মিউল পাঁচ বছর আগে তার মেন্টাল পাওয়ারের মাধ্যমে হ্যান প্রিচারকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। তার মনে আনুগত্য ও শ্রদ্ধার আবরণ তৈরি করে দেয়। ফলে প্রিচারের নিজস্ব ব্যক্তিসত্তা, আদর্শ মিউলের প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধার নিচে চাপা পড়ে গেছে।
পিছনে দরজা খোলার শব্দে সে ঘুরে দাঁড়াল, দেওয়ালের স্বচ্ছতা মুছে গিয়ে অস্বচ্ছ ভাব দেখা দিল। সন্ধ্যার ধূসর আলোর বদলে জ্বলে উঠল সাদাটে এটমিক আলো।
কক্ষে ঢুকে সোজা তার নির্ধারিত আসনে বসল প্রিচার। মিউলকে কোনো প্রকার কুর্নিশ, স্যালুট বা সম্মানসূচক সম্বোধন করার প্রয়োজন নেই। সে শুধুই ফার্স্ট সিটিজেন’। শুধু স্যার’ বলে সম্বোধন করলেই চলে। তার সামনে যে কেউ বসতে পারবে, এমনকি পিছন ফিরতেও পারবে।
হ্যান প্রিচারের কাছে এগুলো একজন নিশ্চিত, আত্মবিশ্বাসী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তির আচরণ বলে মনে হয়।
মিউল বলল, ‘তোমার চূড়ান্ত রিপোর্ট গতকাল আমার কাছে পৌঁছেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই সব বিষয় আমি পরিষ্কার বুঝতে পারিনি।”
জেনারেলের ভুরু কুঁচকে গেল, হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি–কিন্তু এছাড়া আর কিছু বলার নেই। আসলে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কোনো অস্তিত্বই নেই, স্যার।
গভীরভাবে কিছুক্ষণ চিন্তা করে মাথা ঝকাল মিউল, ‘এবলিং মিস’-এর দেওয়া কিছু তথ্য প্রমাণ রয়েছে। এই তথ্য প্রমাণগুলোকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
‘নতুন কোনো গল্প নয়।’ প্রিচার আগের সুরেই বলে গেল ‘মিস ফাউণ্ডেশনের সেরা সাইকোলজিস্ট হতে পারে, কিন্তু হ্যারি সেলডনের তুলনায় সে দুগ্ধপোষ্য শিশু। যখন সে সেলডনের বিষয়ে গবেষণা করছিল সেই সময়ে মিস আপনার কৃত্রিম ব্রেইন কন্ট্রোলের অধীনে ছিল। আপনি হয়তো বেশি চাপ প্রয়োগ করেছেন, যার ফলে সে ভুল করেছে। স্যার, আমার মতে তার অবশ্যই ভুল হয়েছে।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিউল, পাতলা ঘাড় থেকে তার বিষণ্ণ মুখ আচমকা সামনে এগিয়ে এল। যদি সে আর একটা মিনিট বেঁচে থাকত। মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তেই আমাকে বলতে চেয়েছিল কোথায় রয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন। আমি বলছি, সে জানত। আমার পিছানোর প্রয়োজন নেই, অপেক্ষা করারও প্রয়োজন নেই। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। বিনা লাভে পাঁচ বছর চলে গেছে।
