফাউণ্ডেশন ছাড়া সময় নেবে ত্রিশ হাজার বছর। কিন্তু তিনি আমার বিষয় বিবেচনা করেননি। আমি একজন মিউট্যান্ট এবং সাইকোহিস্টোরির মাধ্যমে আমাকে প্রতিরোধ করা যাবে না। তুমি বুঝতে পারছ?’
‘পুরোপুরি স্যার। কিন্তু এর সাথে আমার সম্পর্ক কোথায়?’
‘এখনি বুঝে যাবে। আমি গ্যালাক্সিকে একত্র করতে চাই–এবং সেলডনের এক হাজার বছরের উদ্দেশ্য মাত্র তিনশ বছরে অর্জন করতে চাই। প্রথম ফাউণ্ডেশন–পদার্থবিজ্ঞানীদের কলোনি–আমার অধীনে থেকে আরও সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছে। ইউনিয়নের অগ্রযাত্রা এবং আদেশে তাদের তৈরি যে কোনো অস্ত্র আমার হাতে পৌঁছবে– দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন ছাড়া। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন সম্বন্ধে আমাকে আরও বেশি করে জানতে হবে। জেনারেল প্রিচার পুরোপুরি নিশ্চিত যে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু আমি জানি আছে।’
‘কীভাবে জানেন স্যার’, চ্যানিশ জিজ্ঞেস করল।
মিউল হঠাৎ রাগের সাথে বলল, আমি যাদের মাইণ্ড কন্ট্রোল করি, তাদের কন্ট্রোল্ড মাইণ্ডে ইন্টারফেয়ার করা হয়েছে। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে। কিন্তু আমাকে ফাঁকি দিতে পারেনি। এ ধরনের ইন্টারফেয়ারেন্স ক্রমেই বাড়ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ লোকদের আঘাত করছে।
‘এখানেই তোমার গুরুত্ব। জেনারেল প্রিচার আমার অনুগতদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা, তাই সেও নিরাপদ নয়। অবশ্যই সে কিছু বুঝতে পারেনি। কিন্তু তোমার কনভার্সন হয়নি, তাই আমার লোক বলে সহজে কেউ তোমাকে চিনতে পারবে না। আমার যে কোনো অনুগতের চেয়ে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনকে তুমি অনেক বেশি সময় বোকা বানাতে পারো। বুঝেছ?’।
হুমম-ম-ম। হ্যাঁ। কিন্তু আপনার লোকদের কীভাবে পরিবর্তন করা হচ্ছে, যাতে জেনারেল প্রিচারের কোনো পরিবর্তন হলে আমি ধরতে পারি। তারা কী আপনার উপর আনুগত্য হারিয়ে ফেলে?
‘না আমি তোমাকে বলেছি ব্যাপারটি ঘটে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে। এর চেয়েও বেশি। বিপজ্জনক কারণ পরিবর্তন ধরা খুব কঠিন এবং কখনো কখনো আমাকে গুরুত্বপূর্ণ লোকদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হয় যে তারা কোনো অস্বাভাবিক আচরণ করছে। কিনা। তাদের আনুগত্য আগের মতোই থাকে, কিন্তু উদ্যোগ এবং অকৃত্রিম আচরণ তাদের মধ্যে থেকে মুছে ফেলা হয়। তারা সবাই পুরোপুরি স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু কোনো কাজে আসে না। গতবছর সেরা ছয়জনের এই অবস্থা হয়েছিল। মিউলের মুখের এককোনা বেঁকে গেল।
‘ধরুন, স্যার…ধরুন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন এই কাজগুলো করছে না, তাহলে কী অন্য কেউ যেমন আপনার নিজের মতো, আরেকজন মিউট্যান্ট।‘
‘ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে সতর্ক ও দীর্ঘ পরিকল্পনার মাধ্যমে। একজন মাত্র লোক হলে অনেক বেশি তাড়াহুড়ো করত তাই না, এরা পুরো একটি পৃথিবী এবং তুমিই হবে তাদের বিরুদ্ধে আমার অস্ত্র।’
চ্যানিশের চোখে আলো ফুটে উঠল, ‘এই সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।‘
তার এই পরিবর্তন লক্ষ্য করল মিউল। সে বলল, ‘হ্যাঁ অবশ্যই এই সুযোগ তোমার প্রাপ্য, যেন তুমি বিশেষ কিছু করতে পার, যার জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার। এমনকী আমার উত্তরসূরিও নির্বাচন করতে পারি তোমাকে। কিন্তু বিশেষ শাস্তিরও ব্যবস্থা রয়েছে। আমার ক্ষমতা শুধুমাত্র মানুষকে আমার প্রতি অনুগত করেই রাখে না।‘
ভয়ে চ্যানিশ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
মুহূর্তের জন্য, আলোর এক ঝলকের মতো চ্যানিশ অনুভব করল তীব্র ব্যথার একটি প্রবাহ তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরছে। প্রচণ্ড শারীরিক ব্যথা তাকে বিধ্বস্ত করে দিল, তারপর ব্যথাটা চলে গেল। এখন তার মাইণ্ড কোনো ব্যথা অনুভব করছে না, শুধু প্রচণ্ড রাগের প্রবাহ অনুভব করছে।