প্রিচার তার শাসনকর্তার এই ব্যাকুল আচরণের জন্য কিছু বলতে পারল না; তার নিয়ন্ত্রিত মেন্টাল গঠন তাতে বাধা প্রদান করল। তবে সে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল, অস্বস্তিও বোধ করতে লাগল। কিন্তু এ ছাড়া আর কী বিকল্প ব্যাখ্যা রয়েছে স্যার, সে বলল, ‘পাঁচ পাঁচবার আপনার চিহ্নিত পথে আমি অনুসন্ধান চালিয়েছি। এবং আমি এমনকি প্রতিটি গ্রহাণু পর্যন্ত তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। ধরা যাক তিনশ বছর পূর্বে হ্যারি সেলডন পুরোনো ধ্বংসপ্রায় সাম্রাজ্যের বদলে নতুন সাম্রাজ্য গঠনের ভিত্তি হিসাবে দুটি ফাউণ্ডেশন স্থাপন করেন। সেলডনের মৃত্যুর এক শ বছরের মধ্যে প্রথম ফাউণ্ডেশন’ যাদের আমরা ভালো মতোই চিনি–তার নিজস্ব চৌহদ্দির মধ্যে পরিচিতি লাভ করে। সেলডনের মৃত্যুর দেড়শ বছরের মধ্যে এম্পায়ারের সাথে শেষ লড়াইয়ের সময় এটি পুরো গ্যালাক্সিতে পরিচিতি লাভ করে। আর এখন তিন শ বছর পর কোথায় রয়েছে সেই রহস্যময় দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন? গ্যালাক্সির কোথাও এর নাম শোনা যায়নি।
‘এবলিং মিস বলেছিল তারা নিজেদের অস্তিত্ব গোপন রেখেছে। গোপনীয়তাই তাদের মূল শক্তি।‘
‘এতই গভীর গোপনীয়তা, যার ফলে মনে হয় যে কোনো অস্তিত্বই নেই।‘
মিউল তার তীক্ষ্ণ চোখ তুলে তাকাল। ‘না তাদের অস্তিত্ব আছে।‘ হাড্ডিসার আঙুল তুলে বলল, ‘কৌশলগত কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে।‘
প্রিচার কুটি করল। ‘আপনি কী নিজে যেতে চান? আমার মতে সেটা ভাল হবে না।‘
‘না, অবশ্যই না। তোমাকে আরেকবার যেতে হবে–শেষবারের মতো। কিন্তু অন্য একজনের সাথে যৌথভাবে।‘
কিছুক্ষণের নীরবতা, প্রিচার শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘কে, স্যার?’
‘কালগানেরই এক তরুণ। বেইল চ্যানিশ।‘
‘কখনো নাম শুনিনি।‘
‘না, আমার মনে হয় না। তবে সে সপ্রতিভ, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং তাকে আমার ক্ষমতা দিয়ে কনভার্ট করা হয়নি।’
প্রিচারের দীর্ঘ চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, ‘আমি এখনও বুঝতে পারছি না এতে কী লাভ হবে।’
‘একটা লাভ হবে, প্রিচার। তুমি দক্ষ এবং অভিজ্ঞ লোক। তুমি আমাকে যথেষ্ট সার্ভিস দিয়েছ। কিন্তু তোমার অনুপ্রেরণা আরোপিত এবং আমার প্রতি রয়েছে অসহায় আনুগত্য। যখন তোমার নিজস্ব অনুপ্রেরণাকে নষ্ট করে দেওয়া হয়, তোমার ভিতর থেকে সুক্ষ্ম কিছু অনুভূতি হারিয়ে যায়, যা আমি প্রতিস্থাপন করতে পারি না।’
‘আমার সেরকম মনে হয় না, স্যার।’ প্রিচার হাসি মুখে বলল। যখন আমি আপনার বিরোধী ছিলাম তখনকার কথা আমার ভালই মনে আছে। কোনোটাকেই কম জোড়ালো মনে হয় না।’
‘হবেও না।’ মিউলের মুখে হাসি ফুটল। এই ব্যাপারে তোমার বিশ্লেষণ কিছুটা বাস্তববাদী। চ্যানিশ উচ্চাকাঙ্খী। পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য। শুধুমাত্র নিজের কাছেই অনুগত। সে ভালমতোই জানে যে আমার সাথে থাকলেই সে উপরে উঠতে পারবে এবং আমার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সবকিছু করবে, যাতে সে অনেক উপরে উঠতে পারে। যদি সে তোমার সাথে যায়, তার একটাই কারণ–নিজের উন্নতি।